• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
করোনা ভারতের মধ্যবিত্তকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে

সংগৃহীত ছবি

এশিয়া

করোনা ভারতের মধ্যবিত্তকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০২১

কোভিড-১৯ মহামারী দারুণ বিপাকে ফেলেছে ভারতের মধ্যবিত্তশ্রেণিকে। মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর মধ্যবিত্তশ্রেণির একটি বড় অংশই দারিদ্র্যের কবলে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পিউ রিসার্চ সেন্টারের বরাত দিয়ে গত শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারীর প্রথম ধাক্কায় গত বছর পাঁচ কোটি ৪০ লাখ মানুষ মধ্যবিত্তশ্রেণি থেকে নিচে নেমে গেছে, যার অর্ধেকই ভারতীয় এবং এই সংখ্যা প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ।

দারিদ্র্যবিমোচনে গত কয়েক দশক ধরে একটি দেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছিল মহামারীর কারণে তা যেন হারাতে বসেছে। ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্তশ্রেণিকেই এর দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা সামলাতে হবে। ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্টের অধ্যাপক ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘সম্ভাব্য যে-কোনো পথেই এটা খুবই খারাপ খবর। আমাদের প্রবৃদ্ধির গতিপথকে পেছনে টেনে ধরেছে এটা এবং আরো বেশি বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।’ ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ সামান্যই বিকল্প রেখেছে। অনেক রাজ্যেই লকডাউন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কাজের অভাবে অভিবাসী শ্রমিকরা গত বছরের মতোই বাসে-ট্রেনে চেপে নিজ নিজ এলাকায় ফিরছেন। সে দেশে টিকাদান কার্যক্রমও ধীরে চলছে, যদিও সরকার গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদি এখন পর্যন্ত গত বছরের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না কঠোর লকডাউন ঘোষণায়, যা ১০ কোটির বেশি ভারতীয়কে কর্মহীন করে দিয়েছিল। অনেক অর্থনীতিবিদই বলেছেন, গত বছরের লকডাউন মহামারীর পরিস্থিতিকে আরো বাজে আবস্থায় নিয়ে গেছে।  নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, নরেন্দ্র মোদি সরকার যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য অনেক দেশের মতো সরকারি ব্যয় বাড়াতেও খুব আগ্রহী নয়। অথচ বাজেটে অবকাঠামো ও অন্যান্য খাতে ব্যয় বাড়ানো হলে তা ঋণ কমাতেও ভূমিকা রাখবে। মহামারী পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজেদের ভূমিকার পক্ষে সাফাই গেয়ে নয়াদিল্লি বলছে, টিকাদান কার্যক্রমের অগ্রগতি হচ্ছে এবং এর ফলে অর্থনীতিতেও গতি ফিরে আসছে। অর্থনীতিবিদরাও অবশ্য আসন্ন বছরে ভারতের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পূর্বাভাস দিয়েছেন, যদিও সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় টিকাদানের হার কমেছে। এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার নয় শতাংশের কম মানুষ টিকা পেয়েছে, যা অর্থনীতির পূর্বাভাসকে ম্লান করে দিতে পারে। পিউ রিসার্ট সেন্টারের সংজ্ঞায় যে বাড়িতে দিনে ১০ থেকে ৫০ ডলারের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ থাকে তারা মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত হিসেবে বিবেচিত। এই পরিমাণ আয় একটি ভারতীয় পরিবারকে ভালো এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস, একটি গাড়ি বা স্কুটার ব্যবহার করা এবং সন্তানদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়ানোর সক্ষমতা দেয়। বর্তমানে প্রায় ছয় কোটি ৬০ লাখ ভারতীয় এই সংজ্ঞায় পড়েন, গত বছর মহামারী শুরুর আগে এই সংখ্যা ছিল নয় কোটি ৯০ লাখ, জানায় পিউ রিসার্চ সেন্টার। এই ক্রমবর্ধমান সচ্ছল ভারতীয় পরিবারগুলোর আকর্ষণেই ওয়ালমার্ট, অ্যামাজন, ফেসবুক, নিসান ও অন্যান্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ভারতে বিনিয়োগ করেছে। ভারতের মধ্যবিত্তশ্রেণি অর্থনীতির চেয়েও বেশি কিছু। এরাই আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভারতের মূল চালিকা শক্তি। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বর্তমান সরকারের সম্ভবত চলমান মহামারীতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। বাসাবাড়ির আয় এবং সার্বিক ভোগের পরিমাণ দুর্বল হয়ে পড়েছে, যদিও চাহিদা বাড়ায় সম্প্রতি কিছু পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। তবে মহামারীর কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ছোট ব্যবসায়ীদের অংশই বেশি। বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং অব দ্য ইন্ডিয়ান ইকোনমির নির্বাহী পরিচালক মহেশ ব্যাস বলেন, ‘ভারতের সরকার দারিদ্র্য বা বৈষম্য বা কর্মসংস্থানের অভাব অথবা ভোগ ও আয় কমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত করছে না। সবচেয়ে আগে এই মনোভাবের পরিবর্তন দরকার।’ তিনি বলেন, ‘এই সমস্যার বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া না হলে ভারতের টেকসই প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করার একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে এটা।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads