• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যাংক লুটেরাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে

রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডির বাজেট সংলাপে বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

ছবি : মিজানুর রহমান খান

ব্যাংক

ব্যাংক লুটেরাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে

সিপিডির সংলাপে পরিকল্পনামন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ জুন ২০১৮

দেশের ব্যাংক খাতে অনিয়মের কথা অকপটে স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ব্যাংক লুটপাটের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পাওনা আদায় করা হবে। ফারমার্স ব্যাংকে যারা অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি

২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সংলাপে আরো বক্তব্য দেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির, সিপিডির সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, ব্যাংক খাতে আমরা অনেক সংস্কার করেছি। আরো সংস্কার করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। বাজেটে ব্যাংকের করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাবের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ, রফতানি আয় বৃদ্ধির কথা সবাই বলে থাকেন। কিন্তু বাংলাদেশে করপোরেট করহার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এ কারণে এ দেশে বিনিয়োগ করতে চান না উদ্যোক্তারা। বিনিয়োগ যাতে বাড়ে সে জন্য করহার কমানো হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য এনবিআরে সংস্কার করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে যারা কর দিয়ে থাকে তাদের ওপরই করের বোঝা চাপানো হয়, এটা অন্যায়। তার মতে, আওতা বাড়িয়ে করের হার কমিয়ে আনতে হবে।

গত ৯ বছরে আওয়ামী লীগের আমলে দেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা এ সময়ে অর্থনৈতিকভাবে ৫৮তম থেকে ৪২তম দেশে উন্নীত হয়েছি। আগামী ২০৪১ সাল পর্যন্ত যদি ফি বছরে অন্তত একটি করে দেশকে অতিক্রম করতে পারি তাহলে আমরা ২০তম দেশে উন্নীত হব। এটা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশকে বর্তমানে বিদেশি উৎস থেকে অর্থ ধার করতে হচ্ছে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগামী ২০৩০ সালের পর থেকে আমাদের আর বাইরে থেকে অর্থ ধার করতে হবে না। চীন আমাদের ঋণ দিচ্ছে, অথচ ওদের ঋণের পরিমাণ জিডিপির তুলনায় ১৮৫ শতাংশ। একশ শতাংশের নিচে কোনো দেশে নেই। ‘আমার লেখাপড়া যদি সত্য হয়, তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ আমরা আশপাশের দেশকে ঋণ দেব।’

সংলাপে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ মুহূর্তে পাবলিক-প্রাইভেট মিলিয়ে দেড় শর মতো ব্যাংক আছে। টাকা নেই বলে কোনো ব্যাংকেই কোনো চেক রিটার্ন হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপি আমলের বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ৫ শতাংশ মানুষের সম্পদ এমন পরিমাণে বেড়েছে, যা অবিশ্বাস্য। তাদের টাকা রাখার জায়গা নেই। শেয়ারবাজার, ব্যাংক, বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পে লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এনবিআরকে এসব ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়ে খসরু বলেন, সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে এদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলে এনবিআরের ট্যাক্স আদায় বহুগুণ বেড়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, যারা ব্যাংক লুট করছে, আপনারা তাদের ট্যাক্স কমিয়ে দিচ্ছেন। আবার যারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ব্যাংকিং ডিভিশনকে বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দয়া করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়িত্ব পালন করতে দিন।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজার বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারত উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজার এখনো সেই সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।

এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, আমাদের দেশে ব্যবসায় ব্যয় অনেক বেশি। এ কারণে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, চড়া সুদে ঋণ নেওয়ায় সরকারের ওপর বোঝা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটা ডায়াবেটিস রোগীর মতো হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ আহরণে আর্থিক খাতে সংস্কারের আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads