• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
৬ শতাংশ সুদে সরকারি আমানত পাবে বেসরকারি ব্যাংক

বেসরকারি ব্যাংক এখন থেকে সরকারি আমানত পাবে ৬ শতাংশ হার সুদে

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

এক অঙ্কে ঋণের সুদ

৬ শতাংশ সুদে সরকারি আমানত পাবে বেসরকারি ব্যাংক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ জুলাই ২০১৮

বেসরকারি সব ব্যাংক এখন থেকে সরকারি আমানত পাবে ৬ শতাংশ হার সুদে। সরকারি ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংকে আমানত রাখতে এর বেশি সুদ দাবি করবে না। বিনিয়োগের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল সোমবার তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বড় আকারের এই বৈঠকটি ব্যাংকার্স মিটিং হিসেবে পরিচিত। গভর্নর ফজলে কবির এতে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে তফসিলি সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররাসহ ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, এক অঙ্কে ঋণের সুদহার কার্যকর করতে কারো কোনো দ্বিমত নেই। এ ব্যাপারে সবাই একমত। কিছু ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সভায় এরই মধ্যে সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। আর যেসব ব্যাংক এখনো চূড়ান্ত করেনি তারাও চলতি সপ্তাহেই পরিচালনা পর্ষদের সভায় এটি চূড়ান্ত করবে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতিতে শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরি, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান বাড়াতে এবং আমদানি-রফতানি বাণিজ্যকে আরো গতিশীল করতে মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২০ জুলাই ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-বিএবি, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।

অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়েদ উল্লা আল মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে ৬ শতাংশ হারে আমানত পাবে। এ ব্যাপারে আজকের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, ঋণের সুদে হারের নৈরাজ্য সামাল দিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো স্বল্প সুদে সরকারি আমানতের নিশ্চয়তা চাচ্ছিল। গত ২৫ জুন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা চান। এরপর গভর্নর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেন। এরপরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা ৬ শতাংশ সুদে বেসরকারি ব্যাংকে আমানত রাখতে সায় দিলেন।

এদিকে বৈঠক শেষে এবিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চায় ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নেমে আসুক। এটি কীভাবে কার্যকর করব সেই সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে বলেছে। তবে এটি কার্যকর করতে গিয়ে যাতে কোনো নৈরাজ্য বা অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ভালোভাবে দায়িত্ব নিয়ে কার্যকর করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এজন্য যদি ঋণ আমানতের নির্ধারিত হারে কিছুটা ছাড় দিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংক দেবে। এজন্য যাতে কোনো ব্যাংককে শাস্তি বা জরিমানা না করা হয় সেটি অনুরোধ করেছেন ব্যাংকের এমডিরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, আমানতের সুদহার পুনর্নির্ধারণ করাতে কিছুটা আমানত চলে যেতে পারে। সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক সহনীয়ভাবে দেখবে। তবে সব ছাড় কেবল এক অঙ্কে ঋণের সুদহার কার্যকর করার ওপরে। তবে রাতারাতি কার্যকর হবে না। সময় লাগবে। তবে আমরা সবাই কার্যকর করা শুরু করে দিয়েছি। তবে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো বিদ্যমান আমানতের সুদহার পুনর্নির্ধারণ করবে না।

সঞ্চয়পত্রের সুদহারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর একটি বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। তবে আমরা অনুরোধ করেছি এর সুদহার পর্যালোচনা করতে। আমরা শুনেছি, সরকারের সর্বোচ্চ মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটি নিয়ে কাজ চলছে। আজ না হোক আগামী বছর এটি পর্যালোচনা হবে।

বড় ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকতে বলেছে ব্যাংকগুলোকে। ঋণ বিতরণে যাতে কোনো ব্যত্যয় না হয়। টেকসই ব্যাংক খাতের জন্য এটি জরুরি।

বৈঠকে প্রবাসী আয় বাড়ানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নজর দিতে বলেছে। এছাড়া কীভাবে বৈদেশিক বাণিজ্য আরো জোরালো করা যায় সে ব্যাপারেও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। সঙ্কট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদহার। আমানতকারীকে কোনো কোনো ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদহার ১৭/১৮ শতাংশ দাঁড়ায়।

পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের নীতি সহায়তা চান বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কাটাতে নতুন নিয়মে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক। কমানো হয়েছে নগদ জমার হার (সিআরআর)। সব তফসিলি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এবং ৬ শতাংশ দৈনিক হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করার বিধান ছিল। সেটি পুনর্নির্ধারণ করা হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ। আগ্রাসী ব্যাংকিং করে তারল্য সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত হার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads