• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যাংকিং খাতে চাপ বাড়াচ্ছে দুর্বল বন্ড মার্কেট

ছবি : ইন্টারনেট

ব্যাংক

বিআইবিএমের বন্ড মার্কেট বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক

ব্যাংকিং খাতে চাপ বাড়াচ্ছে দুর্বল বন্ড মার্কেট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ জুলাই ২০১৮

চীন,অস্ট্রেলিয়া, হংকংসহ বিশ্বের অনেক দেশ বন্ড মার্কেটের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করছে। কিন্তু বাংলাদেশের বন্ড মার্কেট শক্তিশালী না হওয়ায় ব্যাংকগুলো আমানত ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারছে না। বন্ড ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে করপোরেট সেক্টর বন্ড মার্কেটের পরিবর্তে পুরোপুরি ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। দুর্বল বন্ড মার্কেট ব্যাংকিং খাতের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।

গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ডেভেলপমেন্ট অব বন্ড মার্কেট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্মস অ্যাডভাইজার এবং সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। তিনি গোলটেবিল বৈঠকের বিষয়টির ওপর সূচনা বক্তব্য দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিফর্মস অ্যাডভাইজার এবং সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এটা এখন অত্যন্ত জরুরি। কারণ বন্ড মার্কেটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারী এবং কর্তৃপক্ষ উভয়ই লাভবান হয়।

এস কে সুর আরো বলেন, বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটির প্রসার করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও এনবিআরসহ নীতি-নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এটিকে শক্তিশালী করতে হলে বর্তমান রেপো আইন পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থানের বিকল্প উৎস হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শক্তিশালী বন্ড মার্কেট রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বন্ড মার্কেট সরকারি ও বেসরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থসংস্থানের অন্যতম উৎস। একটি কার্যকর ও উন্নত বন্ড মার্কেটের মাধ্যমে বড় আকারের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নিশ্চিত করা যায়। অথচ বাংলাদেশ এখনো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোয় সরকারি সিকিউরিটিজ, ট্রেজারি বিল, করপোরেট বন্ড ও মিউনিসিপ্যাল বন্ডের লেনদেন চালু রয়েছে। এক যুগেরও বেশি সময় আগে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে বিভিন্ন ধরনের বন্ডের লেনদেন চালুর উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো ডিএসইতে সরকারি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ বন্ড তালিকাভুক্ত হয় ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর। বর্তমানে ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি ২২১টি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে, যার বাজার মূলধন প্রায় ৫৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। তালিকাভুক্তির দিনে ২০০৫ সালের ৫ জানুয়ারি একটি বন্ডের লেনদেন হয়। এর পর থেকে গত ১৩ বছরে পুঁজিবাজারে ট্রেজারি বন্ডের কোনো লেনদেন হয়নি। দীর্ঘদিন লেনদেন না হওয়ার ফলে বিএসইসির নির্দেশে বর্তমানে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন বন্ধ রয়েছে।  

গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণা দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মোস্তফা, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমীন, বিআইবিএমের প্রভাষক রিফাত জামান সৌরভ, বিআইবিএমের  প্রভাষক সাদনিমা আমির এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনে ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি বলেন, বাংলাদেশে বন্ড মার্কেটে নতুন অনেক সিকিউরিটিজ আনতে হবে। এতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাবে। এ জন্য জিরো কুপন বন্ড, ফিক্সড কুপন বন্ড, সুকুক বন্ডের মতো পণ্য আনা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ভিশন ২০৪১ অর্জন করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রয়োজন। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের বন্ড মার্কেটের বিস্তৃতি অনেক কম। এ অবস্থার পরিবর্তনে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বন্ড মার্কেটের প্রসার করতে হলে অবশ্যই নীতি-নির্ধারণী সংস্থাগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে শুধু ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করলে চলবে না। বন্ড মার্কেটে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শুধু ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এ জন্য ব্যাংকের পাশাপাশি বন্ড মার্কেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই মার্কেটের উন্নয়ন করতে হলে সরকার ও নীতি-নির্ধারণী কর্মকর্তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ মার্কেটের বিস্তৃতির লক্ষ্যে এর ওপর নির্ধারিত করহার কমানোর পরামর্শ দেন তিনি।

সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বন্ড মার্কেট, ব্যাংক ব্যবস্থ্যা এবং শেয়ারবাজারের মধ্যে সমন্বয় করলে তারল্য সঙ্কট থাকবে না।

মূলত করসংক্রান্ত জটিলতার কারণে বন্ড মার্কেট কার্যকর হচ্ছে না বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে। এর বাইরে আরো বেশকিছু কারণ রয়েছে, যার সমাধান না হলে কার্যকর বন্ড মার্কেট গড়ে তোলা সম্ভব নয় বলে মনে করছে ডিএসই। এর মধ্যে অথরাইজড ডিলার বা এডি কর্তৃক বন্ড লেনদেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রেজারি বন্ডের নিলামে শুধু প্রাইমারি ডিলারদের অংশগ্রহণ ও বন্ডের অভিহিত মূল্য ১ লাখ থেকে ১০ হাজার টাকায় নামিয়ে না আনায় কার্যকর বন্ড মার্কেট গড়ে উঠছে না। এ ছাড়া বন্ডের ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার বা আইএসআইএন সিডিবিএল কর্তৃক সংরক্ষণ করতে হবে। বন্ডের লেনদেন নিষ্পত্তিতে অন্যান্য সিকিউরিটিজের মতো একই হারে কমিশন ধার্য না করাও উন্নত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছে ডিএসই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads