• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
চার হাজার কোটি টাকা পাচারের অনুসন্ধান চলছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান

সংরক্ষিত ছবি

ব্যাংক

চার হাজার কোটি টাকা পাচারের অনুসন্ধান চলছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৮

ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। তিনি বলেছেন, টাকা পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধানে একটি তথ্য পাওয়া গেছে। এর অঙ্ক চার হাজার কোটি। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাঠিয়েছি। এ নিয়ে কাজ চলছে।

গতকাল মঙ্গলবার জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় তিনি এ তথ্য জানান। এ নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাতে চাননি তিনি। এক সাংবাদিক জানতে চান, আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। আমদানি করতে ঋণপত্র খোলা হচ্ছে তবে পণ্য আসছে না, বিনিয়োগ হচ্ছে না। অন্যদিকে রফতানি আয়ের অর্থ দেশে আসছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় সাংবাদিকরা মুদ্রানীতির বাইরে সুদহারসহ নানা বিষয়ে জানতে চান। ফজলে কবিরসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ সময় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

এ সময় ব্যাংকঋণের সুদহার বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি করছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, মালিকরা নিজেদের ইচ্ছায় এই সুদহার নির্ধারণ করেছেন। এটি ব্যবসায়ী মহলের প্রত্যাশা ছিল। তবে এটি এরই মধ্যে কার্যকর করেছে অনেক ব্যাংক। বাকিরা কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে এ ব্যাপারে সময়ে সময়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ফজলে কবির বলেছেন, ব্যাংকগুলো কীহারে আমানত সংগ্রহ এবং কী হারে ঋণ দিচ্ছে, তা কঠোরভাবে নজরদারি হচ্ছে। এই উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাতে ঋণপ্রবাহের পর্যাপ্ততার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক নজর রেখেছে। কৃষির মতো অগ্রাধিকার খাতে ঋণপ্রবাহের বাধ্যতামূলক মাত্রাও আরোপ করা হয়েছে। তবে কৃষিঋণের সুদহার আগে থেকেই এক অঙ্কে কম থাকায় এটি আর কমানোর প্রয়োজন আপাতত দেখছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসহ নানাভাবে সহায়তা পেয়েছে। এসব বিবেচনায় আগামী ছয় মাসে ব্যাংকঋণের গড় সুদহার এক অঙ্কের মাত্রায় বজায় রাখা কষ্টকর হওয়ার কথা নয়। তবে অনুকূল পরিস্থিতি টেকসই করার জন্য আব্যশিক সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন না করা গেলে আর্থিক বাজারে আমানত ও ঋণের সুদহারে চাহিদা ও জোগান ঠিক রাখা কঠিন হবে, যা সরকারের মধ্যম আয় ও উন্নত অর্থনীতির দেশের গড়ার প্রত্যাশাকে বাধাগ্রস্ত করবে।

তিনি বলেন, সংস্কারকাজ হলো খেলাপি ঋণের ব্যয়ভার কমানো। তবে ডিসেম্বর নাগাদ খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি কী হবে, সেই প্রশ্নে গভর্নর বলেন, প্রথামতে, ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ কমে যায়। তবে সেটি বছরের মাঝে এসে আবার বেড়ে যায়। আশা করি, চলতি বছর শেষে খেলাপি ঋণের ধারা নিম্নমুখী হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রিফর্ম উপদেষ্টা এসকে সুর চৌধুরী বলেন, আমরা ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবির সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছি, ঋণপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে। তবে ঋণের মানের সঙ্গে কোনো আপোস করা যাবে না।

সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের কারণে মধ্যবিত্তের আমানত ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্রে যাচ্ছে প্রশ্নে তিনি বলেন, শিগগিরই এর হার সমন্বয় করা হবে। এটি অসম প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে। সঞ্চয়পত্রের সুদহার পুনর্নির্ধারণ বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে সরকারের।

এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা আল্লামালিক কাজমি বলেন, সুদের হার এক অঙ্কে ধরে রাখতে হলে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বন্ড মার্কেটের উন্নতির কথা বলে আসছি। এটি কার্যকর করতে হবে, ব্যাংকগুলোর গড়ভারিত সুদ হারের পার্থক্য-স্প্রেড সঙ্কোচন করতে হবে এবং সর্বোপরি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টের সোনায় হেরফের নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফজলে কবির বলেন, ভল্টে সোনা শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা যেভাবে রেখেছিলেন সেভাবেই আছে। তাতে কোনো ধরনের হেরফের হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট খুবই সুরক্ষিত। ছয় স্তরের নিরাপত্তাবিশিষ্ট ভল্টে ৪২টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। রয়েছে সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারা।

নির্বাচনী বছরে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায় সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে কীভাবে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এটি সবাই বলে থাকেন। আমরা মুদ্রানীতিতে এদিকে নজরদারির বিষয় বলেছি। ব্যাংকগুলোকেও নজরদারি করতে হবে। টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ঋণ আমানত হার সমন্বয়ে সময় ছাড়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এটি সমন্বয় করতে গত জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি এটি অসম্ভব। তাই এর সময় মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কয়েকবার সমন্বয় করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads