• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
উন্নয়ন কাজে সরকারের অর্থের জোগান বাড়বে

মুদ্রানীতি ঘোষণা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির

ছবি: বাংলাদেশের খবর

ব্যাংক

উন্নয়ন কাজে সরকারের অর্থের জোগান বাড়বে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৮

আগের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রথমার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের জন্য ঘোষিত এই মুদ্রানীতিতে কার্যত বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। গত অর্থবছরের (২০১৭-১৮) দ্বিতীয়ার্ধের ন্যায় নির্ধারণ করা হয়েছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ। তবে নির্বাচনী বছরে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য সরকারের অর্থের জোগান বাড়ানো হবে।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বলেন, আগের ধারাবাহিকতায় প্রবৃদ্ধিবান্ধব এবং সংযত মুদ্রানীতি ঠিক করা হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা হবে। আর সরকারের উচ্চতর প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যাংকিং খাত থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণের জোগান বাড়িয়ে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৬ মাসের জন্য। যেটি সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে ছিল ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

তবে অভ্যন্তরীণ ঋণের জোগান বাড়ানোর কথা বললেও সেটি হবে সরকারি ঋণ বাড়িয়ে। অর্থাৎ সরকার আগামী ৬ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে পারবেন বেশি। মূলত নির্বাচনী বছরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়াবে সরকার। আর তাতে ঋণের জোগান বাড়াবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

বিদায়ী মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। সেটি বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৮ শতাংশই পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ ও অর্থনীতিকে আরো বেশি গতিশীল করতে বেসরকারি খাতে ঋণের সুদ হার কমিয়ে এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও ঋণের জোগান বাড়বে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিগত বছরে এক অঙ্কে নেমে আসা ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ১২ শতাংশে প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে এই প্রবৃদ্ধির অর্জন নির্ভর করবে প্রধানত বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি সহনীয় মাত্রায় বজায় রাখার ওপর।

ফজলে কবির বলেন, অভ্যন্তরীণ ঋণের ব্যবহার বিলাসী অপ্রয়োজনীয় আমদানি পণ্যের জন্য না হয়ে প্রকৃত উৎপাদনশীল, কর্মসংস্থান তৈরি অগ্রাধিকার খাতে ব্যবহার করার বিষয়টি নজরদারি করা হবে। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নজরদারির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারি নিবিড় করা হবে। 

গভর্নর বলেন, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যের ঘাটতি কমিয়ে আনতে রফতানি ও প্রবাসী আয় বৈধ চ্যানেলে দেশে আসতে কার্যক্রম জোরদার করা হবে। এর সঙ্গে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণ কার্যক্রমে সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তবে এজন্য মূলধন বাজারে ইকুইটি এবং বন্ড মার্কেট বিকাশ করার বিষয়টি আবারো কর্তৃপক্ষের নজরে আনছি।

দেশে অবকাঠামো ও অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশি ও বিদেশি ইকুয়িটি বিনিয়োগ পর্যাপ্ত মাত্রায় আকর্ষণও বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে সহনীয় অবস্থায় আনা জরুরি হবে বলে জানান ফজলে কবির।

নিট বৈদেশিক সম্পদ কমতে থাকায় বিদায়ী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রার স্থানীয় বাজারে তারল্যের জোগান কমতে থাকে জানিয়ে গভর্নর বলেন, অপরদিকে উচ্চ সুদহারের কারণে সরকারি সঞ্চয়পত্রে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হওয়ায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় আমানতের প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়ে। এটি সার্বিকভাবে পুরো ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সঙ্কট হয়নি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার টানাটানি থাকলেও সরকারি ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত তারল্য ছিল।

তিনি জানান, অবস্থা নিরসনে এপ্রিল মাসে ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার সিআরআর এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিল আহরণের রেপোরে সুদহার  দশমিক ৭৫ শতাংশ কমিয়ে ৬ শতাংশে আনা হয়েছে। তাছাড়া সরকারি সংস্থাগুলোর তহবিল বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় রাখার সুযোগ বাড়ার কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো সম্ভব হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, ব্যাংকগুলোয় সরকারি সংস্থার আমানতের ওপর সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এখন আন্তঃব্যাংক বাজারে সুদহার আগের মতোই নেমে এসেছে।

সর্বশেষ মুদ্রানীতির হালচিত্র তুলে ধরে গভর্নর বলেন, বিগত অর্থবছরের মুদ্রানীতির দুটি মূল লক্ষ্যের একটি মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ৭ দশমিক ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমর্থন দেওয়া। অন্যটি, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশে পরিমিতি রাখা। তবে জিপিডি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তবে আমরা নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে সব করব। আমদানিজনিত কারণে যাতে মূল্যস্ফীতি না বাড়ে, তাছাড়া এবার বোরোর উৎপাদন ভালো হওয়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়বে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads