• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ঋণ ও আমানতে ৯-৬ সুদে নৈরাজ্য কাটেনি

নৈরাজ্য চলছে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

ঋণ ও আমানতে ৯-৬ সুদে নৈরাজ্য কাটেনি

আমানত সংগ্রহে বিরোধে জড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তফসিলি ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরেনি। নৈরাজ্য চলছে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে। অথচ ব্যাংকের মালিক ও প্রধান নির্বাহীরা দুই দফায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের স্বার্থে আমানত ও ঋণে শৃঙ্খলা আনবেন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছেন একগুচ্ছ সুবিধা। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্যাংকগুলো পরিদর্শনে নামছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বশেষ আগস্ট মাসের শুরুতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-বিএবি এবং প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি। সেখানে গত ৯ আগস্ট থেকে সব ধরনের শিল্প ও বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয় বিএবি ও এবিবি, যা তাদের দ্বিতীয় দফায় প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয় দফায় দেওয়া প্রতিশ্রুতিরও এক মাস পেরিয়ে গেলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশের খবরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলো বিশেষ গোষ্ঠী ও কিছু গ্রাহককে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে সেটি দেখিয়ে রক্ষা পেতে চাইছে। সার্বিকভাবে সব গ্রাহকের জন্য কোনো ব্যাংক এটি কার্যকর করেনি। চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। সঙ্কট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদহার। আমানতকারীকে কোনো কোনো ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদহারের কারণে বিনিয়োগের সুদহার ১৭-১৮ শতাংশ দাঁড়ায়।

পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের নীতি-সহায়তা চান বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কাটাতে নতুন নিয়মে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক। কমানো হয়েছে নগদ জমার হার (সিআরআর)। সব তফসিলি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এবং ৬ শতাংশ দৈনিক হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করার বিধান ছিল। সেটি পুনর্নির্ধারণ করা হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ। আগ্রাসী ব্যাংকিং করে তারল্য সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত হার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের কাছে ব্যাংকগুলো তথ্য আড়াল করে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর করেছে বলে ঘোষণা পাঠাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে কয়েকজন গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থকেন্দ্রে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। তার সূত্র ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরেজমিন পরিদর্শনের।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা ও নির্বাহীরা নিজে থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের দেওয়া ঘোষণা তারা কার্যকর করছেন কি না, সেটি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব ব্যাংক খাতের অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের। আমাদের পরিদর্শন বিভাগের কয়েকটি টিম এ ব্যাপারে কাজ করছে। অনিয়ম ও ঘোষণা বাস্তবায়নে ব্যত্যয় পেলে আইন মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা চলে বাজারের স্বাভাবিক পরিস্থিতি দিয়ে। কোনো প্রেসক্রিপশন দিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। ফলে শিগগির সব ঠিক হয়ে যাবে বলা যাবে না। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে আসছে।

যোগাযোগ করা হলে এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টেলিফোনে গত বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা জোর চেষ্টা করছি। পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। পুরোপুরি কার্যকর করা গেছে, সেটি আমি দাবি করব না। তবে ঋণের সেই উচ্চ হার আর নেই। একই সঙ্গে আমানতের সুদহারও কিছুটা নামিয়ে আনা গেছে। ঢাকা ব্যাংক সব উৎপাদনশীল খাতে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর করেছে।’

এমডিরা বলছেন, তাদের প্রত্যাশা ছিল আমানত প্রবাহ বাড়িয়ে তারল্য সঙ্কট কাটাতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমাবে সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় সেটি করা হচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হবে না। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহ নিয়ে খুব বেশি আশা দেখছেন না এমডিরা।

ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে স্বল্প সুদে (৬ শতাংশ) সরকারি আমানত চাইলেও তা পাচ্ছে না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আশ্বস্ত করলেও সেটি কার্যকর হয়নি। ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে উচ্চ সুদে সরকারি ব্যাংক ও সরকারি আমানত সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আর তারল্য সঙ্কট থাকায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদ দিয়ে আমানত নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি আমানত পেতে ব্যাংকের এমডিরা নিজেরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। একই প্রতিষ্ঠানের কাছে একাধিক ব্যাংক যোগাযোগ করছে। ফলে নিজেদের মধ্যে বিরোধও তৈরি হচ্ছে।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডি মামুন-উর-রশিদ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমানতকারীরা রীতিমতো দরপত্র আহ্বান করে। এটি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সুদহারে শৃঙ্খলা আসবে না।

জানা যায়, প্রথম দফায় ঢাকঢোল পিটিয়ে ১ জুলাই থেকে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ ও ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকরের ঘোষণা দেন ব্যাংক মালিকরা। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এ ঘোষণা দেন তারা। তবে শুরু থেকেই এটি কার্যকর নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে বিভিন্ন মহল।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads