• শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৬ চৈত্র ১৪২৮
কঠিন বর্জ্যে বসবাসের অযোগ্য হচ্ছে পৃথিবী

বসবাসের অযোগ্য হচ্ছে পৃথিবী

সংগৃহীত ছবি

ব্যাংক

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

কঠিন বর্জ্যে বসবাসের অযোগ্য হচ্ছে পৃথিবী

সমুদ্র দূষণে প্লাস্টিকের দায় ৯০ শতাংশ

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিবছর বাড়ছে মানুষের ভোগ চাহিদা। চাহিদা মেটাতে উৎপাদন করা হচ্ছে নিত্যনতুন পণ্য। এসব পণ্যের মোড়কে ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাস্টিক বা অন্য কোনো উপাদান। পণ্য উৎপাদন আর ভোগের সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কঠিন বর্জ্য। আগামীতে কঠিন বর্জ্যের কারণে পৃথিবী মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করছে বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরে ২০১ কোটি টন কঠিন বর্জ্যের সম্মুখীন হচ্ছে বর্তমান বিশ্ব। এর অন্তত ৩৩ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা হয় না। প্রতিবছর বর্জ্য নির্গমনের পরিমাণ প্রায় ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৩৪০ কোটি টনে। এ অবস্থায় বিশ্বকে বাসযোগ্য রাখতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল সোমবার সদর দফতর ওয়াশিংটন থেকে কঠিন বর্জ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, কঠিন বর্জ্য বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণে পরিণত হয়েছে প্লাস্টিকের অযাচিত ব্যবহার। ২০১৬ সালে ২৪ কোটি ২০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিণত হয়েছে। এর পরিমাণ ৫০০ মিলিলিটার আকারের ২৪ লাখ কোটি প্লাস্টিক বোতলের সমান। বর্তমানে সামুদ্রিক বর্জ্যের ৯০ শতাংশের মূল কারণ প্লাস্টিক। প্লাস্টিক থেকে নির্গত বর্জ্যে ৪৮ লাখ অলিম্পিক সুইমিং পুল বা ৪ হাজার বাথটাব পূর্ণ করা যাবে। প্রায় ৩৪ লাখ পূর্ণ বয়স্ক নীল তিমির সমান ওজনের প্লাস্টিক ময়লা সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে প্রতিবছর।

আর্থিক সঙ্কটের কারণে দরিদ্র দেশগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর পৌর এলাকার বাজেট বরাদ্দের প্রায় ২০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। তুলনামূলক ধনী দেশগুলোর শহরাঞ্চলের বরাদ্দের ১০ শতাংশ ব্যয় হয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। বিশ্বকে বাসযোগ্য রাখতে পানযোগ্য পানি সরবরাহ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মতো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সম্পদের সীমাবদ্ধতা, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, চুক্তি ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়ন কাজ পর্যবেক্ষণে স্থানীয় সরকারের ঘাটতি রয়েছে। ফলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দেখা দিচ্ছে কঠিন বর্জ্য।

আগামীতে বিশ্বকে বাসযোগ্য রাখতে উন্নয়নশীল ও দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে অর্থায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি সমুদ্র বর্জ্য সৃষ্টি কমানোর বিষয়ে সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। এসব দেশে বর্জ্য কমানো ও পুনর্ব্যবহার বাড়াতে সমন্বিত কর্মসূচি প্রণয়ন প্রয়োজন। তা ছাড়া ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়িয়ে খাদ্যজাত বর্জ্যের পরিমাণ কমানো, জৈব ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও খাদ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, কঠিন বর্জ্য বর্তমানে বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিটি মানুষের জন্য আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কঠিন বর্জ্যের অন্তত ৩৩ শতাংশ পরিবেশ সম্মত উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা হয় না। নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় ৯০ শতাংশ বর্জ্য উন্মুক্ত স্থানে ফেলে রাখা হয় বা পুড়িয়ে ফেলা হয়। এর ফলে দরিদ্র লোকজন মারাত্মক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকিতে পড়ছেন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রতিবছর কঠিন বর্জ্য নির্গমন হচ্ছে ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টন। পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শিল্পোন্নত দেশগুলো প্রতিবছর সর্বোচ্চ ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টন বর্জ্য সৃষ্টি করছে। ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় নির্গমন হচ্ছে ৩৯ কোটি ২০ লাখ টন কঠিন বর্জ্য। এর বাইরে উত্তর আমেরিকায় ২৮ কোটি ৯০ লাখ টন, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ২৩ কোটি ১০ লাখ টন কঠিন বর্জ্য সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবছর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads