• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বিনা সুদে মিলবে না বিশ্বব্যাংকের ঋণ

বিশ্বব্যাংক

ছবি : ইন্টারনেট

ব্যাংক

বিনা সুদে মিলবে না বিশ্বব্যাংকের ঋণ

# ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব অনুমোদন # সার্ভিস চার্জসহ সুদ ২ শতাংশ # কমেছে পরিশোধের সময় ও রেয়াতকাল

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৭ অক্টোবর ২০১৮

নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের স্বীকৃতি পেয়েছে দুই বছর আগে। সাফল্য ধরে রেখে বাংলাদেশ পরবর্তী দুই বছরে আরো এগিয়ে গেছে। এর ধারাবাহিকতায় শুধু সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে বিনাসুদে বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাওয়ার সুযোগ রহিত হয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের প্রকল্পে ঋণ দিতে শূন্য দশমিক ৭৫ সার্ভিস চার্জের সঙ্গে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ জুড়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে বিশ্বব্যাংকের অর্থ পেতে সুদ ও সার্ভিস চার্জ মিলে দুই শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি কমানো হবে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ও রেয়াতকাল। নতুন নিয়ম মেনে বাংলাদেশের তিন প্রকল্পে ৫১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় এসব শর্ত রেখে ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল শনিবার সংস্থার ঢাকা অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দুই বছর আয় মাথাপিছু আয় বাড়লে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলো ‘গ্যাপ কান্ট্রি’ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। এই সময়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য সস্তা ঋণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যেকোনো দেশ এই অবস্থানে থাকলে সস্তা ঋণ আর পায় না।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ১ হাজার ১৬৫ ডলার জাতীয় মাথাপিছু আয় অব্যাহত থাকলে সহজ শর্তের আইডিএ ঋণ বন্ধ হয়ে যায়। তখন সার্ভিস চার্জের সঙ্গে সুদের হার যুক্ত হয়। তবে এই সুদ হার অন্যান্য দেশ বা সংস্থার চেয়ে বেশি নয়। এটি প্রতিযোগিতামূলক থাকে। তিনি আরো বলেন, সুদ যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য এ ঋণ কিছুটা কঠিন হবে। তবে উন্নতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ব্ল্যান্ড ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়ে আইডিএ’র পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি) থেকেও ঋণ নিতে পারবে বাংলাদেশ। তখন বেশি পরিমাণ ঋণ পাওয়া যাবে বলেও তিনি জানান। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম জানান, বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ায় জুলাই থেকে নতুন সুদহার কার্যকর হয়েছে। তবে বাস্তবে প্রয়োগ হচ্ছে তিন প্রকল্পের মাধ্যমে। সুদ যোগ করার পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের সময়ও কমিয়ে দিয়েছে। আইডিএ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের সময় ৩৮ বছর থেকে ৮ বছর কমিয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। রেয়াতকাল ছয় বছর থেকে নামিয়ে আনা হয়েছে ৫ বছরে। সব দিক দিয়েই বিশ্বব্যাংকের ঋণে শর্ত কঠিন করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য) ড.শামসুল আলম বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগে উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণের সুদ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের পর হয়তো অন্যরাও বাড়াতে চাইবে। এজন্য এখন থেকেই বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে কৌশল গ্রহণ করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

গতকাল ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংক থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ অর্থায়ন বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে। এর ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সুযোগ বাড়বে। তা ছাড়া মিয়ানমার থেকে সংঘাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি তাদের আশ্রয় নেওয়া এলাকার স্থানীয় লোকজনের উন্নয়নেও বিশ্বব্যাংকের এ অর্থায়ন কাজে লাগবে বলে দাবি করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, এই তিন প্রকল্প পল্লী এলাকার লোকজন বিশেষ করে দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের দারিদ্র্য বিমোচন করবে। পাশাপাশি এ অর্থায়ন দেশের জলবায়ু পরিবর্তনে সহনশীলতা বাড়াবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাড়ে ৫১ কোটি ডলারের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার টেকসই বনায়ন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্পে। এ প্রকল্পের আওতায় বনায়ন বৃদ্ধির পাশাপাশি বন ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে গাছের চারা রোপণ করা হবে। বনায়নে উপকূলীয় অঞ্চলকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির টিম লিডার বিশ্বব্যাংকের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ মাধাবি পিল্লাই বলেন, প্রকল্পের আওতায় উপকূল ও পাহাড়ি এলাকায় বনের ওপর নির্ভরশীল ৪০ হাজার পরিবারের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা হবে। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়া কক্সবাজার এলাকায় প্রকল্পটি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় ১০ সংরক্ষিত বনের সুরক্ষায় প্রকল্পে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে।

টেকসই উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পে ২৪ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের আওতায় মৎস্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়ানো হবে। উপকূলীয় ১০ জেলায় প্রকল্পের আওতায় মৎস্যজীবীদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা হবে। তা ছাড়া নারী শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও প্রকল্পের টিম লিডার মিলেন ডয়লগরভ বলেন, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ খাতে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান আছে। তৈরি পোশাকের পর মৎস্য খাত দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের উৎস। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নেওয়া প্রকল্পের আওতায় মাছ শিকারিদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। তা ছাড়া প্রকল্পের আওতায় মাছ শিকারি জাহাজ লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে। চলমান গ্রামীণ পরিবহন উন্নয়ন কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নে অবশিষ্ট ১০ কোটি ডলার বাড়তি অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। গত বছরের প্রবল বন্যায় নষ্ট হয়ে যাওয়া ২৬ জেলার সড়ক সংস্কারে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। চলমান প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই ৫ হাজার কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে বাজার, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads