• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ডেইরি খাতে ৪ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

ডেইরি খাতে ৪ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

নতুন জাত উদ্ভাবন আর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে বাড়ছে দুধ ও মাংস উৎপাদন। একই সঙ্গে বাড়ছে চাহিদা। ফলে দুধ ও মাংসের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। সর্বশেষ হিসাবে দেশে দুধের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে ৫৯ লাখ টন কম। মাংস ঘাটতি থাকছে বছরে ৫ লাখ টন। ফলে শিশু, নারী ও দরিদ্র লোকজন অপুষ্টির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় প্রাণিজ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন করে ডেইরি খাতকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায় সরকার। পশু স্বাস্থ্য, প্রজনন, বিপণনসহ প্রতিটি খাতের ব্যবস্থাপনায় নেওয়া হচ্ছে আধুনিকায়নের উদ্যোগ। খামারিদের নিরাপত্তায় প্রবর্তন করা হচ্ছে পশু বীমা। এ সংক্রান্ত প্রকল্পে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় এ ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার বিশ্বব্যাংকের সদর দফতর ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনের মান ও পরিমাণ বাড়বে। প্রায় ২০ লাখ ছোট ও মাঝারি আকারের খামারি ও কৃষিভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বাজার সুবিধা বাড়াবে প্রকল্পটি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিম, মাংস ও দুধের ক্রম বর্ধমান চাহিদা পূরণ হবে। এর ফলে নাগরিকদের পুষ্টি গ্রহণ পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

প্রকল্পটির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফ্যান বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, প্রানীজ সম্পদের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে বাংলাদেশের সরকার দেশটির মানুষের মাংসের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে মানসম্মত কর্মসৃজনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নারী, তরুণ ও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে বলেও তিনি মনে করেন।

বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রাণিজ সম্পদ খাতে মোট শ্রমশক্তির ১৪ শতাংশ নিয়োজিত আছেন। তবে পল্লী অঞ্চলের ৭০ শতাংশের বেশি পরিবারে পশুপালন করে থাকে। বর্তমানে কৃষি খাতের ৬৮ শতাংশ শ্রমিক নারী। তারা মূলত প্রাণিজ সম্পদ ও পোল্ট্রি উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট আছেন। তাদের ৭০ শতাংশের বেশিই নারী।

প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংকের টিম লিডার ম্যানিভেল সেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রাণিজ সম্পদ উন্নয়নে ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পল্লীর প্রাণিজ সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া, রোগের কারণে প্রাণহানি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এসব ঝুঁকি কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে।

বিশ্বব্যাংক আরো জানায়, গবাদি পশু, ডিম, মাংস ও পোল্ট্রি মংসের জোগান ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। এর ফলে প্রতি বছর এসব খাদ্যের ঘাটতি বাড়ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে দেড়শ কোটি ডিম, ৫ লাখ টন মাংস ও ৫৯ লাখ টন দুধের ঘাটতি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকার ডেইরি পণ্য আমদানি করা হয়েছে। ঘাটতির কারণে শিশু, গর্ববতী নারী ও দরিদ্র লোকজন পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে আছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তত ২০ লাখ মানুষের খাদ্যের ঘাটতি পূরণের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস সূত্র জানায়, প্রাণিজ সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। বাজার ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় হবে ২৪ কোটি ডলার। আর ডেইরি শিল্পের ঝুঁকি কমাতে বরাদ্দ থাকবে ১৪ কোটি ডলার। এর বাইরে আরো ৩ কোটি ডলার ব্যয় হবে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও মূল্যায়নে।

প্রকল্পের খাতভিত্তিক বরাদ্দ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মোট দুই উপখাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে ৩ কোটি ডলার ব্যয় হবে খামারিদের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে। সংগঠনটি নিজেদের সামষ্টিক স্বার্থে কাজ করবে। এ খাতের দক্ষতা ও সামর্থ্য উন্নয়নেও কাজ করবে সংগঠনটি। পাশাপাশি ৬ কোটি ডলার ব্যয় করে উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা ও মান উন্নয়ন করা হবে। রোগ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ও পুষ্টি ভারসাম্য, প্রজনন উন্নয়ন, আবাসন উন্নয়ন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পাণী ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হবে এ খাতের অর্থ।

প্রকল্পটির আওতায় ডেইরি খাতের ঝুঁকি কমাতে প্রায় ১৪ কোটি ডলার ব্যয় করা হবে। এর আওতায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যয় করা হবে ৫ কোটি ডলার। প্রাণিজ সম্পদের জন্য বীমা ব্যবস্থা প্রণয়নে ব্যয় করা হবে আরো ৫ কোটি ডলার। এর মাধ্যমে এ খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়বে বলেও মনে করে বিশ্বব্যাংক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads