• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
নির্বাচনী ইশতেহারে বিশেষ নজরে ব্যাংক ও আর্থিক খাত

লোগো বিএনপি ও আওয়ামী লীগ

কম্পোজিশন : তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী

ব্যাংক

নির্বাচনী ইশতেহারে বিশেষ নজরে ব্যাংক ও আর্থিক খাত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে এবার বিশেষ নজরে ব্যাংক ও আর্থিক খাত। আওয়ামী লীগ বলছে, ফের ক্ষমতায় এলে ঋণের সুদহার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। অন্যদিকে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে ব্যাংক খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করবে না। দু’দলের ইশতেহার বিশ্লেষণ করেছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক সাইদ আরমান। 

 

ঋণের সুদহার নিয়ন্ত্রণে রাখবে আ.লীগ

চলমান নৈরাজ্য বন্ধ করে ঋণের সুদহার নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে আমানত ও ঋণের সুদহার নিয়ে ব্যাংক খাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা চলছে। ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার টানাটানি থেকে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মালিকরা নানা উদ্যোগ নিয়েও এতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি।

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ বলছে, ফের দেশ পরিচালনায় এলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদহার নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। গতকাল মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইশতেহারে দলটি এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনাম নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ ইশতেহারে ব্যাংক খাতের জন্য দেউলিয়া আইন বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করেছে। শেখ হাসিনার সরকারের প্রথম মেয়াদে ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার বেশ কয়েকটি আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। এ ছাড়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংককে কয়েক দফা পুঁজির জোগান দিলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া ঘোষণা করে একীভূতকরণের পরামর্শ দিয়ে আসছেন বেশ কিছুদিন ধরে।

দলটি বলছে, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান তদারকি জোরালো করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ হাতে নেবে তারা। ঋণসহ ব্যাংক জালিয়াতি কঠোর হস্তে দমন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঋণগ্রাহক ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে দেউলিয়া আইন বাস্তবায়নের টেকসই ও কার্যকর পদ্ধতি নির্ণয় করা হবে।

বাজার-ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচক্ষণতার সঙ্গে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখবে জানিয়ে দলটি বলছে, ঋণ অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ে দক্ষতা এবং গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়বদ্ধতা পরিবীক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নেবে।

বর্তমান সরকারের মেয়াদে আরেকটি আলোচিত বিষয় বিদেশে অর্থ পাচার। বিষয়টি এবারের ইশতেহারে স্থান পেয়েছে। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, বিদেশে অর্থ বা পুঁজিপাচার ও সম্পদ গচ্ছিত রাখা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এ ধরনের অপরাধ দৃঢ়ভাবে দমনে সক্রিয়।

 

আর্থিক খাতে হস্তক্ষেপ করবে না বিএনপি

প্রায় এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ক্ষমতায় এলে আর্থিক খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করবে না। ব্যাংকিং খাতে যোগ্য ও দক্ষদের নিয়োগ দেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এর আগে গত সোমবার বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জোট ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে তারা দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাবে। বিশৃঙ্খলা ও লুটপাটের কারণে এই খাতটি একেবারে ভেঙে পড়ার পর্যায়ে চলে এসেছে। বিএনপি তার প্রতিশ্রুতিতে জানিয়েছে, ব্যাংকিং খাতে ক্ষমতাসীন দল হস্তক্ষেপ করছে। রাজনৈতিক এমন হস্তক্ষেপে এই খাতে শৃঙ্খলার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে বিএনপি এটি করবে না। ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের তদারকির ভার দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সুশাসনের দিকে বিএনপির নজর থাকবে ক্ষমতা পেলে। দলটি বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে সৎ, দক্ষ ও যোগ্য লোকদের নিয়োগ দেওয়া হবে। দুর্নীতি ও সব ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসিকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের উদ্যোগ থাকবে তাদের মেয়াদে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে নারীদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দেবে। তাছাড়া তরুণ উদ্যোক্তা ও দম্পতিদের জন্য ২০ বছর মেয়াদি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে।

বিএনপির আগে ইশতেহারে ঐক্যফ্রন্ট জানায়, ক্ষমতাশীল বিভিন্ন শ্রেণির কিছু সদস্যের জন্য রাষ্ট্রীয় যাবতীয় সুযোগ সুবিধা অবারিত লুটপাট করার এই চর্চা যা অর্থনীতিতে ক্রনি ক্যাপিটালিজম (পুঁজিবাদের দুষ্ট চক্র) হিসেবে খ্যাত। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ দুর্বৃত্ত পুঁজি তৈরি হয়েছে। সরকারের প্রত্যক্ষ প্রভাব ব্যবহার করে সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বের করে নিয়ে আর পরিশোধ করা হচ্ছে না। একইভাবে পুঁজিবাজারে প্রতারণা করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কিন্তু জনগণের ভোটের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads