• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
টান পড়েছে বিনিয়োগে

বাংলাদেশ ব্যাংক লোগো

ব্যাংক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন

টান পড়েছে বিনিয়োগে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আমানত ও ঋণের সুদহারের টালমাটাল পরিস্থিতি বেসরকারি বিনিয়োগ টেনে ধরেছে। কমে গেছে বেসরকারি খাতের ঋণ। এছাড়া সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য অনিশ্চয়তা উৎকণ্ঠাও বিনিয়োগে ভাটার কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে কেন্দ্র্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বিনিয়োগে  ভাটার প্রকৃত কারণগুলো স্পষ্ট হবে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে। গত ডিসেম্বর শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু বিনিয়োগে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা গত ৩৯ মাসে সর্বনিম্ন। আশানুরূপ বিনিয়োগ না হওয়ায় ২০১৫ সালে এমন পরিস্থিতি ছিল। বেসরকারি বিনিয়োগের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়া ব্যাংকগুলো আবার সুদহার বাড়াতে শুরু করেছে। নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ ব্যাংক নতুন বিনিয়োগে আগের থেকে বেশি সুদ আরোপের বিষয়টি গ্রাহককে প্রস্তাব করছেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির গত বুধবার বলেন, আমানত ও ঋণের সুদহার নামিয়ে আনতে ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ঘোষণা দেয়। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তবে তারা সেটি কার্যকর করছে। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো কার্যকর হয়নি। সুদহার আগের থেকে কমেছে।

তিনি বলেন, গত ৬ মাসে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপিত লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেকটা নিচে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এটি হতে পারে। এছাড়া আমানত ও ঋণের সুদহারের জোগান ও চাহিদাভিত্তিক ওঠানামায় সাম্প্রতিক সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা বেসরকারি খাতে ঋণ জোগান প্রবাহকে প্রভাবিত করছে কি না, সেটিও প্রশ্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ঋণপ্রবাহ কমলেও কর্মসংস্থান বাড়ায় এবং উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের পর্যাপ্ততার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবীক্ষণ ও সমর্থন আগে থেকেই বজায় রয়েছে। সূত্র বলছে, নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তফসিলি ব্যাংকগুলোর

তারল্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরেনি। প্রায় ছয় মাসে পরিস্থিতি খুব বেশি উন্নতি হয়নি। নৈরাজ্য চলছে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে। অথচ ব্যাংকের মালিক ও প্রধান নির্বাহীরা দুই দফায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের স্বার্থে আমানত ও ঋণে শৃঙ্খলা আনবেন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে আদায় করে নিয়ে গেছেন একগুচ্ছ সুবিধা।

সর্বশেষ আগস্ট মাসের শুরুতে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বিএবি এবং প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি। সেখানে গত ৯ আগস্ট থেকে সব ধরনের শিল্প ও বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে। তবে ঘোষণার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সার্বিকভাবে সব গ্রাহকের জন্য কোনো ব্যাংক এটি কার্যকর করেনি। বরং ব্যাংকগুলো বিশেষ গোষ্ঠী ও কিছু গ্রাহককে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে সেটি দেখিয়ে রক্ষা পেতে চাইছে।

জানা যায়, চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। সঙ্কট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদহার। আমানতকারীকে কোনো কোনো ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদহার ১৭-১৮ শতাংশ দাঁড়াচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের নীতিসহায়তা চান বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কাটাতে নতুন নিয়মে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক। কমানো হয়েছে নগদ জমার হার (সিআরআর)। সব তফসিলি ব্যাংকগুলোর মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের সাড়ে ৬ শতাংশ হারে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে এবং ৬ শতাংশ দৈনিক হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করার বিধান ছিল। সেটি পুনর্নির্ধারণ করা হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ৫ শতাংশ। আগ্রাসী ব্যাংকিং করে তারল্য সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত হার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এখনো ১১টি ব্যাংকের এডিআর নির্ধারণ সীমার ওপরে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, ব্যাংকগুলোর কাছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা অলস টাকা রয়েছে। তবে তার পুরোটা বিনিয়োগযোগ্য নয়। এর কিছু বন্ড ও বিল আকারে রয়েছে। নির্বাচনে পর অর্থনীতি গতি পাবে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত বিনিয়োগ সহায়তা দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads