• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
অস্বস্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অস্বস্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

বিনিয়োগ অর্থের উৎসে ব্যাংকনির্ভরতা

অস্বস্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নানা পদক্ষেপেও ব্যাংক খাতে সঙ্কট কাটছে না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কিছুটা স্বস্তি এলেও আবার ফিরেছে পুরনো চিত্র। শুরু হয়েছে নগদ টাকার টানাটানি। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকনির্ভরতা কমাতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিকল্প উৎস চিহ্নিত করে সেদিকে নজর দিতে পরামর্শ এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অত্যধিক ব্যাংকনির্ভরতা সঙ্কটকে দীর্ঘায়িত করছে। তাই বিনিয়োগ উৎসের বিকল্প খুঁজতে হবে। আর এটি হতে পারে ক্রাউড ফান্ডিং প্রক্রিয়া।

রাঘোব বোয়ালদের নেয়া লোন ফেরত নিয়েও বিপাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। টাকা ফেরত নিতে পারছেনা রাষ্ট্রায়ত ব্যাংক।  সালমান এফ রহমান , আহমেদ আকবর সোবহান ,ওরিয়ন সহ একাধিক রাঘোব বোয়াল রয়েছে এই তালিকার শির্ষে। বাংলাদেশ ব্যাংক এদের কারনে বিব্রত ।বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী বাংলাদেশের খবরকে বলেন। নয়া অর্থ মন্রী যতকিছুই বলুুুক মুল রাঘোব বোয়ালরা এদের কাজ চালিয়ে যাবে বহাল তবিয়তে।

ঋন ক্ষেলাপীদের  মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লি, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস, রাবেয়া ভেজিটেবল ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, রাইজিং স্টিল মিল, ঢাকা ট্রেডিং হাউস, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আনোয়ারা শিপিং মিলস, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী নিটওয়ার, সিদ্দিক ট্রেড, রুপালী কম্পোজিট লেদার ওয়ার, আলফা কম্পোজিট টয়েলস, হলমার্ক ফ্যাশন লিমিটেড, মুন্নু ফেব্রিক্স, ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং লিমিটেড, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স, শাহরিজ কম্পোজিট টয়েল লিমিটেড, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল, সুরুজ মিয়া শিপিং মিলস, প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড, সালেহ কার্পেট মিল, পদ্মা পলি কটন নিট ফেব্রিক্স, এ কে স্টিল প্রমুখ। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সব চেয়ে ঋণখেলাপি (অনাদায়ী) ব্যাংকের মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে সোনালী ব্যাংক লি., যার খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ৬৬২ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

তাই ক্রাউড ফান্ডিংয়েই যেতে হবে।ফান্ডিং মূলত ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে মূলধন সংগ্রহ করার বিনিয়োগ প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতিতে ছোট ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরা এই উৎস থেকে পুঁজি নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনাও শুরু করতে পারবেন। অপেক্ষাকৃত কম সময়ে এর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা যাবে।

সূত্রগুলো বলছে, অনেক দেশে ক্রাউড ফান্ডিং চালু হয়েছে। ২০১৮ সালে বিশ্বে ৩৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে এর মাধ্যমে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তারা বর্তমানে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল। এর পেছনে বেশ কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে। অর্থায়নের বিকল্প উৎস হিসেবে আর্থিক খাতে আর জোরালো কোনো মাধ্যম নেই। বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও দীর্ঘদিনে এর কোনো অগ্রগতি নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে অনেক দিন থেকে এ ব্যাপারে সুপারিশ করে আসছে। তবে কার্যত কিছুই হয়নি।

একইভাবে পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ সম্প্রসারণে অর্থ সংগ্রহ করাও বেশ কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান প্রথম দিকে সেই যোগ্যতা অর্জন করে না। ফলে এখান থেকেও অর্থ নিয়ে বিনিয়োগে গতি তৈরি করা যাচ্ছে না। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিয়ে আলাপ আলোচনা হলেও নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে খুব বেশি কার্যকর হতে পারেনি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। 

জানা গেছে, ক্রাউড ফান্ডিং চালু করতে নতুন বিধি-বিধান প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। নীতিমালার আলোকে নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল সংগ্রহ করে বিনিয়োগে জোগান দেবে। তবে যথাযথ প্রক্রিয়ার বাইরে কেউ যাতে এটি করতে না পারে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। সেটি হলে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানিগুলোর মতো সাধারণ মানুষ প্রতারিত হতে পারে। ফলে তহবিল প্রক্রিয়া চালুর আগেই সতর্ক দৃষ্টি থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখন আমরা খুব বেশি ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। এতে বিদ্যমান সঙ্কট কাটছে না। তাই ক্রাউড ফান্ডিং চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনেক দেশে এটি এরই মধ্যে চালু হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে মূলধন বাজার কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে এটি প্রচলন করেছে। আমাদেরও সময় এসেছে নীতিমালা করে দ্রুত কার্যকর করার।

তিনি বলেন, ক্রাউড ফান্ডিং চালু করা গেলে নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তারা সহজে মূলধন পাবেন। ফলে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের মূলধন বাজারের সূচকের গতিধারা এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সূচকের গতিধারার সঙ্গে বহুলাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা মূলধন বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াবে। আমাদের মূলধন বাজারের গতিশীলতা আসবে। নতুন বহুজাতিক অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক, সচ্ছল দেশগুলোর সভরেন ওয়েলথ ফান্ড এবং খ্যাতনামা বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আমাদের আর্থিক খাত প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগাযোগ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াবে। এই লক্ষ্যে দেশের আর্থিক খাত প্রতিষ্ঠানগুলোর এবং প্রকৃত খাতের শীর্ষস্থানীয় করপোরেটগুলোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ক্রেডিট রেটিংয়ের ভালো মান অর্জন ও বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো বলছে, অচিরে মধ্যম আয়ের অর্থনীতি পর্যায়ে দেশের কাঙ্ক্ষিত উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বহুলাংশে বৈদেশিক সূত্র থেকে আকর্ষণ করতে হবে।

গত বছরের মাঝামাঝিতে ব্যাংকঋণের সুদহারে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু নীতি সহায়তা ঘোষণা করে। বছরের শেষদিকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও নতুন বছরের শুরুতে আবার সুদহার বাড়ছে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোতে আবারো নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়েছে। কার্যত স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকিং খাতের সঙ্কট থাকছে না।

সরকার নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় এসে বেসরকারি বিনিয়োগে গতি আনতে চায়। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ মোট জিডিপির ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। আগামী ৫ বছরে সরকার জিডিপির ৩৭ শতাংশ বিনিয়োগ দাঁড় করাতে চায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের মতে, ব্যাংকিং খাতের সঙ্কট শুধু স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগর জন্য হয়নি। ব্যবস্থাপনা ঘাটতি ও সুশাসন অন্যতম কারণ। তবে অনেক দিন ধরেই বন্ড মার্কেট সক্রিয় করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি আমরা দেখছি না। ক্রাউড ফান্ডিং খুব তাড়াতাড়ি চালু করে সঙ্কট সমাধান করা যাবে বলে আমি মনে করি না। 

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমাদের সমস্যাগুলো আমরা শনাক্ত করেছি। সমাধানের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করছে। এটি কীভাবে কমানো যায় সেটি চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads