• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ব্যাংকে ঋণ অবলোপনের হিড়িক

ব্যাংকে ঋণ অবলোপনের হিড়িক

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

ব্যাংকে ঋণ অবলোপনের হিড়িক

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ঋণ অবলোপনের মচ্ছব চলছে সরকারি ব্যাংকগুলোয়। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সরকারি আট ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ অবলোপন আরো বাড়িয়ে দেবে। ব্যাংকগুলো স্বাস্থ্য ভালো দেখাতে এটি করবে আরো সহজে।

চলতি মাসের শুরুতে ঋণ অবলোপন সংক্রান্ত একটি সংশোধিত নীতিমালা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সহজ পথ বের করে দেওয়া হয়েছে ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। ঋণ অবলোপন নীতিমালায় শিথিলতার মাধ্যমে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো মাত্র তিন বছর পর মন্দ মানের খেলাপি ঋণ অবলোপন করে ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র থেকে বাদ দিতে পারবে। এতে করে ঋণ আদায় না হলেও কাগজ-কলমে খেলাপি ঋণ কমবে। আবার অবলোপন করার জন্য আগের মতো শতভাগ প্রভিশন লাগবে না। দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনে মামলা করতে হবে না। এতদিন কোনো ঋণ মন্দমানে শ্রেণিকৃত হওয়ার পাঁচ বছর পূর্ণ না হলে তা অবলোপন করা যেত না। মামলা না করে অবলোপন করা যেত ৫০ হাজার টাকা। আর শতভাগ প্রভিশন বা ওই ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা লাগত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে অদৃশ্য চাপেই এমনটি করা হোক না কেন, সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং খাতে রক্তক্ষরণ ঘটাবে। উসকে দেবে পরিস্থিতিকে। গত ৭ বছরে ঋণ অবলোপন বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০১১ সালের জুনে ব্যাংকিং খাতে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে ৯৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ ৮২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। মোট খেলাপি ঋণের ৮৩ দশমিক ১৬ শতাংশই মন্দ মানের। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। এতে অবলোপন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা।

ব্যাংক ব্যবস্থায় মন্দ মানে শ্রেণিকৃত ঋণ স্থিতিপত্র (ব্যালেন্স শিট) থেকে বাদ দিলে তাকে অবলোপন বলে। যদিও এ ধরনের ঋণ গ্রহীতা পুরো টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত তা প্রকৃত অর্থে খেলাপি ঋণ। ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলের সিদ্ধান্তে এক ধাক্কায় খেলাপি ঋণ কমে আসবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১১ সালের জুনে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সেটি বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত দুই সরকারি ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণ ৫০০ কোটি টাকা। হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলো বছরে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ অবলোপন করে ব্যাংকের স্বাস্থ্য ভালো দেখাচ্ছে।  

অবশ্য খেলাপি ঋণ কম দেখাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ অবলোপন নীতিমালার সংশোধন স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরদিন তিনি সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নে বলেন, রাইট অফ (অবলোপন) ইজ এ পার্ট অফ দ্য সিস্টেম ইটসেল্ফ এবং তা আমাদের করতে হবে। এটা প্রত্যেক দেশই করে। ভারত, মালয়েশিয়াসহ প্রত্যেক দেশই এটা করে। জানতে চাইলে একটি সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, খেলাপি হয়ে যাওয়া যেসব ঋণ দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও আদায় হয় না, তখন ব্যাংকের মূল হিসাব থেকে আদায় অযোগ্য ঋণের একটি অংশ আলাদা করা হয়। গ্রাহকদের কাছে ব্যাংকের স্বাস্থ্য ভালো দেখানোর লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো নিয়ম মেনে এটি করবে। তবে অবলোপন করা হলেই সেটি আদায়ে চেষ্টা বন্ধ হয়ে যায় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, সোনালী ব্যাংক এ পর্যন্ত অবলোপন করেছে ৮ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংক অবলোপন করেছে ৫ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংক করেছে ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা এবং রূপালী অবলোপন করেছে ১ হাজার ১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।

ব্যাংকিং খাতে উচ্চ খেলাপি ঋণের এই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে নতুন তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৬২। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা সব সময় নতুন করে ব্যাংকের অনুমোদনের বিপক্ষে মত দিয়ে আসছিলেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads