• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যাংক পরিচালকদের জবাবদিহি বাড়ছে

লোগো বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংক

ব্যাংক পরিচালকদের জবাবদিহি বাড়ছে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রশ্নে জবাবদিহিতা বাড়ছে পরিচালকদের। এ জন্য পরিচালকদের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে জবাবদিহির বিষয়টি জানিয়ে দিতে চায় সরকার।

জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাহেব দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক খাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির মেরুদণ্ড ব্যাংক খাতে তিনি শুদ্ধি অভিযাগ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে তিনি বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।

জানা গেছে, গত দশ বছরে ব্যাংক খাতে নানা জালিয়াতি ও অব্যবস্থাপনার ঘটনা সামনে এসেছে। তবে তার দু-একটি ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জবাবদিহিতার আওতায় এলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পর্ষদ দায়মুক্তি পেয়েছে। এমনকি পুরস্কৃত হয়েছেন কেউ কেউ। তবে বলির পাঁঠা হতে হয়েছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের। অপসারণসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) মামলায় অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। জেলও খেটেছেন।

ব্যাংকাররা বলছেন, পরিচালনা পর্ষদের সম্পৃক্তা ছাড়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোনো অনিয়ম বা জালিয়াতি করতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে এবার বড় পরিসরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে সীমিত পরিসরে একবার পরিচালকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।

বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংকের সংখ্যা আটটি। যার মধ্যে ৬টি বাণিজ্যিক ও দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক। এসব ব্যাংকে প্রায় একশ পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। যাদের বেশিরভাগই সাবেক আমলা। এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবীরা রয়েছেন। সাংবাদিকরাও পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এর বাইরে বেসরকারি ব্যাংকগুলো মিলিয়ে দেশে ব্যাংকের পরিচালক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭০০। ফলে ব্যাংক কার্যক্রমের খুঁটিনাটি তারা ভালোভাবে জানেন না। এজন্য অনিয়ম ও জালিয়াতি এবং ব্যাংকিংয়ের সামগ্রিক কার্যক্রম সম্পর্কে তারা তেমন সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। কেবল পরিচালনা পর্ষদের নিয়মিত বৈঠকে অংশ নিয়ে সম্মানী নিয়ে আসছেন তারা। এর বাইরে অনেক পরিচালকের বিরুদ্ধে তদবিরসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনে পরিচালকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা আছে। সেখানে তাদের দায়দায়িত্ব স্পষ্ট করা আছে। এর সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৩ সালে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারিও করা হয়। তবে বেশিরভাগ পরিচালক সেটি আমলে নেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নীতিমালাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে পরিচালকরা অনেক কিছু জানতে পারবেন।

নীতিমালার ভূমিকায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের নীতি-নির্দেশনা প্রণয়ন এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান সুচারুরূপে সম্পন্নকরণে তথা ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ও পেশাগতভাবে দক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ব্যাংক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব অপরাপর কোম্পানির তুলনায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড প্রধানত আমানতকারীদের অর্থে পরিচালিত হয় এবং এ ক্ষেত্রে আমানতকারীদের আস্থা অর্জন করা ও তা ধরে রাখা অপরিহার্য। সুশাসনের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদের গঠন, দায়-দায়িত্ব ও তদসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নজর দিতে হবে।

আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কার্যকলাপ সম্পাদন কিংবা জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে ব্যাংক-কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারার আওতায় সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক ছাড়া যেকোনো ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক বা চেয়ারম্যানকে বাংলাদেশ ব্যাংক অপসারণ ও ৪৭ ধারার আওতায় যেকোনো ব্যাংক-কোম্পানির পর্ষদ বাতিল করতে পারে।

দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করবে। লক্ষ্য অর্জনের কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা বার্ষিক ভিত্তিতে প্রণয়ন করবে। নির্ধারিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কৌশল প্রণয়ন ও প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সাংগঠনিক পরিবর্তন ও পুনর্বিন্যাস এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য নীতিগত বিষয়ে পর্ষদ বিশেষভাবে নিয়োজিত থাকবে। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্ষদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরিবীক্ষণ করবে।

ব্যাংক খাতে শুদ্ধি অভিযানে যাচ্ছে সরকার। তার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সদ্য বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা ১০ বছরের মেয়াদ শেষে ব্যাংক খাতে একটি প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এই খাতের সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে বিভিন্ন স্তরে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাত একটি দুষ্টচক্রের কব্জায়। এখানে সুশাসন আনতে চাইলে পর্ষদে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তবে কেবল সচেতন করে হবে না। কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ দেখাতে হবে। তবেই সুশাসন আসবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads