• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
খেলাপি ঋণ আদায়ে অগ্রগতি শূন্য

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

খেলাপি ঋণ আদায়ে অগ্রগতি শূন্য

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ নিয়ে সরকারের নতুন মেয়াদে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বলছেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। গত প্রায় দুই মাসে খেলাপি ঋণ আদায়ে বড় কোনো পদক্ষেপ আসেনি, হয়নি অগ্রগতি। অবস্থাদৃষ্টে বলা যায়, খেলাপি ঋণের বিষয়টি এখন পর্যন্ত আলোচনাসর্বস্বই রয়ে গেছে। তবে ঋণ অবলোপনে দেওয়া হয়েছে বড় ছাড়।

খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণ ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকাই মন্দ ঋণ যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি ছয় ব্যাংক অর্থাৎ সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের রয়েছে ৪০ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। সরকারি এ ছয় ব্যাংকের মন্দ ঋণের হার তাদের মোট ৪৮ হাজার ৮০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৫ ভাগ।

তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর বছর ব্যবধানে বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এদিকে, বড় অঙ্কের এই ঋণ আদায়ে বড় বাধা আইন। অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান আদালতে গিয়ে অর্থ পরিশোধে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে করণীয় নির্ধারণে একটি বৈঠকের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবির চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, আমরা শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এবং বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক করব। কিন্তু ওই বৈঠকের পর গত দুই সপ্তাহে এ ধরনের কোনো বৈঠক কিংবা আলোচনা হয়নি।

এ ছাড়া প্রথম দিকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের বিষয়ে সরকার মনোভাব প্রকাশ করলেও এখন সেটি নেই। তবে ব্যাংকিং খাতে শুদ্ধি অভিযান চূড়ান্ত করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের চিন্তা করছে সরকার।

এদিকে, খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কমিটি গঠন করেছে। কীভাবে খেলাপি ঋণ কমানো যায় তা পর্যালোচনা করছে ওই কমিটি।

এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে ঋণ অবলোপন সংক্রান্ত একটি সংশোধিত নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সহজ পথ বের করে দেওয়া হয়েছে ওই নীতিমালার মাধ্যমে। ঋণ অবলোপন নীতিমালায় শিথিলতার মাধ্যমে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো মাত্র তিন বছর পর মন্দ মানের খেলাপি ঋণ অবলোপন করে ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র থেকে বাদ দিতে পারবে। এতে ঋণ আদায় না হলেও কাগজ-কলমে খেলাপি ঋণ কমবে। আবার অবলোপন করার জন্য আগের মতো শতভাগ প্রভিশন লাগবে না। দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনে মামলাও করতে হবে না।

এত দিন কোনো ঋণ মন্দমানের শ্রেণিভুক্ত হওয়ার পাঁচ বছর পূর্ণ না হলে তা অবলোপন করা যেত না। মামলা না করে অবলোপন করা যেত ৫০ হাজার টাকা। আর শতভাগ প্রভিশন বা ওই ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা ছিল বাধ্যতামূলক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং খাতে রক্তক্ষরণ ঘটাবে। উসকে দেবে পরিস্থিতিকে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণ বেচাকেনার সুযোগ দিতে হবে। এ ছাড়া ভালো ব্যবসায়ী ও খারাপ ব্যবসায়ী শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে হবে। এ জন্য একটি কাঠামো ঠিক করতে হবে। ভালো গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এতে গ্রাহকরা উৎসাহিত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এরই মধ্যে এ বিষয়ে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খেলাপি ঋণ কমাতে সরকার সংশ্লিষ্ট সব আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে চায়। এটিও হবে সময়সাপেক্ষে। নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। তার ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে তিনি এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেন সরকারি-বেসরকারি তফশিলি ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি উত্তরণে যা যা করা দরকার সবই করা হবে। কার্যক্রম চলছে। তবে তার ফল রাতারাতি দৃশ্যমান হবে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। প্রক্রিয়া, সময় ও নিয়ম মেনেই কাজ চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads