• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ঝুলে আছে ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ

লোগো বাংলাদেশ ব্যাংক

সংরক্ষিত ছবি

ব্যাংক

ঝুলে আছে ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০২ মার্চ ২০১৯

দীর্ঘদিন ঝুলে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ। অতীতে চারজন ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব পালনের নজির থাকলেও বর্তমানে ডেপুটি গভর্নর পদে রয়েছেন মাত্র দুজন। গত আট মাসে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ এই পদে একজনকেও নিয়োগ দেয়নি। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত চাপে রয়েছেন দায়িত্বে থাকা দুই কর্মকর্তা। এদিকে অফিসকক্ষের ব্যবস্থা না করেই নির্বাহী পরিচালক পদে রেকর্ডসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে। ফলে বিদ্যমান অবকাঠামোতে তাদের বসার কক্ষ দেওয়া যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে সর্বোচ্চ চারজনকে নিয়োগ দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নানা সীমাবদ্ধতায় সেটি আর করা যাচ্ছে না। কয়েক বছর এই পদে ছিলেন তিনজন। গত ছয় মাস ধরে আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রণকারীপ্রতিষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর রয়েছেন মাত্র দুজন।

সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় ৬০টির মতো বিভাগ ও দফতর রয়েছে। দেশে বর্তমানে ব্যাংকের সংখ্যা ৫৯। আরো তিনটি অনুমোদনের অপেক্ষায়। শাখার সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বেড়েছে জালিয়াতি ও অনিয়ম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জনবলও বেড়েছে। তবে শীর্ষ এই পদের শূন্যস্থান পূরণ হচ্ছে না। ফলে দুজন কর্মকর্তাকে ব্যাপক কাজ দেখভাল করতে হচ্ছে। চারজনের কাজ দুজনে করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন না। সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না স্বীয় দায়িত্ব।

গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। প্রার্থীদের যোগ্যতা হিসেবে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে বা বিদেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকে অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ে কমপক্ষে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। শীর্ষ পর্যায়ে বলতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (ডিএমডি) নিচে নয়।

প্রার্থীকে অবশ্যই ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ওপর বিশ্লেষণ দক্ষতা ও ব্যাংক পরিচালনায় বাস্তবধর্মী জ্ঞান থাকতে হবে। প্রার্থীকে দেশে কিংবা বিদেশ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। আর বয়স ৬০ বছরের বেশি হতে পারবে না। চুক্তিভিত্তিক এই পদের মেয়াদ কত দিন হবে তা চূড়ান্ত করবে সরকার। আবার ৬২ বছরের পরে এ পদে দায়িত্ব পালন করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ চূড়ান্ত করতে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছে সরকার। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। এর সদস্য সচিব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক।

তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে একটি সুপারিশ পাঠিয়েছে সার্চ কমিটি। এর বেশি বলা সম্ভব নয়। দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হলে জানানো হবে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ পেতে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার নেয় নিয়োগ কমিটি। প্রাথমিক বাছাইয়ে থাকা আগ্রহী ১০ প্রার্থীকে ডাকা হয়। মোট ১২ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন এই পদে, যাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং তফসিলি ব্যাংকের একাধিক সাবেক কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকে বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারী দুজন ডেপুটি গভর্নর হলেন এসএম মনিরুজ্জামান ও আহমেদ জামাল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ-১৯৭২ অনুযায়ী এ পদে কতজন থাকবেন কিংবা কতজনকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে তা সুনির্দিষ্ট করা নেই। ডেপুটি গভর্নর পদমর্যাদায় বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসানকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সার্চ কমিটি ডেপুটি গভর্নর পদের জন্য যোগ্য কাউকে খুঁজে পায়নি। ফলে সুনির্দিষ্ট কাউকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেনি। পুনরায় কার্যক্রম হাতে নিতে অনুরোধ করেছে কমিটি। তবে এরপর দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি ঝুলে যায়। কিন্তু এরপর নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের আগের মেয়াদের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। নতুন সরকার গঠন হয়েছে প্রায় দুই মাস। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, আগামী বছরের মার্চে অবসরে যাবেন ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান। তিনি এরই মধ্যে পুনর্নিয়োগ পেতে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে মৌলবাদী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ইতোমধ্যে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময় খবর বেরিয়েছে।

এদিকে, ডেপুটি গভর্নর পদ শূন্য থাকলেও নির্বাহী পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক রেকর্ডসংখ্যক দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৫ জন নির্বাহী পরিচালক রয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। অথচ ১২-১৪ জন ডেপুটি গভর্নর থাকলেই পুরো কাজ সুষ্ঠুভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়। একইভাবে মহাব্যবস্থাপক পদেও অতিরিক্ত জনবল তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, ডেপুটি গভর্নর হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে কি না সেটি সরকারের বিষয়। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তেমন কিছু করার নেই।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads