• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
সচল হবে বন্ড মার্কেট

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

সচল হবে বন্ড মার্কেট

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৩ মার্চ ২০১৯

দেশের বন্ড মার্কেট সচল করতে শিগগির পদক্ষেপ নেবে সরকার। সূত্র বলছে, ব্যাংক খাতে নগদ টাকার টানাটানিতে বেড়ে যাচ্ছে সঙ্কট। চাহিদা মোতাবেক বিনিয়োগেও জোগান পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। বেড়ে যাচ্ছে সুদহার।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হচ্ছেন। দেশের ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার ওপর চাপ তৈরি করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। সেখানে আলোচনায় বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংক খাতে নানা কারণে সঙ্কট চলছে। বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। ব্যাংকগুলো স্বল্প মেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করছে। ফলে সমস্যা বাড়ছে। এখন সময় এসেছে সমাধান খুঁজে বের করার।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আমাদের পুঁজির জোগান বাড়াতে হবে। তাই বন্ড মার্কেট সচল করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাপারে বিভিন্ন ফোরামে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তবে কার্যকর কিছু হয়নি। আমরা আর বসে থাকতে চাই না।

জানা যায়, ব্যবসায়ীরা আগামী এপ্রিল মাসে বন্ড মার্কেট নিয়ে একটি অংশীজন বৈঠক করতে পারেন। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এজন্য একটি খসড়া তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে আমরা বিভিন্ন সময় বন্ড মার্কেট নিয়ে কথা বলেছি। এদিকে আমাদের যেতেই হবে। আর যত দ্রুত সম্ভব ততই ভালো। 

গত বছরের শুরু থেকে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। মাঝে নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এরপর আবার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

জানা যায়, গত মাসের শুরুতে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বৈঠক করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে। সেখানেও ব্যবসায়ীরা বন্ড মার্কেট কার্যকর করার বিষয়টি তুলে ধরেন। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি নির্ভর করছে সরকারের মনোভাবের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত এক দশক ধরে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৯-১০ অর্থবছরে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু সেটি কমতে কমতে নেমে এসেছে ৭ শতাংশের ঘরে। বিপরীতে বেড়েছে ঋণের প্রবৃদ্ধি। তবে যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ বিতরণ করায় ব্যাংক খাতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, সম্প্রতি আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের কারণে। এখানে বেশি সুদ থাকায় ব্যক্তিগত আমানতের সিংহভাগ যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে। তবে সরকার ব্যাংক খাতের সঙ্কট সামাল দিতে কয়েক দফা সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করবে বলে বলে জানা গেছে। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের হিসাব-নিকাশে সেখান থেকে পিছু হটে সরকার। এখন বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। 

ব্যাংকাররা বলছেন, আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ, ফারমার্স ব্যাংকের কেলেঙ্কারি, আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় সাধারণ আমানতকারীরা এখন ব্যাংক বিমুখ। ফলে সঞ্চয়পত্রে লাগামহীন বিনিয়োগ, পোস্ট অফিসভিত্তিক সঞ্চয় প্রকল্পে ঝুঁকছে তারা। অন্যদিকে রেকর্ড আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ডলার কিনতে গিয়ে হাতে থাকা আমানতের টাকাও বাংলাদেশ ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। ফলে বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, চলতি মাসের মধ্যে ব্যাংকগুলোতে অগ্রিম আমানত হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্য নামিয়ে আনতে হবে। এর ফলেও ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ টেনে ধরতে হচ্ছে। এসব কারণে সংশ্লিষ্ট সব মহল মনে করছে, অর্থায়নের বিকল্প উৎসগুলো সচল করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৯ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এক বছর পর ২০১০ সালের জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায়। সে হিসাবে বছরটিতে ব্যাংকে আমানত বাড়ে ৫৬ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১৬ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। অর্থবছরটিতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতের আমানত প্রবৃদ্ধিতে বিপর্যয় শুরু হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। বছরটিতে ব্যাংক খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ। এরপর গত অর্থবছরে আমানতের এ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট খেলাপি ঋণ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads