• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
নারীদের এসএমই ঋণ বিতরণ বেড়েছে

এসএমই লোন

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

পণ্য প্রদর্শনী শুরু শুক্রবার

নারীদের এসএমই ঋণ বিতরণ বেড়েছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ মার্চ ২০১৯

এসএমই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ কমেছে। তবে বেড়েছে নারী উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ বিতরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন এসএমই খাতের নারী উদ্যোক্তারা। ২০১৭ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৮২ কোটি টাকা।

এই প্রেক্ষাপটে দেশের উন্নয়নে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং নারী উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার বাড়াতে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শুক্রবার। চলবে রোববার পর্যন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজনে এই প্রদর্শনীতে ৫৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে এসএমই খাতের নারী উদ্যোক্তারা অংশ নেবেন।    

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের মতো ক্রমবিকাশমান অর্থনীতিতে জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে এসএমই খাতের গুরুত্ব অনেক। চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণে নারী-পুরুষের অর্থনৈতিক সমতা নিশ্চিত করতে এবং নারীর ক্ষমতায়নে এ খাতের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ এসএমই খাতের অন্তর্ভুক্ত। জিডিপি ও কর্মসংস্থানে রয়েছে বড় অবদান। গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এসএমই খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। বর্তমানে নারীরা সহজ শর্তে এসএমই ঋণ পাচ্ছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে।

এরই অংশ হিসেবে দেশে নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ ও সাহস জোগাতে তাদের নিয়ে আবারো মেলার আয়োজন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের নারী উদ্যোক্তা ইউনিট এর সার্বিক আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে। তাছাড়া আমরা টেকসই উন্নয়নে যেতে পারব না। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে বিশেষ এই মেলার আয়োজন। এর মাধ্যমে নারীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ তৈরি হবে। তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসার বাড়বে।

মেলার আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর শিশু একাডেমি চত্বরে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে প্রথম বারের মতো বিশেষ এই উদ্যোগ হাতে নেয়। পরে বিরতি দিয়ে মেলার আয়োজন চলে। ২০১৫ সাল থেকে নিয়মিতভাবে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এই মেলা করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে ঘিরে মূলত মেলার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করে থাকে সারা বিশ্ব। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের মেলায় অংশ নেওয়া ৫৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টি হচ্ছে ব্যাংক। আর ১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে স্টল থাকবে ৫৮টি। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একজন করে এসএমই নারী গ্রাহক, যারা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন, এমন উদ্যোক্তাদের পণ্য মেলায় প্রদর্শন করা হবে। আগ্রহী দর্শনার্থীরা চাইলে সেসব পণ্য কিনতে পারবেন অথবা বড় আকারে ক্রয়াদেশ দিতে পারবেন। এবার মেলার জন্য উদ্যোক্তা নির্বাচনে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির সঙ্গে জড়িতদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

নারীরা তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য, যেমন তৈরি পোশাক, জুতা, কসমেটিকস, ব্যাগ, খাবার সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, বুটিকস পণ্য, গহনা, পাটজাত পণ্যসহ বাহারি সামগ্রী নিয়ে অংশ নেবেন।

ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬। অর্থাৎ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করা খুবই কঠিন। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকার পরও এখানে দৃশ্যত তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে এ খাতে মনোযোগ দিয়েছে। এরই মধ্যে দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবহার পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবির চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এতে যোগ দেবেন বিশেষ অতিথি হিসেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক বছরে এসএমই খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনাসহ নির্দেশনা পরিপালন করছে কি-না তা কঠোরভাবে তদারকি করা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়লেও তা বেশি যাচ্ছে বাণিজ্যনির্ভর এসএমইতে। কিন্তু এতে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। টেকসই অর্থনীতির জন্য উৎপাদনশীল এসএমইতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হবে।

পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসএমই খাতে মোট ঋণ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে ঋণের পরিমাণ কমেছে। কেননা ২০১৭ সালের একই সময় ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা।

২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নারী উদ্যোক্তারা ঋণ পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৩ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। কিছুটা বেড়েছে নারী উদোক্তাদের ঋণ।

 

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads