• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
এডিআর ভারসাম্যের বাইরে ২০ ব্যাংক

লোগো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

এডিআর ভারসাম্যের বাইরে ২০ ব্যাংক

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১১ মার্চ ২০১৯

আমানত ও ঋণের ভারসাম্য আসছে না তফসিলি ব্যাংকগুলোতে। জানুয়ারিতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, ফেব্রুয়ারিতে পরিস্থিতি আবার নাজুক হয়েছে। আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কবলে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০টি। এসব ব্যাংক আমানত ঋণের (এডিআর) অনুপাতের ঊর্ধ্বে বিনিয়োগ করেছে।

মূলত আমানত সংগ্রহের ভাটা থেকে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আর আমানতের সুদহার কমে যাওয়া ও ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি গ্রাহকের আস্থার সঙ্কট থেকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।   

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান মোতাবেক, কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৮৩ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। আর ইসলামী ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। চলতি মাসের মধ্যে যেসব ব্যাংক এই সীমার ওপরে রয়েছে তাদের আমানত ঋণসীমা নামিয়ে আনার নির্দেশ ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এডিআর সমন্বয় করতে এক বছর তিন মাস সময় দিয়েছে ব্যাংকগুলোতে। সর্বশেষ ৬ মাস বাড়ানো হয় এই সময়সীমা। তবে এক সময় ৩২টি ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমার বাইরে ছিল।

জানা যায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এডিআর সমন্বয়ের সময় বাড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগ নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।  

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, এখনো বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমায় আসেনি। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের এডিআর সবচেয়ে বেশি। আর সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের এডিআর সীমার বাইরে রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে জনতা ব্যাংকও। মূলত সম্প্রতি দুটি বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে জনতা ব্যাংকের এডিআর পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে।  

আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের কারণে হঠাৎ ব্যাংকগুলোতে বড় তারল্য সঙ্কট তৈরি হয়। ব্যাংকগুলো আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে যেমন ব্যর্থ হচ্ছে, আবার অনুমোদিত ঋণের অর্থও পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে নগদ জমার হার (সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। কমানো হয়েছে রেপোর সুদহার। 

আমানত ও ঋণের সুদহারের টালমাটাল পরিস্থিতি থেকে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে। তবে সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য অনিশ্চয়তা-উৎকণ্ঠাও বিনিয়োগে ভাটার কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বিনিয়োগে ভাটার প্রকৃত কারণগুলো স্পষ্ট হবে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আাাগ্রাসী বিনিয়োগের কারণে ৩২টি ব্যাংক তার ঋণ আমানত সীমা লঙ্ঘন করে। যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেওয়ায় নগদ টাকার টানাটানিতে পড়ে যায় ওইসব ব্যাংক। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে এডিআর সমন্বয় করতে বলে। কিন্তু ব্যাংক মালিক ও এমডিদের প্রস্তাবে সেটি বাড়িয়ে আগামী মাস পর্যন্ত সময়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে সময় নির্ধারণ করলেও এডিআর আগামী ৬ মাসের মধ্যে কীভাবে কমিয়ে আনবে তার ব্যাপারে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে বলেছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিমাসের এডিআর চিত্র পরের মাসের দশ কার্যদিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে।

এদিকে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দিয়ে সেসব ঋণ এখন আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ব্যাংক খাতে এখন খেলাপি ঋণ ৯৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ শতাংশের বেশি। নগদ টাকার টানাটানিতে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদহার। আমানতকারীকে কোনো কোনো ব্যাংক ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে শুরু করে টাকার টানাটানি দূর করতে। আবার আমানতের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগের সুদহার ১৭/১৮ শতাংশ দাঁড়ায়।

জানতে চাইলে এখনো আগ্রাসী ব্যাংকের তালিকায় থাকা একটি ব্যাংকের এমডি বলেন, আমরা ঋণ বিতরণে এখন সতর্ক। অপরদিকে আমানত বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদহার ব্যাংকের আমানত প্রবাহকে টেনে ধরছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads