• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বিনিয়োগে বড় ছাড়

বিনিয়োগে বড় ছাড়

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

বিনিয়োগে বড় ছাড়

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৩ মার্চ ২০১৯

বেসরকারি খাতকে চাঙা করতে চায় সরকার। এজন্য বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এ লক্ষ্যে তাদের বড় ছাড় দেওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তারাই বড় আকারের রাজস্ব দিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। এজন্য তাদের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। 

বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে বেসরকারি খাত। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বেসরকারি খাতের অবদান অনেক। এসব বিবেচনা করে সরকার ও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি খাতকে আরো গতিশীল করতে চায়। তাই ব্যবসায়িক মন্দার কারণসহ নানা কারণে যেসব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে দেওয়া হবে নীতি সহায়তা। এর ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ যেমন নিয়মিত হবে, একই সঙ্গে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমবে। বাড়বে নগদ আদায়।

সূত্রগুলো বলছে, বিশেষ সুবিধায় পুনর্গঠিত ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেওয়া হবে। খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে কোনো ধরনের ডাউনপেমেন্ট লাগবে না। বর্তমানে কোনো বিনিয়োগকারী যৌক্তিক কারণেও ব্যবসায়িক লোকসানে পড়লে তার পক্ষে ব্যাংকের দায় নিয়ে ঘুড়ে দাঁড়ানো কঠিন। একদিকে ব্যাংকের উচ্চহারে কিস্তি পরিশোধ, অন্যদিকে শিল্পের পরিচালন ব্যয় নিয়ে দিশেহারা হতে হয় তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর মাধ্যমে ব্যাংক ও ব্যবসায়ী দুই পক্ষই লাভবান হবে।

ব্যাংক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখতকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশ এরই মধ্যে সরকারের কাছে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকে চাঙা করার পথ খুঁজতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি কমিটিও কাজ করছে। এই দুই কমিটির সুপারিশ মোতাবেক যেকোনো সময় বিনিয়োগবান্ধব এই নীতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। তবে ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে কোনো নির্দেশনা দেবে, নাকি সামগ্রিক ব্যাংক খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিতে বলা হবে, তা এখনো আলোচনার পর্যায়ে। আর এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো  থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির হিসাব মতে, দেশে প্রতিবছর ৮ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে আসছে। কর্মক্ষম জনসংখ্যার বড় একটি অংশ বেকার। সরকারিভাবে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের চাকরির সুযোগ তৈরি করা অসম্ভব। তাই ব্যবসায়ীদের পুনর্গঠিত ঋণ ১৫ বছর পর্যন্ত পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়ার জন্য চিন্তা চলছে। একই সঙ্গে দ্রুত যাতে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারে সেটি কীভাবে বন্ধ করা যায় তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি আশার আলো তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া সরকার দায়িত্ব নিয়ে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেশে ব্যবসাবান্ধব কার্যক্রম হাতে নিতে ও পরিচালনা করতে।

বর্তমানে কোনো ঋণ তিন মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সাব-স্ট্যান্ডার্ড, ছয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সন্দেহজনক এবং নয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে মন্দমানে খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হয়। প্রতি পর্যায়ে সময় বাড়িয়ে ছয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ সাব-স্ট্যান্ডার্ড, ১২ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ সন্দেহজনক এবং দেড় বছর মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তা মন্দমানে শ্রেণিকরণ করার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে বাড়তি সময় পাবে। এর আগে এক সময় এমন বিধান ছিল। পরে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইএমএফের পরামর্শে ২০১২ সালে নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়।

এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বলেন, দেশে দুই ধরনের ব্যবসায়ী শ্রেণি আছে। একটি ভালো শ্রেণির। দ্বিতীয়টি হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী। আমরা ভালো ও অসাধু ব্যবসায়ীদের এক কাতারে ফেলব না। ভালো ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে গিয়ে হোঁচট খেতে পারেন। তারা ঝুঁকি নেন ব্যবসা করতে। ঝুঁকি নিয়ে ঋণ নেন। কিন্তু সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। দেখতে হবে তারা ব্যবসার জন্য চেষ্টা করছেন কি না। তাই তাদের সব ধরনের সহায়তা ও ছাড় দেওয়া হবে। তাদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না। তারা যাতে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হবে। আমি এখানে কারো ব্যবসা বন্ধ করতে আসিনি।

তিনি আরো বলেন, তবে যারা অসাধু ব্যবসায়ী তাদের কোনো ছাড় নয়। শক্তভাবে ধরা হবে তাদের। মালয়েশিয়ায় ঋণ খেলাপিদের তালিকা করা হয়। তাদের তালিকা সরকার বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে থাকে। যাতে ঋণ খেলাপিরা কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা না পায়। এমনকি দেশের বাইরেও যেতে না পারেন। ব্যাংকের টাকা দেবেন না, আবার বিদেশে গিয়ে ফুর্তি করবেন, তা হবে না।  আমাদের এখানেও কঠোর হতে হবে অসাধুদের ব্যাপারে। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে থাকেন ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করার চিন্তা থেকে। 

সূত্র জানিয়েছে, ঋণ পুনঃতফসিলের নীতিমালায় শিথিলতা এনে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়ার একটি প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে একটি মেয়াদি ঋণ সর্বোচ্চ তিনবারে ৩৬ মাসের জন্য পুনঃতফসিল করতে পারে ব্যাংকগুলো। আর প্রথমবার পুনঃতফসিলের জন্য ডাউন পেমেন্ট হিসেবে মোট বকেয়ার ১০ শতাংশ, দ্বিতীয়বার ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়বার ৩০ শতাংশ দিতে হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads