• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বড় সাফল্যের পথে রূপালী ব্যাংক

লোগো রূপালী ব্যাংক

সংগৃহীত ছবি

ব্যাংক

বড় সাফল্যের পথে রূপালী ব্যাংক

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০১৯

ব্যাংক খাতে বিদ্যমান সঙ্কটের মধ্যে আর্থিক সূচকে টেকসই সাফল্য অর্জন করতে চায় রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি চলতি বছর সব আর্থিক সূচকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জনে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে জাতীয়করণের মাধ্যমে ব্যাংকটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। তারপর প্রায় ৫ দশক পার করেছে ব্যাংকটি। তবে এখনো পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হোঁচট খেতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে রূপালী ব্যাংক আমানত, ঋণ ও অগ্রিম, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে নগদ টাকায়, অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায়, পরিচালনা মুনাফা বাড়ানো, লোকসানি শাখার পরিমাণ কমিয়ে আনতে চায়।

জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান প্রধান রাজধানীর শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনে আলাপকালে প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৯ সালে আমরা আর্থিক সূচকে বড় সাফল্য অর্জন করতে চাই। সে লক্ষ্য এরই মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে লক্ষ্য জানিয়ে দিয়ে তা অর্জনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি বছর আমাদের আগের মতোই সুশাসন অগ্রাধিকার পাবে। সেই সঙ্গে আমানত ও ঋণ প্রবাহ বাড়ানো হবে। তবে ঋণ দেওয়া হবে যাচাই বাছাই করে। আশা করি, খেলাপি ঋণ ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ নেমে আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এই সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলকভাবে কম রূপালী ব্যাংকের। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে খেলাপি ঋণ কমেছে। ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। আর গত বছর কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। আর ২০১৯ সালে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সে হিসাবে বছর ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমাতে চায় এক হাজার ১০ কোটি টাকা।  বছর শেষে ব্যাংকটির আমানতের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৩৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছর শেষে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আমানত বাড়বে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৩১ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।

অপরদিকে, ২০১৭ সালে ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। গত বছর বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। চলতি বছর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ২৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৯ সালে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে। ঋণ নিয়ে গ্রাহকরা শিল্প ও বাণিজ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে পারবেন। ফলে বাড়বে কর্মসংস্থান। সচল হবে অর্থনীতি।  রূপালী ব্যাংকের বর্তমানে লোকসানি শাখার সংখ্যা ২টি। ২০১৯ শেষে একটি শাখাও আর লোকসানে চলবে না। ২০১৭ সালে লোকসানি শাখা ছিল ৩৩টি। তার আগের বছর ৮৭টি শাখা লোকসানে চলেছে। কিন্তু বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে শাখার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, অপরদিকে কমেছে লোকসানি শাখা। ব্যাংকটির বর্তমানে সারা দেশে মোট শাখা রয়েছে ৫৬৮টি। ২০১৯ সালে ১১টি শাখা খুলতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। বাণিজ্যিক কার্যক্রম গতিশীল করে চলতি বছর ৪০০ কোটি টাকা পরিচালনা মুনাফার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে, গত বছর যার পরিমাণ ছিল ৩৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩৩ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা বাড়াতে চায় এ বছর। ব্যাংকটির সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছুটা হোঁচট খেতে হচ্ছে ব্যাংকটিকে। বর্তমানে এর পরিশোধিত মূলধন ৩৭৬ কোটি টাকা, যা তুলনামূলকভাবে কম। দুর্বল মূলধন ভিত্তির কারণে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্য করতে অনাগ্রহ দেখিয়ে আসছে। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে কয়েক দফা চিঠি দিলেও কোনো অগ্রগতি নেই। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন ৭০০ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক ২০১৬ সালে লোকসানে চলে যায়। ওই বছর ৭৯ কোটি টাকা লোকসান করে এ ব্যাংক। তবে ২০১৭ সালে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ায় আবার। পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জোরাল নেতৃত্বে ২০১৭ সালে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। রূপালী ব্যাংকে সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে, জবাবদিহি আছে। ব্যাংকের ৯০ শতাংশ মালিকানা সরকারের হলেও ১০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ মানুষের রয়েছে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads