• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
আগুনঝুঁকিতে ব্যাংকের ৬৫০ শাখা

আগুনঝুঁকিতে ব্যাংকের ৬৫০ শাখা

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

আগুনঝুঁকিতে ব্যাংকের ৬৫০ শাখা

# নীতিমালা থাকলেও তদারকি নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের # উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে ২৭৫ শাখা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ৩০ মার্চ ২০১৯

আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সাড়ে ৬০০ শাখা। এর মধ্যে ২৭৫টি শাখা রয়েছে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে। এ ঝুঁকিতে রয়েছে ৫টি দেশি ও বিদেশি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ও। যদিও তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ আগুনের ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে সে নির্দেশ কতটা কার্যকর হয়েছে গত কয়েক বছরে তা তদারক করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনায় ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন ৭০ জন। গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রিশ তলা ভবনের ১৪ তলায় আগুনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়ে। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক ফায়ার সার্ভিসকে চিঠি দিয়ে একটি উপকেন্দ্র স্থাপনের অনুরোধ করে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ উপকেন্দ্র স্থাপন না করলেও মতিঝিলে একটি ইউনিটকে নিয়োজিত করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ৭শ শাখা পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে ৬৪৭টি শাখার অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা দুর্বল দেখতে পেয়েছে তারা। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের মতে, আগুন লাগলে এসব শাখা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া শাখাগুলোর মধ্যে মাত্র ৫০টি শাখায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সন্তোষজনক পেয়েছে কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক লি., বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার প্রধান কার্যালয়গুলো আগুনের ঝুঁকিতে। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে ব্যাংকটির ২৯টি শাখা আগুনের ঝুঁকিতে। সারা দেশে ব্যাংকটির প্রায় এক হাজার ২০০ শাখা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি শাখা উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে। অন্যদিকে জনতা ব্যাংকের ১৬টি শাখা উচ্চ ঝুঁকিতে। আর এই ব্যাংকের ৩৮টি শাখা ঝুঁকিতে রয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকের ১৭টি শাখা আগুনের ঝুঁকির মধ্যে, যার ৫টি অতি ঝুঁকিতে। রূপালী ব্যাংকের ৭টি শাখা উচ্চমাত্রার ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ব্যাংকের ২১টি শাখা রয়েছে ঝুঁকিতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলো প্রযুক্তিনির্ভর সেবার দিকে ঝুঁকছে। আর এজন্য তাদের ডেটা সেন্টার ব্যবস্থাপনা করতে হয়। অনেক ব্যাংকের ডেটা সেন্টারগুলো যেসব স্থানে রাখা রয়েছে সেসব স্থানও ঝুঁকিতে। ফলে এসব ভবনে যদি আগুনের ঘটনা ঘটে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। এমনকি ব্যাংকের গ্রাহকদের তথ্যও নষ্ট হতে পারে। ফলে আমানতকারীরা যেমন তাদের আমানত ফেরত পাবেন না তেমনি ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের তথ্যও নষ্ট হয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, পরিদর্শনকালে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বসহকারে দেখা হয়েছে। সেগুলো হলো, ব্যাংকের ভবন কাঠামো, বেজমেন্ট ও সেমি-বেজমেন্ট, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, সিঁড়ি, জরুরি নির্গমন, লিফট, নিরাপদ লবি, জেনারেটর, প্রবেশ পথ, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, জরুরি সতর্কীকরণ ব্যবস্থা। এসব ব্যবস্থার বেশিরভাগই দুবর্ল পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নীতিমালা রয়েছে ব্যাংকের শাখা স্থাপনে। সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। শুরুতে এদিকে মনোযোগ দিলেও পরে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় আর বিনিয়োগ করতে চায় না ব্যাংকগুলো। বরং বিলাসবহুল যানবাহন ও আড়ম্বরপূর্ণ সাজসজ্জায় তাদের ব্যয় অব্যাহত থাকে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, পুরো রাজধানীর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। হাসপাতাল থেকে বিপণিবিতান— সব ভবনই ঝুঁকিতে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের অধিক সংখ্যক শাখা সাধারণ ঝুঁকি এবং উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া যমুনা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকের বেশ কিছু শাখা আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম আলাপকালে বলেন, আগুন একটি উদ্বেগের কারণ। শুধু ব্যাংকপাড়ার জন্য নয়, রাজধানীতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় আমাদের মনোযোগ দিতেই হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিভিন্ন নির্দেশনায় বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। নতুন করে কিছু করার দরকার পড়লে অবশ্যই করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads