বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, দয়া করে সঞ্চয়পত্রের দিকে হাত দেবেন না। কারণ এ সঞ্চয়পত্র দেশের লাখ লাখ মধ্যবিত্ত পরিবারের শেষ সম্বল। তারা এই সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে উপকৃত হয়।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০১৯-এর দ্বিতীয় দিন ‘আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি ও মান উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। ব্যাংক খাতে বিদ্যমান তারল্য সঙ্কট কাটাতে ব্যাংকারদেরও চাপ রয়েছে এটি কমানোর। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা ড. এস কে সুর চৌধুরী। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) পরিচালক শাহ মো. আহসান, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রাইম ব্যাংকের এএমডি তাবারক হোসেন ভূঞা ও আইআইডিএফসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার ভূইয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে ফরাসউদ্দিন বলেন, কোনো দেশে যদি তিনটি ব্যাংক থাকে এবং এর শাখার সংখ্যা যদি ৬০০টি হয়, অন্য কোনো দেশে ১০টি ব্যাংকের শাখা যদি ২০০টি হয়, তাহলে কাদের শাখার সংখ্যা বেশি একবার চিন্তা করে দেখুন। সুতরাং এই কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশে ব্যাংকের কথা চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছে বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু ব্যাংক নয়, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হোক পুঁজিবাজার। বিশ্বের কোথাও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা নেই। অন্যান্য দেশে এ অর্থায়ন হয় পুঁজিবাজার থেকে। আমাদের দেশেও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন হোক পুঁজিবাজার থেকে। এতে ব্যাংকনির্ভরতা কমবে, অপরদিকে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে যে ঝুঁকিতে আছে তা থেকে রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন, ১৯৯২-৯৩ সালে সরকার কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেছিল দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য। সেটা দূরদৃষ্টিসুলভ কাজ হয়নি। আমি সরকারকে অনুরোধ করব এ ধরনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মনোযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য বন্ড মার্কেট উন্নয়ন করতে হবে, করপোরেট বন্ডের বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।
সাবেক এই গভর্নর আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিমাণ অবদান রাখছে তার স্বীকৃতি তেমন দেওয়া হয় না। তবে আমানত ঋণ হার (এডি রেশিও) নিয়ে যে নিয়ম রয়েছে তা পালন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো এক সময় বাপ-দাদার নাম ভুলে যাওয়ার অবস্থা হতো। কিন্তু এখন এডি রেশিওর নিয়ম পরিপালন না করলেও কোনো সমস্যা হয় না। কিছু দিন আগে এডি রেশিও দশমিক ৭ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫-এ নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপরও ২৫টি ব্যাংক তা পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানেও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছে।