• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
কমে গেছে ঋণপ্রবাহ

বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

কমে গেছে ঋণপ্রবাহ

# বেসরকারি ঋণে ভীষণ খরা # ব্যাংকগুলোও ঋণ দিতে পারছে না # সঙ্কটকে বাড়িয়ে তুলছে উচ্চ সুদ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়। ধারণা করা হচ্ছিল, নির্বাচনের পর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরায় গতি ফিরে পাবে। বাড়বে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য। তবে পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা দেছে, নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় দেশ পরিচালনায় এলেও বিনিয়োগ বাড়ছে না। ফলে কমে গেছে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, ধারাবাহিকভাবে কমছে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ। সর্বশেষ তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত সাড়ে ৪ বছরের মধ্যে এই প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের পর বেসরকারি ঋণের এত কম প্রবৃদ্ধি আর হয়নি। জানুয়ারি শেষে এই হার ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে কমে দাঁড়িয়েছিল ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি বৃদ্ধিসহ তিন কারণে এই খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অন্য দুই কারণ হলো তারল্য সঙ্কট এবং ঋণের উচ্চ সুদহার।

২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে ঋণচাহিদা ব্যাপক বাড়তে থাকায় তারল্যের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। এক অঙ্কের নিচে নেমে আসা ঋণের সুদহার বেড়ে দুই অঙ্কে উঠে যায়। অনেক ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি সুদে আমানত নিতে শুরু করে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ব্যাংক খাতের এডিআর কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে আবার ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি গত বছরের ২০ জুন এক বৈঠক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ এবং ৬ শতাংশ সুদে আমানত নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

এরপর থেকে আশানুরূপ হারে আমানত পাচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক। বর্তমানে যেসব ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ওপরে রয়েছে, তারা নতুন করে ঋণ বিতরণ করতে পারছিল না। এডিআর যেন বেড়ে না যায় এ জন্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলোও সতর্কতার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করতে শুরু করে। যদিও কয়েক দফা বাড়ানোর পর এডিআর সমন্বয় করতে অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ব্যাপক চাপে পড়ে ব্যাংকগুলো আগের মতো আর ঋণ বাড়াতে পারছে না। ফলে কমে গেছে ঋণপ্রবাহ।

অন্যদিকে জানুয়ারিতে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু ফেব্রুয়ারি শেষে হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণের প্রবাহ সামনের দিনগুলোতে আরো কমবে বলে আমি মনে করি। কারণ বিদ্যমান সঙ্কট সমাধানে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সমস্যাগুলোকে কৃত্রিমভাবে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর কাছে টাকা না থাকলে কীভাবে ঋণ দেবে। আমানত বাড়াতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সূত্র বলছে, আমানত বাড়াতে না পেরে আবার আমানতের সুদহার বাড়তে শুরু করেছে, যা নতুন তরে উদ্বেগ তৈরি করছে।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন এবং বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ। বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’ রিপোর্ট অনুসারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বাংলাদেশে অন্যতম সমস্যা হলো পুঁজির সহজলভ্যতা নেই। এর মানে হলো— সহজে, কম খরচে বিনিয়োগের জন্য পুঁজি মেলে না। ব্যাংকগুলো ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। এ কারণে এখানে নতুন বিনিয়োগ আসছে না।

গত সপ্তাহে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দেশে শিল্পায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংকঋণ। ব্যাংকের ব্যাপারটা আমরা দেখছি। কয়েক দিন আগে আমরা বসেছিলাম, কীভাবে ব্যাংকের সুদের হার কমানো যায়। এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হলো। পাশাপাশি আমার অনুরোধ থাকবে যারাই এই ঋণটা নেবেন আপনারাও যদি টাকাটা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেন বা সুদটা পরিশোধ করেন, তবে ব্যাংকগুলো সচল থাকে। তখন কিন্তু সুদের হার কমানোটা খুব একটা কঠিন হবে না।’

ঋণের উচ্চ সুদহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি। একবার উদ্যোগ নিলাম সঙ্গে সঙ্গে কথাও বললাম। বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধাও করে দিলাম।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৭০ ভাগ অর্থ সরকারি ব্যাংকে আর ৩০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হতো। সেটি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়। এর বাইরে আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তাদের। ব্যাংকের মালিকরা বললেন, আমরা সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব। কিন্তু তা হয়নি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads