• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
অস্তিত্বহীন ঋণের খোঁজ

লোগো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

পরিদর্শনে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

অস্তিত্বহীন ঋণের খোঁজ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৯ এপ্রিল ২০১৯

অস্তিত্বহীন ঋণের সন্ধানে এবার মাঠে নামছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ অনুসন্ধানে মাঠে নামছে। পরিদর্শনে গঠন করা হয়েছে বিশেষ টিম, যারা ব্যাংকগুলোর বড় আকারের ঋণের তথ্য পর্যালোচনা করবে। একই সঙ্গে এই টিম ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক চিত্র তুলে নিয়ে আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১০ লাখ কোটি টাকা। বিপরীতে ঋণের পরিমাণ সাড়ে আট লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ দেড় লাখ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ এই খেলাপি ঋণের মধ্যে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। যার বড় একটি অংশ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে যোগসাজশে এসব ঋণ বের করে নিয়ে গেছে একটি অসাধু চক্র। এর সঙ্গে ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তারাও জড়িত।

জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকিং খাতের আর্থিক চিত্র জানতে বিশেষ নিরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ব্যাংকিং খাতের গত তিন বছরের ঋণ পর্যালোচনা করতে শুরু করেছেন। একই সঙ্গে বড় আকারের ঋণ কারা নিয়েছেন এবং সেসব ঋণ ব্যাংকিং নিয়মনীতি পরিপালন করে দেওয়া হয়েছে কি-না তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর এই উদ্যোগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের চৌকস কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষ পরিদর্শন শুরু করেছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামেও চলবে এই পরিদর্শন কার্যক্রম।   

সূত্র বলছে, অনেক ঋণ যেমন ভুয়া নথি দিয়ে বের করে নেওয়া হয়েছে; আবার অনেকে ব্যবসায়ে লোকসানের কারণে গুটিয়ে নিয়েছেন তার ঠিকানা। ফলে সেসব ঋণ বেনামি ও অস্তিত্বহীন হয়ে গেছে। তৈরি পোশাক ও পরিবহন খাতে এ ধরনের বিপুল পরিমাণ ঋণ রয়েছে।  

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গাজীপুরের তৈরি পোশাক কারখানা সম্প্রসারণের জন্য দুই যুগ আগে তিন কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তানভীর আহমেদ নামের সেই ব্যবসায়ী একটি সরকারি ব্যাংক থেকে এই ঋণ নেন। প্রথম দিকে ব্যবসা ভালোই চলছিল। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক ঠিকমতো পণ্য সরবরাহ করতেন। কিন্তু সমস্যা সামনে আসতে থাকে। একসময় তিনি ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হন। নির্ধারিত সময়ের পর পণ্য বিদেশে পাঠানোর পর ক্রেতারা তা কিনতে অস্বীকৃতি জানান। এভাবে লোকসানে চলে যান। ইতোমধ্যে ব্যাংকের খাতায় ঋণখেলাপি হিসেবে তার নাম উঠে গেছে। কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাংক। এই ব্যবসায়ীর মতো শত শত উদ্যোক্তা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকের খাতায় অস্তিত্বহীন বা ঠিকানাহীন ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। এরও বেশিরভাগ আদায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এসব ঋণ আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত মামলা ঝুলে আছে। যেগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে, তার একটি বড় অংশই ঠিকানাহীন বা অস্তিত্বহীন ঋণ। এসব ঋণখেলাপিকে আইনগতভাবে আটকাতে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। কারণ এসব ঋণের বিপরীতে যেসব জামানত রাখা হয়েছিল তার বেশির ভাগই জাল, খাসজমি বা অতিমূল্যায়িত করে দেখানো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরল ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংকের পুরনো ঋণ হালনাগাদ করা গেলে হয়তো অস্তিত্বহীন ঋণখেলাপিরা সামনে আসবে। তারা হয়তো দায় পরিশোধ করে রেহাই পেতে চাইবেন। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক খাতের অভিভাবক। দেশে ৫৯টি ব্যাংক আছে। রয়েছে ৩০টির বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যাদের প্রায় ১১ হাজার শাখা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত। আর বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠান নজরদারি ও তদারকি করে। সব সময়ই আমাদের পরিদর্শন চলে। তারই অংশ হিসেবে পরিদর্শন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, অনুসন্ধানে যেসব ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে চলছে না, তারও একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হবে। কারণ সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার বিষয়টি সব সময় আলোচিত হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads