• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
এক ছাতার নিচে আসছে ক্ষুদ্রঋণ

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

এক ছাতার নিচে আসছে ক্ষুদ্রঋণ

দরিদ্ররা পাবেন ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০১৯

এক ছাতার নিচে আসছে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে সমন্বয় আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে এমন নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এরপর সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেছে। তবে প্রস্তাবিত নীতিমালার আলোকে এই খাতে শৃঙ্খলা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি বিশদ নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। জাতীয় সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা ২০১৯-এর খসড়া বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে যাবে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে। সেখানে অনুমোদন পেলে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে নীতিমালাটি। তবে এটি সরকারের বিদ্যমান মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। সুবিধাভোগীদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে কর্মদল গঠন করা হবে। বর্তমানে ৯টি সরকারি সংস্থা সারা দেশে এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গতকাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ও তাদের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম এক ছাতার নিচে আনতে চায়। এজন্য একটি নীতিমালার খসড়া করা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত হলে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরবে। বর্তমানে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে সেগুলো দূর হবে। খসড়ার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সংক্রান্ত একটি ধারণাপত্র তৈরি করে। সেটি একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগের মেয়াদে মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গেলে উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপনার পর প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের নির্দেশ দেন। এ লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের শহর থেকে প্রতিটি গ্রামে সুসংগঠিত, টেকসই আত্মনির্ভরশীল, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত ও ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা গড়ে তুলতে চিন্তা করা হচ্ছে। এছাড়া ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে যাতে কোনো ধরনের দ্বৈততা না থাকে সেটি বিবেচনায় নিয়েছে সরকার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে আমার গ্রাম-আমার শহর অঙ্গীকার করে। নির্বাচনের এই প্রতিশ্রুতি অর্জনে সহায়ক হবে সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা। জানা গেছে, সরকারের হয়ে বর্তমানে ৯টি সংস্থা সারা দেশে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেগুলো হলো- সমাজসেবা অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, মহিলাবিষয়ক অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ড-বিআরডিবি, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।

সূত্রমতে, এসব দফতরের সঞ্চয়, ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের ঋণ, ঋণের কিস্তি আদায়, সার্ভিস চার্জ, ঋণের পরিমাণ ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ভিন্নতা রয়েছে। সমন্বিত নীতিমালার মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে দ্বৈততা পরিহার করা হবে। এর মাধ্যমে সুবিধাভোগীর পরিধি বাড়বে। এছাড়া ঋণের পরিমাণ, সুদহার ও সার্ভিস চার্জ একই হারে আরোপ করা যাবে। এর আওতায় একটি পরিবার পেশা নির্বাচন করে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে। 

জানা গেছে, ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার প্রতিটি গ্রামে সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে চায়। এর টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি গ্রামকে দারিদ্র্য ও ভিক্ষুকমুক্ত করতে উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আরো ১১টি সুবিধা ও লক্ষ্য সামনে রাখা হয়েছে এই নীতিমালার আওতায়। মানুষকে সুবিধা দিয়ে তাদের উৎপাদনশীলতা কার্যক্রমে জড়িত করে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যেমন হবে, একই সঙ্গে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন বাড়বে। নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার তৈরি হবে।

জানা গেছে, নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি বিভাগের একটি উপজেলায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে উপজেলা নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে সরকার। জরিপ পরিচালনা করে সুবিধাভোগী পরিবারগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হবে। সেগুলা হলো অতিদরিদ্র, দরিদ্র ও অসচ্ছল। যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় এক লাখ টাকার নিচে সেসব পরিবার অতিদরিদ্র ক্যাটাগরিতে শনাক্ত হবে। এক লাখ টাকার ওপরে কিন্তু দুই লাখ টাকার নিচে যেসব পরিবারের আয় সেসব পরিবার দরিদ্র ক্যাটাগরি অর্থাৎ খ শ্রেণিতে পড়বে। আর গ শ্রেণিতে অসচ্ছল পড়বে সেসব পরিবার যাদের আয় দুই লাখ টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে। আর মূলধন পর্যাপ্ততা বিবেচনায় অতিদরিদ্র্যরা ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। দারিদ্ররাও ঋণ পাবেন। কিন্তু কেবল অতিরিক্ত মূলধন পেলে অসচ্ছলরা ঋণ পাবেন। অন্যথায় অতিদরিদ্র ও দরিদ্রদের মধ্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সীমিত থাকবে।

শৃঙ্খলার সঙ্গে এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যন্ত থাকবে কমিটি। জাতীয়, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও গ্রামপর্যায়ে কর্মদল কমিটি গঠন করা হবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি গ্রামে ৩০০ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে। তাদের মধ্যে ৫০টি পরিবারের ৫০ জন হাঁস-মুরগি পালন করতে চান। কিন্তু প্রাণিসম্পদ বিভাগ ৩০ জনের জন্য ঋণ দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ৩০ পরিবারকে ঋণ দেওয়া হবে। বাকি ২০ পরিবার সরকারের অন্য সংস্থা থেকে একই ধরনের ঋণ পাবে।  

জাতীয় পর্যায়ে সরকারের ৯টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে নিয়ে বিশেষ উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে। অর্থমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, এলজিআরডি মন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী থাকবে জাতীয় কমিটিতে। কোনো মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী না থাকলে প্রতিমন্ত্রী প্রতিনিধিত্ব করবেন। জাতীয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি কার্যক্রম বাস্তবায়নে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেবে। বছরে কমপক্ষে একবার কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের নিয়ে হবে জাতীয় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক কমিটি। এর বাইরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এই কমিটিতে থাকবেন। জাতীয় এই কমিটি হবে ১৩ সদস্য নিয়ে।

ঋণগ্রহীতাকে ১২টি কিস্তিতে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তবে প্রথম দুটি কিস্তির সময় গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে বিচেনা করা হবে। কিছু ক্ষেত্রে ৬ মাস পর থেকে কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। ঋণের লভ্যাংশ সংশ্লিষ্ট গ্রামের কর্মদলের মধ্যে বণ্টন করা হবে। ঋণগ্রহীতা কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে কমিটি সভায় করণীয় ঠিক করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads