• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
টেকসই অবস্থানে রূপালী ব্যাংক

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ব্যাংক

টেকসই অবস্থানে রূপালী ব্যাংক

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৫ মে ২০১৯

গত তিন বছর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে রূপালী ব্যাংক। অথচ এই সময়ে ব্যাংক খাতে নানা সংকট গেছে। ব্যাংক খাতের বিদ্যমান সংকটেও আমানত, বিনিয়োগ, আমদনি-রপ্তানি বাণিজ্য, মোট সম্পদ, পরিচালনা মুনাফা, নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি আয়, সম্পদের বিপরীতে আয়সহ প্রায় সব সূচকে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ব্যাংকটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও পরিচালনা পর্ষদের নীতি সহায়তায় ব্যাংকটি এ অগ্রগতি অর্জন করেছে। আগামী বছরগুলোতে আরো সামনে এগিয়ে যেতে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া লোগোতে কার্যক্রম শুরু করা রূপালী ব্যাংক। এছাড়া গত বছর সবচেয়ে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে এই ব্যাংকের মাধ্যমে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে যেসব ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি সেসব ঋণ ছিল গুগগত মানের। ফলে নতুন করে বিতরণ করা ঋণগুলো খেলাপি হয়নি। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায়, মূলধন সংরক্ষণের হার, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারণ, সুশাসনে উন্নতি, গ্রাহকসেবার মানের উন্নয়ন, ব্যাংকের ডিজিটাল কার্যক্রমে সন্তোষজনক অগ্রগতি করেছে। কমেছে লোকসানি শাখাও।

সাম্প্রতিক আর্থিক সূচক বিষয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান প্রধান গত বৃহস্পতিবার তার দপ্তরে আলাপকালে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে এর গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি এক লাখ। এই বড় পরিবার নিয়ে আমরা যেমন সন্তুষ্ট, আবার তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমাদের চেষ্টা রয়েছে সার্বক্ষণিক। গড়ে তোলা হয়েছে বড় নেটওয়ার্ক। শাখা, এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিং, ডিজিটাল কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা অত্যাধুনিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি, যা অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক চালু করতে পারেনি।  মুনাফা শুধু আমাদের লক্ষ্য নয়। আমরা আগামীতে গ্রাহকদের আরো অগ্রাধিকার দেব। রূপালী ব্যাংক হবে জনমানুষের ব্যাংক।  

পেশাদার এই ব্যাংকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ব্যাংকটির নামকরণ করে গেছেন। এর লোগোও তারই নির্বাচন করা। এরপর অনেকবার লোগোটি পরিবর্তন করা হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির পিতার বিশেষ উপহারের লোগোটি আবার ফিরিয়ে নিয়েছি। আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নির্মাণে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা আরো অবদান রাখতে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আমরা বিজ্ঞ একজন অর্থমন্ত্রীকে পেয়েছি, যার বিচক্ষণ পরিকল্পনায় এরই মধ্যে আর্থিক সূচকে ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে। তার সঙ্গে এগিয়ে যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। 

আতাউর রহমান প্রধান বলেন, আগামী বছর আমরা জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করব। বছরটি পুরো জাতির জন্য বিশেষ বছর। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার ৫ দশক পূর্ণ করব। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতির পথে। রূপালী ব্যাংক এই দুটি বছরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বড় সাফল্য অর্জন করতে চায়। 

রূপালী ব্যাংকের এমডি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং কার্যকর ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য করপোরেট সুশাসন খুবই জরুরি। আমাদের ব্যাংকে সব স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করছি আমরা। এখানে পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম ও দায়িত্ব মেনে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। পর্ষদ ব্যাংকটির নেতৃত্ব দেয় এবং দিকনির্দেশনা দেয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে, নীতি ও কৌশল চূড়ান্ত করে। তবে এসব বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি স্বাধীন।

আর্থিক চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রূপালী ব্যাংক বর্তমানে মজবুত অবস্থানে। ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। চলতি বছর শেষে আমানতের ৪২ হাজার ৫২১ কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ ২০১৬ সালে এ ব্যাংকের আমানত ছিল মাত্র ২৭ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত তিন বছরে গ্রাহকের আমানত বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। এর মধ্যেও ব্যাংকটির আমানত বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে মোট ঋণ ও অগ্রিম দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে ঋণ ও অগ্রিম বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়লেও ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ কমছে রূপালী ব্যাংকের। চলতি বছর ব্যাংকটি খেলাপি ঋণের হার ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়।

২০১৬ সালে ব্যাংকটির গ্রাহক সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৬ লাখ। সেটি বেড়ে তিন বছরে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি এক লাখ। এর মধ্যে চালু করা হয়েছে কোর ব্যাংকিং সলিউশনস। ফলে প্রত্যেকটি শাখা এখন অনলাইনের আওতায়, যা আর কোনো সরকারি ব্যাংক চালু করতে পারেনি। ২০১৬ সালে লোকসানি শাখা ছিল ১৪৪টি। সেটি এখন নেমে এসেছে আটটিতে। জানা গেছে, ব্যাংকটি এক কোটি ৩৬ লাখ মায়ের হাতে উপবৃত্তির টাকা মোবাইল হিসাবের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে রূপালী ব্যাংকের দায়িত্ব নেন মো. আতাউর রহমান প্রধান। তার নেতৃত্বে ২০১৬ সালের লোকসান থেকে ফিরে ২০১৭ সালে ৫৩৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। আর্থিক খাতের সংকটে ২০১৮ সালে মুনাফা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৩৬৭ কোটি টাকা। আর চলতি বছর ব্যাংকটি ৪০০ কোটি টাকা মুনাফা করতে চায়। ২০১৬ সালে ব্যাংকটি ৭৯ কোটি টাকা লোকসান করে।

জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে, জবাবদিহিতা আছে রূপালী ব্যাংকের। কারণ এ ব্যাংকের ৯০ শতাংশ মালিকানা সরকারের হলেও ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ মানুষের। কাজেই দৌত জবাবদিহির জায়গা রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে। সেই দিক বিবেচনা করলেও রূপালী ব্যাংক একটি ভালো জায়গায় এসেছে। ব্যাংকটির শেয়ারের দামও স্থিতিশীল। শেয়ারপ্রতি গ্রাহককে বড় আকারের লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাংক। 

ব্যাংকের সব ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত জবাবদিহি আছে। সুশাসন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই জরুরি। আগে কিছু দুর্বল দিক ছিল। সেগুলো কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। সরকার আগামী পাঁচ বছরে অর্থনীতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে চায়। বাড়াতে চায় সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ। মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে এরই মধ্যে রেকর্ড অর্জন করেছে। এটি দুই অঙ্কের ঘরে নিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা চলছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে এসব ক্ষেত্রে রূপালী ব্যাংক সরকারের সঙ্গে আরো কাছাকাছি থাকতে চায়। আগামী দিনে ব্যাংকটিকে এ খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চান এটি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads