• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ব্যাংকের ঋণ এখন গলার কাঁটা

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

ব্যাংকের ঋণ এখন গলার কাঁটা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৩ জুন ২০১৯

ব্যাংকিং খাতে মুনাফার বড় উৎস হচ্ছ ঋণ। গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিয়ে ঋণ বিতরণ করে থাকে ব্যাংকগুলো। আমানতের থেকে ঋণের সুদহার বেশি থাকে। ঋণ ও আমানতের সুদ হারের পার্থক্যকে ব্যাংকিং ভাষায় স্প্রেড বলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংকিং খাতে মোট ঝুঁকির ৮৮ শতাংশই তৈরি হচ্ছে ঋণের কারণে। সর্বশেষ হিসাবমতে, ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় নয় লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। মূলত ঋণ বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতির কারণে এমনটি হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামীতে ব্যাংকিং খাত আরো সংকটে পড়বে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতের সম্পদ ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় কম। ২০১৭ সালে ব্যাংকিং খাতে সম্পদ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। মূলত ব্যাংকিং খাতের টানাটানি থেকে ব্যাংকগুলোর সম্পদ প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫৬৬ বিলিয়ন টাকা। জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে বাজার ঝুঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আর পরিচালনগত ঝুঁকির কারণে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। মোট ঋণ ঝুঁকির ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ হচ্ছে অফ ব্যালেন্সশিট হিসাব থেকে। আর ১২ দশমিক ৬ শতাংশ অফ ব্যালেন্সশিট সূচক থেকে ব্যাংকের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের মূলধন ভিত্তিও দুর্বল হয়েছে ২০১৮ সালে। মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মূলধনের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের থেকে ৩৩ বেসিস পয়েন্ট কম।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতির আলোকে ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকি বিবেচনায় মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। বর্তমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যা বেশি, সেই পরিমাণ অর্থ মূলধন রাখতে হয়। তবে সম্প্রতি ন্যূনতম মূলধন হাজার কোটি টাকা করার চিন্তা চলছে। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ হিসাব করে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর এক লাখ সাত কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল। ১০ ব্যাংকে বড় অঙ্কের ঘাটতি থাকলেও অনেক ব্যাংক নতুন নিয়মে সংরক্ষণ করেছে। এতে করে ব্যাংক খাতে সংরক্ষিত মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের যা ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধনের পরিমাণ ছিল এক লাখ এক হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা, যা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ব্যাংকিং খাতে ঋণের কারণে মোট ঝুঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর বাজারভিত্তিক ঝুঁকির পরিমাণ ৩১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর পরিচালনগত ঝুঁকির পরিমাণ প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, ঋণের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ৫টি ব্যাংক। ঋণ ঝুঁকির ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ ওই ৫ ব্যাংকের কারণে। আর দশ ব্যাংকের ঋণ ঝুঁকির পরিমাণ ৪০ দশমিক ১ শতাংশ। অপরদিকে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের ২০ দশমিক ৮ শতাংশ। আর ১০ ব্যাংকের কারণে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাছবিচার না করা আর জালিয়াতির কারণে এই অবনতি। এটি আগামীতে আরো অবনতি হবে। ব্যাংকিং খাত ভালোভাবে চলছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতই একটি বড় ঝুঁকি।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। খেলাপি ঋণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৭ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট খেলাপি ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং খাত নানা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। তবে বড় অবনতি হয়েছে সেটা বলা যাবে না। তার মতে, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট থেকে নানা নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকগুলো নীতি সহায়তা দিয়ে গেছি।

খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে ধাক্কা লাগছে মুনাফায়। আর আশানুরূপভাবে মুনাফা করতে না পারায় মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১০ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। তিন মাস আগে নয় ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। নতুন করে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads