• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সংকটেই নষ্ট হচ্ছে সম্পদ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ব্যাংক

সংকটেই নষ্ট হচ্ছে সম্পদ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৯ জুন ২০১৯

সংকট থেকে টান পড়েছে ব্যাংকের সম্পদ। কমে গেছে সম্পদ প্রবৃদ্ধির হার। নানাবিধ সংকট ব্যাংকের সম্পদ খেয়ে ফেলছে। দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য উপস্থাপন করেছে। তফসিলি ব্যাংকগুলোর ২০১৮ সালের আর্থিক সূচক পর্যালোচনা করে এ চিত্র পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।  

অপরদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছর ব্যাংক খাতে সংকট আরো বেড়েছে। ফলে ২০১৯ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে সম্পদ প্রবৃদ্ধি আরো কমে যাবে। তারা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান সংকট সমাধানে এখন জরুরি হয়ে পড়েছে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী কমিশন গঠনের। কমিশন ব্যাংকিং খাতে সার্বিক চিত্র পর্যালোচনা করে সমস্যা চিহ্নিত করবে। একই সঙ্গে সমাধান কী হবে সেটিও জানাবে।

তারল্য সংকট, ডলার সংকট, সুশাসন ঘাটতি, ঋণের উচ্চ সুদ হার, বিনিয়োগে স্থবিরতা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি, জালিয়াতি কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের শুরু থেকে ব্যাংক খাতের সংকট দৃশ্যমান হতে থাকে। যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো প্রকট হয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত এই সংকট ব্যাংকের সম্পদ খেয়ে ফেলতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতে সম্পদ প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। বড় আকারে কমে গেছে সম্পদের প্রবৃদ্ধি। এর আগে, বছরে সম্পদ বেড়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জালিয়াতির কারণে এই অবনতি। এটি আগামীতে আরো অবনতি হবে। ব্যাংকিং খাত ভালোভাবে চলছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতই একটি বড় ঝুঁকি। বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি করতে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী কমিশন গঠন করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে যে কমিশন কাজ করবে। কমিশনের কাজ হবে সমস্যার কারণ খুঁজে বের করে সমাধান ঠিক করা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে সম্পদ প্রবৃদ্ধি কমেছে কার্যত বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর কারণে। অপরদিকে টানাটানির মধ্যেও সম্পদ বাড়িয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। আর দেশে পরিচালিত বিদেশি ব্যাংকগুলোতে সংকটের তেমন প্রভাব নেই। বিদায়ী বছরে সম্পদ প্রবৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে বিদেশি ব্যাংকগুলো।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। খেলাপি ঋণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৭ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর মোট সম্পদের ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ হচ্ছে ঋণ ও অগ্রিম, যা ২০১৭ সালে ছিল ৬৫ শতাংশ।

অপরদিকে ব্যাংকের সম্পদে অংশগ্রহণ কমেছে বিনিয়োগের। ২০১৭ সালে মোট সম্পদের ১৪ শতাংশ ছিল বিনিয়োগ। আর ২০১৮ সালে তা কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ।  

সূত্রমতে, ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। আমানতের টানাটানি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত সমন্বয় করার নির্দেশনা কার্যকর করতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে ধাক্কা লাগছে মুনাফায়। আর আশানুরূপভাবে মুনাফা করতে না পারায় মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১০ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। তিন মাস আগে নয় ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। নতুন করে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক।

গত বছরে ব্যাংকিং খাতে মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫৬৬ বিলিয়ন টাকা। জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে বাজার ঝুঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আর পরিচালনগত ঝুঁকির কারণে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। মোট ঋণ ঝুঁকির ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ হচ্ছে অফ ব্যালেন্সশিট হিসাব থেকে। আর ১২ দশমিক ৬ শতাংশ অব ব্যালেন্সশিট সূচক থেকে ব্যাংকের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের মূলধন ভিত্তিও দুর্বল হয়েছে ২০১৮ সালে। মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মূলধনের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের থেকে ৩৩ বেসিস পয়েন্ট কম।

তথ্যমতে, ব্যাংকিং খাতে ঋণের কারণে মোট ঝুঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর বাজারভিত্তিক ঝুঁকির পরিমাণ ৩১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর পরিচালনগত ঝুঁকির পরিমাণ প্রায় ৮৬ হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads