• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সরল সুদে ঋণ সোনার হরিণ

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

সরল সুদে ঋণ সোনার হরিণ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৭ জুলাই ২০১৯

বেসরকারি খাতকে গতিশীল করতে নানা আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল। তবে তার সেসব ঘোষণা এখনো কার্যকর হয়নি। আদৌ কার্যকর হবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, অর্থমন্ত্রী, দেশের অর্থনীতি ও বিনিয়োগের স্বার্থে তার পূর্বের ঘোষণাগুলো একে একে কার্যকর করবেন। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অর্থমন্ত্রী ঋণের ক্ষেত্রে সরল সুদ কার্যকর করার কথা বলেছেন। বিষয়টি তিনি বাজেট বক্তৃতায়ও এনেছেন। তবে ব্যাংকগুলো কীভাবে কার্যকর করবে তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। সেটি এখনো হয়নি। রপরেখা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করতে হবে যাতে তফসিলি ব্যাংকগুলো তা পরিপালন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে তা তদারকিও করতে হবে। তা না হলে ব্যাংকগুলো সরল সুদ কার্যকর করবে না। যেমন ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ করার কথা বলেও করেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চক্রবৃদ্ধি সুদ হার বন্ধ করতে হবে, চক্রবৃদ্ধি সুদ হারের কারণেই খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন কথা বলেছেন। একই কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল। তাদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে চক্রবৃদ্ধি সুদ হার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। প্রধানমন্ত্রী বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চক্রবৃদ্ধি সুদ হার বন্ধ করতে হবে। এ কারণে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারিও দেন তিনি।

জানা গেছে, বেসরকারি খাতের ঋণ এবার ১০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত মে মাস শেষে এ খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯১৮ কোটি টাকা। এর আগের মাসে যার পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৮৭ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। যদিও তহবিল সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে গতি নেই। এমন পরিস্থিতিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে ঋণ বেড়েছে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত এপ্রিল শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মে শেষে বেসরকারি খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৯২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই নজির নেই চক্রবৃদ্ধি সুদের। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংকগুলো এই চর্চা করে আসছে।

সরকারের মনোভাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরাও। তারা বলেন, আমরাও চক্রবৃদ্ধি সুদ হার চাই না। এটা বন্ধ করতে হবে। সুদ হারও কমিয়ে আনতে হবে। তবে কোনো ব্যাংক এককভাবে নয়, একসঙ্গে সব ব্যাংককে এসব উদ্যোগ কার্যকর করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেওয়া এক ধরনের অন্যায়। কেউ যৌক্তিক কারণে টাকা দিতে পারছেন না। আবার কেউ ঋণ নিয়েছেন, তা ফেরত না দেওয়ার জন্য। এ উভয় ব্যক্তির জন্য একই বিচার কি করে হয়? ঋণ দিয়ে ব্যাংক সহযোগিতা করবে উদ্যোক্তাকে ঘুরে দাঁড়াতে। কিন্তু এখন ঘটছে তার পুরো উল্টোটা।

জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, চক্রবৃদ্ধি সুদ হার থেকে মুক্তি চাই। সুদের ওপর সুদ আরোপের কারণে ব্যবসায়ীরা শেষ হয়ে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংককে জানিয়েছে, লোকটি আর টাকা দিতে পারছে না। তবুও ব্যাংক প্রতি ৩ মাস অন্তর মূল টাকার সঙ্গে সুদ যোগ করে তার ওপর আবার পরবর্তী ৩ মাস পরপর ধারাবাহিকভাবে সুদ আরোপ করতে থাকে। এতে একপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর ব্যাংকে দায়দেনা অনেক গুণ বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত ১৫/১৬ শতাংশ সুদে কেউ ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে তা পরিশোধ করতে পারবে না। এর ওপর আবার চক্রবৃদ্ধি সুদ হলে তো কথাই নেই। অন্য একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমি কখনো ঋণ খেলাপি ছিলাম না। যদিও ব্যাংক ঋণখেলাপি বলছে। প্রকৃতপক্ষে আমি হলাম সুদ খেলাপি। উচ্চ সুদের কারণে তা পরিশোধ করতে পারিনি। আমি একা নই, খোঁজ নিয়ে দেখেন, সবাই একই কথা বলবেন। চক্রবৃদ্ধি সুদ হার বন্ধের দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করছেন ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরাও।

এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে সম্প্রতি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বিদায়ী চেয়ারম্যান এ কে এম সাহিদ রেজা সাংবাদিকদের বলেন, গ্রাহক সুবিধা ও শিল্পায়নের জন্য ব্যাংকঋণের সরল সুদ বাস্তবায়নে আমরা আগ্রহী। চক্রাকারে যে সুদ বাড়তে থাকে তা গ্রাহকদের জন্য নির্যাতন। একই সঙ্গে শিল্পায়নকেও বাধাগ্রস্ত করছে। তবে সব ব্যাংককে উদ্যোগটি একসঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। কোনো ব্যাংক এককভাবে চালু করলে তারা পিছিয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এক বছরে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মে মাস শেষে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা বেড়েছিল। শতাংশের বিবেচনায় চলতি বছরে ঋণ কমার পাশাপাশি পরিমাণ বিবেচনাতেও কমেছে। এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসের তুলনায় এক লাখ ৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৬ সালের মে শেষে ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর আগের বছর একই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads