• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
ঋণ নিয়মিতকরণের রেকর্ড ব্যাংক খাতে

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ব্যাংক

ঋণ নিয়মিতকরণের রেকর্ড ব্যাংক খাতে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৪ জুলাই ২০১৯

গত পাঁচ বছরে ৮৯ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করতে হয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে। মূলত ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় এই অর্থ পুনঃতফসিল করে নিয়মিত করা হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পুনঃতফসিল হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালেই সবচেয়ে বেশি অর্থ পুনঃতফসিলকরণ হয়েছে ব্যাংকিং খাতে, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, পুনঃতফসিল করা ঋণ একসময় খেলাপি হয়ে পড়ে। বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয় প্রতি বছর। সে হিসাবে, প্রতি বছরই নিয়মিতকরণ করা ঋণের বড় অংশ খেলাপি হচ্ছে। তবে ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকের স্বাস্থ্য বাঁচাতে তারা বারবার একই ঋণ পুনঃতফসিল করে থাকেন। বিধি মোতাবেক, একটি ঋণ তিনবার নিয়মিত করার সুযোগ থাকলেও নানা কৌশলে বছরের পর বছর এটি করা হচ্ছে।

তবে এই চিত্র পাল্টে যেতে পারে। কারণ খেলাপি ঋণ আদায়ে বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঋণখেলাপিরা এখন ৯ শতাংশ সরল সুদে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণের দায় পরিশোধ করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে, দুই মাসের জন্য এই সুযোগ কার্যকর থাকলেও পরে এটি বাড়ানো হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, বিগত ৫ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালেই সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিলকরণ হয়েছে, যা এযাবৎকালে সর্বোচ্চ। কিছু গ্রাহক সাময়িক ব্যবসায়িক লোকসানে পড়ে আইনি এই সুযোগ নিলেও বেশির ভাগ গ্রাহক এটিকে ফায়দা হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তবে নতুন পদক্ষেপের ফলে এই প্রবণতা কমবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুশাসনের ঘাটতি ও যাচাই-বাছাই না করে বেপরোয়াভাবে ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। সরকারি ও বেসরকারি উভয় শ্রেণির ব্যাংকে বর্তমানে একই চিত্র, যা উদ্বেগজনক।

এভাবে ঋণ বিতরণে অনিয়ম করার ফলে ব্যাংকিং খাতে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। ব্যাংকের বড় বড় গ্রাহক ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করছেন না। অনেকে সঠিক ব্যবসায়িক নীতি না মানার কারণে লোকসানে পড়ছেন। ফলে ওইসব ব্যবসায়ী কিংবা শিল্প গ্রুপের জন্য ব্যাংকের দায় পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তখন বাধ্য হয়ে ওইসব গ্রাহকের ঋণ ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত করতে হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। এর বাইরে বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ অবলোপন করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মোতাবেক, ঋণের সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিল হয় তৈরি পোশাক খাতের। মোট পুনঃতফসিল ঋণের ৫ ভাগের এক ভাগ এই খাতের। অথচ দেশের রপ্তানি আয়ের বড় অংশ আসে এই খাতের মাধ্যমে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার। 

হিসাব বলছে, পোশাক খাতের মোট ঋণের ১৫ শতাংশ হারে প্রতি বছর পুনঃতফসিল করে নেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। আর ঋণের পুনঃতফসিল হার সবচেয়ে কম চলতি মূলধনের জোগান হিসেবে প্রদত্ত অর্থে। ঋণ পুনঃতফসিলের অর্ধেকই করা হয়ে থাকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে। মোট পুনঃতফসিল ঋণের ৫১ শতাংশ করে থাকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের অদৃশ্য প্রভাব তৈরি হয়েছে। একটি বড় বলয় নিয়ন্ত্রণ করছে এই খাতকে। এটি ভাঙতে হবে। তা না হলে ব্যাংক থেকে টাকা বেরিয়ে যাবে। ব্যাংকের ভল্টে সেই টাকা আর ফিরবে না।

দেশের ব্যাংকিং খাতে নানা সংকট চলছে। তারল্য ঘাটতি, আমানতের প্রবাহ কমে যাওয়া, ডলার সংকট পুরো খাতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি করেছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও তাতে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সুফল আসেনি এ খাতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads