• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
কে হচ্ছেন সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

কে হচ্ছেন সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৮ জুলাই ২০১৯

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। দেশের ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মো. আশরাফুল মকবুল। তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুলাই। তিনিই দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পাচ্ছেন, নাকি অন্য কেউ চেয়ারম্যান হচ্ছেন, সেটি নিয়ে ব্যাংকটির অভ্যন্তরে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। 

সূত্র বলছে, অর্থমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে সবেমাত্র দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে আশরাফুল মকবুল বাংলাদেশের খবরকে গতকাল জানান, আমি চেষ্টা করেছি ব্যাংকটি যাতে ক্ষত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি ব্যাংকটিকে সংকটে ফেলেছিল। আমি শুরুতে ভয় পেয়েছিলাম। আদৌ সরকারের দেওয়া দায়িত্ব আমি সঠিকভাবে পালন করতে পারব কি না। তবে সরকারের সচিব হিসেবে কাজ করেছি দীর্ঘদিন। ব্যাংকিং না বুঝলেও সাহস নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আজকে সোনালী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরেছে। মূল্যায়নের দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ও গ্রাহকদের। তবে আমি অনেকটাই সন্তুষ্ট। সরকার নতুন মেয়াদে দায়িত্ব দিলে ব্যাংকটি যাতে সামনের দিকে যেতে পারে, তার জন্য আরো কার্যকর উদ্যোগ নেব।

আশরাফুল মকবুল বলেন, আমি একা নই, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যরা সর্বোপরি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আন্তরিক চেষ্টায় সোনালী ব্যাংকের সোনালি দিন ফিরে এসেছে।  

তবে আশরাফুল মকবুলকে দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান হিসেবে রাখতে জোর চেষ্টা করছে একটি মহল। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে মহলটি।

তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনতে চান। সেটি না পারলেও আশরাফুল মকবুলের মেয়াদ বাড়ানোর আগে তার সঙ্গে অর্থমন্ত্রী নিজেই ব্যাংকটির আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে পারেন সরাসরি। কিন্তু এরই মধ্যে প্রকাশ্যে ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন সরকারের নতুন মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া মুস্তফা কামাল।

তবে হলমার্ক কেলেঙ্কারি ইস্যুতে সোনালী ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোর পাওনা সোনালী ব্যাংকের হিসাব থেকে কেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিশোধ করে দেয়। প্রায় ৮০০ কোটি টাকার এই দেনা পরিশোধে সোনালী ব্যাংক গড়িমসি করতে থাকে বলে আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমন কঠোর হতে বাধ্য হয়। এই ঘটনার পর সোলালী ব্যাংকের বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি কিছুটা নাখোশ বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী ফোরাম।

জানা গেছে, গত দশ বছরে ব্যাংকিং খাতে নানা জালিয়াতি ও অব্যবস্থাপনার ঘটনা সামনে এসেছে। ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায় এড়াতে পারে না পরিচালনা পর্ষদ। ফলে ব্যাংকগুলোর জন্য একজন দক্ষ চেয়ারম্যান ও ব্যাংকিং জ্ঞানসম্পন্ন পরিচালনা পর্ষদ থাকা জরুরি।

বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংকের সংখ্যা আটটি। এর মধ্যে ৬টি বাণিজ্যিক ও দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক। এসব ব্যাংকে প্রায় একশ পরিচালক, যাদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বর্তমানে এসব ব্যাংকের পরিচালকদের বেশির ভাগই সাবেক আমলা। এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী রয়েছেন। সাংবাদিকরাও পরিচালক হিসেবে রয়েছেন।

জানা গেছে, ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা আছে ব্যাংক কোম্পানি আইনে। সেখানে তাদের দায়দায়িত্ব স্পষ্ট করা আছে। এর সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৩ সালে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারিও করা হয়। তবে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা সেটি আমলে নেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নীতিমালাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে পরিচালকরা অনেক কিছু জানতে পারবেন।

নীতিমালার ভূমিকায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের নীতি-নির্দেশনা প্রণয়ন এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ও পেশাগতভাবে দক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ব্যাংক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব অপরাপর কোম্পানির তুলনায় অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড প্রধানত আমানতকারীদের অর্থে পরিচালিত হয় এবং এ ক্ষেত্রে আমানতকারীদের আস্থা অর্জন ও বজায় রাখা অপরিহার্য। সুশাসনের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদের গঠন, দায়-দায়িত্ব ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নজর দিতে হবে।

আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী কার্যকলাপ সম্পাদন কিংবা জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে ব্যাংক-কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারার আওতায় সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক ব্যতিরেকে যে কোনো ব্যাংক-কোম্পানির পরিচালক বা চেয়ারম্যানকে বাংলাদেশ ব্যাংক অপসারণ ও ৪৭ ধারার আওতায় যে কোনো ব্যাংক-কোম্পানির পর্ষদ বাতিল করতে পারে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads