• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যাংকে বাড়ছে না কৃষকের হিস্যা

ফাইল ছবি

ব্যাংক

ব্যাংকে বাড়ছে না কৃষকের হিস্যা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৪ জুলাই ২০১৯

সংকটের মধ্যে বেড়েছে ঋণপ্রবাহ। ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি। তারপরও সর্বশেষ হিসাবমতে, বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে বেসরকারি ঋণের পরিমাণ। দশ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে এরই মধ্যে। কিন্তু কৃষকের হিস্যা বাড়ছে তুলনামূলক কম। আবার কৃষক ঋণ পরিশোধ করতে না পারলেই ব্যাংকগুলো মামলা দায়ের করে। তবে বড় এবং প্রভাবশালীদের কাছে শত শত কোটি টাকা পাওনা থাকলেও শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।

এমন প্রেক্ষাপটে কৃষি ও পল্লীঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ হাজার ১২৪ কোটা টাকা। চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বিদায়ী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। তবে বিতরণ করা ঋণ থেকে নতুন অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে দুই শতাংশের কম। গত অর্থবছরে মোট কৃষিঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে সব বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংককে স্ব স্ব ব্যাংকের মোট ঋণ ও অগ্রিমের ন্যূনতম আড়াই শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর সার্বিকভাবে কৃষিঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় মোট ঋণের দুই শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে। ধারাবাহিকভাবে ঋণের পরিমাণ বাড়লেও গত ৮-৯ বছরে এই কৃষিঋণের এই হারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী অনেক দেশেই কৃষিঋণের হার অনেক বেশি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, মোট ঋণের দুই শতাংশ কৃষি খাতের জন্য বরাদ্দ। তবে ব্যাংকগুলো চাইলে আরো বেশি ঋণ দিতে পারে। এখানে কোনো বাধা নেই। বলা হয়েছে, ন্যূনতম দুই শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ১৩ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লীঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিদেশি খাতের স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান ও মধুমতি ব্যাংক বিদায়ী অর্থবছরে এক টাকাও কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারেনি।

কৃষিঋণের লক্ষ্য ঘোষণা করতে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, কিছু দুর্বল ব্যাংক ছাড়া সবাই কৃষিঋণে অংশগ্রহণ করছে। তবে মধুমতি ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। তাদের বিষয়টা আমাদের বিবেচনায় আছে।

তিনি জানান, গত অর্থবছরে মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের (আইএমএফ) মাধ্যমে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর পরিমাণ ৮ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। তবে আইএমএফ থেকে নিরুৎসাহিত করতে ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ সহজীকরণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা আরো কমে আসবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত অর্থবছরে মোট ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার ৪২৪ জন কৃষক কৃষি ও পল্লীঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের (এমএফআই) মাধ্যমে ১৬ লাখ ১ হাজার ৮৫৬ জন নারী প্রায় ৭ হাজার ১৯০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন। ওই অর্থবছরে ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ২৩৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৬ হাজার ৩২২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন। চর ও হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৯ হাজার ৯৫০ জন কৃষক প্রায় ৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লীঋণ পেয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাকৃতিক কারণে কৃষকরা অনেক সময়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এবারো দেশব্যাপী ব্যাপক বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতিতে কৃষককে কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলো কোনো উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের সহায়তা দেবে।

এবারের কৃষিঋণ নীতিমালায় বেশ কিছু নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমএফআই লিংকেজের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব শাখা এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া। এবার কাজুবাদাম ও রাম্বুটান চাষে ঋণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কচুরিপানার ডাবল বেড পদ্ধতিতে আলু চাষেও ঋণ দিতে বলা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads