• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
জালে পড়বে জালিয়াতি  

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

জালে পড়বে জালিয়াতি  

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ৩১ জুলাই ২০১৯

ব্যাংকঋণের জালিয়াতি ধরতে কঠোর সিদ্ধান্ত আসছে। মিথ্যা তথ্য, ভুয়া কাগজপত্রে ঋণ নেওয়ার দিন শেষ হবে। শিগগিরই অনলাইন ডাটাবেসের আওতায় আনা হচ্ছে সব ধরনের ঋণের বিপরীতে গ্রাহকের দেওয়া জামানত (কোল্যাটারাল)। এজন্য দুটি আলাদা আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একটি আইনের আওতায় ডাটাবেসে আসবে সব অস্থাবর সম্পত্তি। অন্যটির আওতায় আসবে স্থাবর জামানত। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ নিয়ে দীর্ঘদিন নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দেওয়ার কারণে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। অনেক গ্রাহক জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে একই সম্পত্তি একাধিক ব্যাংককে জামানত হিসেবে দেখাচ্ছেন। এভাবে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ অনুমোদন করিয়ে অর্থ তছরুপ করছেন।  

অন্যদিকে ভালো গ্রাহকরা তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে দেখালেও তার কোনো রেকর্ড থাকছে না। কোনো নির্দিষ্ট ঋণের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ব্যাংকের কাছে জমা থাকলেও তা ব্যাংক প্রকাশ করে না। কেবল গ্রাহক, ঋণ পরিশোধ না করলেও কী পরিমাণ অর্থ পাওনা, সেটি বড় করে প্রচার করা হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) কোনো ঋণের যাবতীয় তথ্য থাকলেও থাকছে না গ্রাহকের জামানতের কোনো তথ্য। নতুন ডাটাবেস হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। 

জানা গেছে, বিদ্যমান সংকট ও টাকার টানাটানির মধ্যেও ধারাবাহিকভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ বাড়ছে। প্রথমবারের মতো ১০ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। গত মে মাস শেষে এ খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯১৮ কোটি টাকা। জুন মাসের তথ্য এখনো হালনাগাদ হয়নি। জুন শেষে ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে বেসরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৮৭ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। যদিও তহবিল সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ধীরগতি অব্যাহত আছে। এমন পরিস্থিতিতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে ঋণ বেড়েছে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত এপ্রিল শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মে শেষে বেসরকারি খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৯২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত এক বছরে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মে মাস শেষে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা বেড়েছিল। শতাংশের বিবেচনায় চলতি বছরে ঋণ কমার পাশাপাশি পরিমাণ বিবেচনাতেও কমেছে। এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসের তুলনায় এক লাখ ৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা বেড়ে ২০১৬ সালের মে শেষে ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর আগের বছর একই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। 

সূত্র জানিয়েছে, বিশাল অঙ্কের এই ঋণের সঙ্গে বেড়েছে খেলাপি ঋণও। সর্বশেষ হিসাবমতে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লাখ ১১ হাজার কোটি। নতুন ডাটাবেস হলে ঋণ নিতে গ্রাহকের সব জামানত অনলাইনে আসবে। 

স্থাবর জামানত হিসেবে বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাটসহ স্থাবর সম্পদের সব তথ্য থাকবে। ফলে একই সম্পদ দেখিয়ে একাধিক ঋণ নেওয়ার দিন শেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে অস্থাবর জামানতের আওতায় পণ্য, জ্ঞান, ভবিষ্যৎ অগ্রিম, মজুত মাল, এক বছরের অধিক সময়ের জন্য ইজারা স্পর্শাতীত সম্পত্তিসহ সব অস্থাবর সম্পদ ডাটাবেসে উঠে আসছে।  

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন অনেক গ্রাহক একই সম্পত্তি একাধিক ঋণের ক্ষেত্রে জামানত হিসেবে দেখাচ্ছেন। অনলাইন ডাটাবেস না থাকায় তা যাচাই-বাছাই করা সম্ভব নয়। গ্রাহক অনেক সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসব সম্পত্তি একাধিক ঋণের জন্য ব্যবহার করছেন। কিন্তু ডাটাবেস হলে এমনটি হবে না। একই সঙ্গে একজন গ্রাহক কী পরিমাণ সম্পত্তি জামানত হিসেবে দেখিয়েছেন, তারও কোনো রেকর্ড থাকছে না। এসব সমস্যা আর থাকবে না। আমরা কাজ করছি জামানত ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে কর্মসংস্থান ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য অংশ হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। গত কয়েক বছর ধরে জিডিপি অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ একই জায়গায় রয়েছে। অন্যদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) নতুন সীমায় নামিয়ে আনার একটি চাপ রয়েছে। এসব কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হারে বাড়ছে না। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads