• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বাড়বে সরকারের ঋণ, লাগাম বেসরকারিতে

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

বাড়বে সরকারের ঋণ, লাগাম বেসরকারিতে

অর্থবছরের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৯

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা ব্যাপক হারে বাড়ানো হয়েছে। টাকার সংকটের কারণেএমনিতেই চাহিদামাফিক ঋণ পাচ্ছে না বেসরকারি খাত; মুদ্রানীতিতে ঘোষণামাফিক ঋণ সরকারকে দেওয়া হলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে। তবে গুণগত মানসম্পন্ন ঋণ দিলেই ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা দিয়েই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে দাবি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ফজলে কবির।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতি অর্থবছরের জন্য দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ বছর থেকে একবারই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। এ প্রসঙ্গে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, এখন থেকে আমাদের মুদ্রানীতি ঘোষণাপত্র অর্থবছরে দুবারের পরিবর্তে অর্থবছরের শুরুতে সমগ্র বছরের জন্য একবার ঘোষণা করা হবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ প্রথাগতভাবে অর্থবছরের শুরুতে একবারই সমগ্র বছরের জন্য মুদ্রানীতি কার্যক্রম প্রণয়ন করা হয় এবং মধ্যবর্তীকালে যে কোনো সময়ে নীতি সুদহার ও নগদ জমা-তারল্যের বিধিবদ্ধ হারসমূহকে প্রয়োজনসাপেক্ষে বছরের দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর অপেক্ষায় না থেকে তাৎক্ষণিকভাবেই পরিবর্তন এনে জনসমক্ষে জানানো হয়। তাই অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য আলাদাভাবে মুদ্রানীতি ঘোষণার বিশেষ কোনো তাৎপর্য বহন করে না।

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাপক হারে কমানো হয়েছে। গত অর্থবছরের শেষার্ধের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ থাকলেও জুনে অর্জিত হয়েছে মাত্র ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ; যা গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মূলত পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় ঋণ বিতরণ বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এই তারল্য  সংকট এখনো কাটেনি বরং কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে আরো তীব্র হয়েছে। এর মধ্যে নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার লাগাম টেনে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং জুন পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়েছে।

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমানো হলেও সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। গত মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু নির্বাচনের আগ থেকে অর্থবছরের শেষ সময় পর্যন্ত ব্যাংক খাত থেকে সরকার ব্যাপকহারে ঋণ নিয়েছে। এর ফলে জুনে সরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ২১ দশমিক ১০ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতি সরকারকে ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫ দশমিক ২০ শতাংশ এবং জুন পর্যন্ত ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ বছরজুড়ে ব্যাংকিং খাত থেকে আগ্রাসীভাবে ঋণ নেবে সরকার।

তবে চলতি অর্থবছর শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ১৫ দশমিক ৯ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এছাড়া মুদ্রানীতিতে ব্যাপকভাবে মুদ্রা সরবরাহের জন্য এ সরবরাহ সাড়ে ১২ শতাংশ হারে বাড়াতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রিজার্ভ মুদ্রার বৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ শতাংশ। নিট বৈদেশিক সম্পদ (এনএফএ) বৃদ্ধি জুনে ২ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়লেও আগামী জুনে তা বাড়বে মাত্র দশমিক ৩০ শতাংশ।

তারল্য সংকটের কারণে ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট নেই বরং ৮৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য আছে। তারল্যের মিসম্যাচ রয়েছে। অর্থাৎ কোনো ব্যাংকে বেশি রয়েছে আবার কোনো ব্যাংকে কম রয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা বাজেটের ঘোষিত ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যথেষ্ট। চলতি অর্থবছরের জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ কিন্তু প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুণগত মানসম্পন্ন ঋণ বিতরণে গুরুত্ব দেওয়ায় ব্যাপকহারে ঋণ বৃদ্ধি কমেছে কিন্তু প্রয়োজনীয় ঋণ বিতরণ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সরকারি ঋণের অংশের প্রবৃদ্ধি বেসরকারি ঋণের অংশের চেয়ে অনেক বড় দেখালেও বেসরকারি অংশের মোট অঙ্ক সরকারি অংশের চেয়ে অনেক বড় (৭.৩ গুণ) হওয়ায় পরিমাণের অঙ্কে সরকারি ঋণের অংশটি অনেক কম। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে নতুন বিনিয়োগ কর্মকাণ্ড জোরদার করার প্রয়োজন হবে। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ টাকার প্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতামূলক হার বজায় রাখার পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দুর্নীতি ও আমানতকারীদের অর্থ ফেরতে বিষয়ে ফজলে কবির বলেন, একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কয়েকটি আাার্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা ঋণের নামে টাকা নিয়েছেন। তাই চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এদের কেউ কেউ অন্য ব্যাংকের পরিচালক পদে রয়েছেন। এতে নিয়মের ব্যত্যয় হয়নি। তবে যারা অন্যায় করেছেন সেই অন্যায় ধরার জন্য কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদেরই বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের অর্থ নিয়মানুযায়ী ফেরত দেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ঋণখেলাপিদের সুবিধা প্রদান বিষয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনের নিরিখে খেলাপিদের ছাড় দেওয়া হয়। আগে পুনর্গঠন নীতিমালা করা হয়, সম্প্রতি ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে পুনঃতফসিলের জন্য বিশেষ নীতিমালা করা হয়েছে। এর বাইরে গিয়ে অনেক সময় আরো সুবিধা দিয়ে পুনঃতফসিল করা হচ্ছে। ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যক্রম চলমান রাখা ও কর্মসংস্থানের দিক বিবেচনা করে এই ছাড় দেওয়া হচ্ছে, এটি চলমান থাকবে।

মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, আহমেদ জামাল, পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আবু হেনা মো. রা‌জি হাসান, ব্যাংকিং রিফর্ম অ্যাডভাইজার এস কে সুর চৌধুরী, অর্থনৈ‌তিক উপ‌দেষ্টা মো. আখতারুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads