• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ব্যাংক

কয়েন নিয়ে হযবরল অবস্থায় তফসিলি ব্যাংক

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বিভিন্ন মানের কয়েন (ধাতব মুদ্রা) ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। ফলে এসব ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অচল পড়ে আছে। দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ১১ হাজার শাখা রয়েছে। এতে প্রায় ৯০ কোটি টাকার কয়েন অনেকটা অচল পড়ে থাকছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করে তফসিলি ব্যাংকগুলোর পরিপালনের জন্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, তফসিলি ব্যাংকগুলোর সব শাখায় প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণ কয়েন থাকতে হবে। যার আওতায় প্রতিটি ব্যাংক শাখাকে বর্তমানে ১০ হাজার এক টাকার কয়েন, ১০ হাজার দুই টাকা মূল্যমানের কয়েন এবং দশ হাজার পাঁচ টাকা মূল্যমানের কয়েন রাখা বাধ্যতামূলক। ফলে প্রতিটি শাখাকে ৩০ হাজার কয়েন রাখতে হচ্ছে। এতে প্রায় প্রতিটি শাখাকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যমানের কয়েন রাখতে হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ এই কয়েন ব্যবস্থাপনা ব্যাংকগুলোর জন্য একটি অতিরিক্ত চাপ।

সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কেবল প্রজ্ঞাপন দিয়েই ক্ষান্ত নয়, নির্ধারিত পরিমাণে কয়েন প্রতিদিন ব্যাংকের লেজারে থাকছে কি না, তা পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার লঙ্ঘন পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে সতর্ক করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সুযোগ রাখা হয়েছে জরিমানার।

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, এত বিপুল পরিমাণ কয়েন ব্যবস্থাপনা করা কঠিন। তাছাড়া নির্ধারিত পরিমাণও রাখতে হচ্ছে। ফলে ঘাটতি হলে আমাদের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে কয়েন সংগ্রহ করতে হবে, যা আরেক ভোগান্তি।

এই কর্মকর্তা আরো বলেন, কয়েনের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ দিন দিন কমছে। তাছাড়া ব্যাংকে যারা লেনদেন করতে আসেন তারা বেশিরভাগই এমন অঙ্কে লেনদেন করেন যাতে বেশি কয়েনের দরকার পড়ে না। লাগলেও ৩০ হাজার কয়েন প্রতিদিন লাগছে না। ফলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে এই ইস্যুতে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এখন অনলাইন ডাটাবেসের মাধ্যমে এটি ব্যবস্থাপনা করতে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। ব্যাংক খাত যাতে সাধারণ মানুষের জন্য সঠিকভাবে সেবা দেয়, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের। সেই বিবেচনায় আমরা সাধারণ মানুষের প্রয়োজন বিবেচনা করে সময়ে সময়ে নির্দেশনা দিয়ে থাকি। কয়েন সংরক্ষণের বিষয়টিও ঠিক সেভাবেই এসেছে। নির্দেশনা জারির আগে এর বাস্তবতা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবস্থাপনা সংকটের কথা বলে কয়েন রাখার বিষয়টি থেকে সরে আসতে চায় তফসিলি ব্যাংকগুলো। কিন্তু এ সুযোগ নেই।

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমডি গতকাল আলাপকালে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পারে। কার্যত এত বিপুল পরিমাণ কয়েন প্রতিদিন কোনো শাখায় ব্যবহার হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে দেশে তিনটি ধাতব মুদ্রা প্রচলিত। এক, দুই ও পাঁচ টাকার এসব ধাতব মুদ্রা প্রতিদিনের লেনদেনে ও বাণিজ্যে ব্যবহার হচ্ছে। তবে টাকার অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গে এখন এক টাকার ধাতব মুদ্রা খুব একটা চলছে না। তবে দুই ও ৫ টাকার কাগজের মুদ্রায় প্রচলিত। এর বাইরে সব কাগজের মুদ্রায় বাংলাদেশে লেনদেন ও বাণিজ্য পরিচালিত হয়। বর্তমানে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকার কাগজের মুদ্রা রয়েছে। দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বর্তমানে আমাদের মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপির আকার প্রায় ২৫ লাখ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads