• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

ব্যাংক

বিনিয়োগের দরজা প্রসার হলো ব্যাংকগুলোর

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দেশের কর্মসংস্থান ও মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য অংশ হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। বেসরকারি খাতের কর্মযজ্ঞ বাড়লে তখন ঋণ প্রবৃদ্ধিও বাড়ে। তবে কয়েক বছর ধরে জিডিপি অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ একই জায়গায় রয়েছে। এর মধ্যে আবার অনেক ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে আশানুরূপভাবে ঋণ বাড়তে পারেনি। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরো কমেছে। আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গত জুলাইয়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের মাস জুনে যা ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের জুনের পর কোনো মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এত কমতে দেখা যায়নি। ওই মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি ঋণের দরজা কিছুটা খুলে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো যাতে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে পারে, তার জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ঋণ আমানত অনুপাত-এডিআর। এর ফলে ব্যাংকগুলো বিদ্যমান সীমা থেকে বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে। তবে এতে আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকি বাড়বে আগের মতোই।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর আগপর্যন্ত ৬ মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করত বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ ৬ মাসের মুদ্রানীতিতে গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে জুন নাগাদ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) নতুন সীমায় নামিয়ে আনার নির্দেশনা রয়েছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সতর্কতা দেখানোয় প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হারে বাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। আর শরীআহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য এই সীমা দাঁড়াবে ৯০ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো তার আমানতের সাড়ে ৮৩ শতাংশ বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল। আর শরীআহভিত্তিক ব্যাংকগুলো ৮৯ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে তারল্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে আমানত বাড়তে শুরু করেছে। বিক্রি কমছে সঞ্চয়পত্রের। তাছাড়া ডলার সংকটও কিছুটা কমেছে। বিপুল পরিমাণ ঋণপত্র-এলসি খোলার চাপও কিছুটা কমেছে। এসব সূচক বিবেচনায় এডিআর কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগ বাড়বে, অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত গতকাল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেরিতে হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এডিআরের এই সীমা আগেই বহাল ছিল। কিন্তু সেটি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। বরং সীমার বাইরে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল তা নামিয়ে আনা উচিত ছিল। সেটি করা যায়নি। এখনো ১২টি ব্যাংক নির্ধারিত সীমার বাইরে রয়েছে। এসব ব্যাংক যাতে সীমার মধ্যে নেমে আসে তা নিশ্চিত করতে হবে। 

অপরদিকে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত দরকার ছিল না। এতে দুষ্ট ব্যাংকগুলো যারা এডিআর সমন্বয় করতে পারছিল না, তারা সুযোগ পেল। অর্থাৎ অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, বিদ্যমান এডিআর সীমাই সঠিক ছিল। এর মধ্যেই সরকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করার মতো বিনিয়োগ সম্ভব।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে আয়ের দেশের স্বীকৃতির পথে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে আসবে বাংলাদেশ। এজন্য বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে হবে। দরকার হবে বড় ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড।

জানা যায়, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার। অর্থনীতির চালিকাশক্তি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে একটি স্তরে আটকে আছে। টাকার অঙ্কে বাড়লেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে বাড়ছে না। সরকারের নানা উদ্যোগেও খুব সুফল আসছে না।

সূত্রগুলো বলছে, দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি রেকর্ড ছুঁয়েছে। তবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি প্রশ্নের মুখে কর্মসংস্থান বাড়ছে না বলে। কর্মসংস্থান তৈরি করতে এবং মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের গড়ে নিতে আট সূচকে সরকারের নজর দরকার। এই আটটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি হলে দেশ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে। ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশের কাতারে উঠে আসবে। ব্যবসার পরিবেশ, বিনিয়োগে গতি তৈরি করা, মূলধন জোগানো, বিদ্যমান অবকাঠামো পরিস্থিতির উন্নতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, টেকসই নগরায়ণ, রপ্তানি বহুমুখীকরণকে সহায়তা, তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধিকে নীতি সহায়তা, ব্যবসায়ের জন্য কর কাঠামো সংস্কার এবং ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন সরকারের স্পষ্ট পদক্ষেপ আসতে শুরু করেছে।

ঋণ প্রবৃদ্ধি ব্যাপক বাড়তে থাকায় ব্যাংকগুলোর এডিআর কমিয়ে গত ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এডিআর কমিয়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৯ শতাংশ করা হয়। আগে যা ৮৫ ও ৯০ শতাংশ ছিল। ব্যাংকগুলোর এডিআর নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে প্রথমে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এরপর আরেকটি সার্কুলারের মাধ্যমে সময় বাড়িয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। তবে তারল্য সংকটের কথা বলে বিভিন্ন দাবিতে সরব হয় ব্যাংকের মালিকরা। পরে সময় আরো বাড়িয়ে ৩০ মার্চ নির্ধারণ করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads