• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
অবৈধ উপার্জনের ব্যাংক হিসাব নজরদারিতে

ছবি : সংগৃহীত

ব্যাংক

অবৈধ উপার্জনের ব্যাংক হিসাব নজরদারিতে

ঘুষসহ যাবতীয় অবৈধ লেনদেন হচ্ছে নগদে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অনিয়ম ও দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জনকারীরা এবার কঠোর গোয়েন্দা নজরদারিতে। ফলে ভয় বাড়ছে ব্যাংক হিসাবধারী অনেকের। একের পর এক ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সরকারের শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে সমন্বয় করে আরো অনেক ব্যাংক হিসাব তলব করা হবে। একই সঙ্গে জব্দ করা হতে পারে নতুন আরো কিছু হিসাব।

ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকারের শুদ্ধি অভিযানে এক ধরনের স্থিতাবস্থা তৈরি হয়েছে। যারা বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে অর্থ উপার্জন করেছেন তারা এই ভয় থেকে নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করতে আসছেন না। একইভাবে নতুন করে অর্থ জমা থেকে বিরত থাকছেন। ঘুষসহ সব ধরনের বেআইনি লেনদেন হচ্ছে নগদে।

সরকারের শুদ্ধি অভিযান শুরু হয় দলীয় শিবিরে অভিযানের মাধ্যমে। পরে অভিযান শুরু হয় রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রশাসনেও শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার সরিয়ে দেওয়া হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তাকে। এরপর গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিবকে দুর্নীতির কারণে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওএসডি করা হয়।

ক্যাসিনোতে নগদ লেনদেন, কয়েন ও চিপসের ব্যবহার এ দেশে নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের মতো বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট-বিএফআইইউও নীরব ছিল। কিন্তু ক্যাসিনো কারবারি যুবলীগের একাধিক নেতা সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তা ছাড়া বেআইনিভাবে ঘুষ ও কমিশনসহ যাবতীয় অবৈধ লেনদেন শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।

তারা যেন এসব অর্থ ইচ্ছেমতো উত্তোলন করে নিতে না পারেন, সেজন্য ব্যাংকগুলোকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বিএফআইইউ। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও নগদ লেনদেনে সতর্ক থাকতে বলেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিএফআইইউ ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।

এর আগে যুবলীগের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, কৃষক লীগের নেতা শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ ও রিমান্ডে থাকা যুবলীগের নেতা জি কে শামীমের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে বিএফআইইউ। একইসঙ্গে তাদের স্ত্রী, মা বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য যেকোনো নামে হিসাব থাকলে তা-ও স্থগিত করা হয়েছে। অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় এসব হিসাব ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া গণপূর্তের সাবেক দুই প্রকৌশলীর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।

বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান আমাদের প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আরো কিছু ব্যাংক হিসাব পর্যবেক্ষণ করছি। এর মধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিও রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংক হিসাবগুলোতে অবৈধ অর্থ লেনদেন হয়েছে। এগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে। বিএফআইইউ-এর সূত্রগুলো বলছে, সরকারের শুদ্ধি অভিযান যদি চলমান থাকে তাহলে বিপুল পরিমাণ ব্যক্তির হিসাব এর মধ্যে আসবে।

রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনোয় অভিযান চালায় র্যাব। ওই রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২০ সেপ্টেম্বর নিকেতনে নিজের অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে।

গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতাদের বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য সিআইডি বা অন্য কোনো সংস্থা থেকে চাওয়া হয়নি বিএফআইইউর পক্ষ থেকে। তবে গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানোয় সংস্থাটি সজাগ হয়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলোকেও সেভাবেই সতর্ক করেছে। পুলিশ বা সিআইডি থেকে যাদের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া হবে, সেসব সরবরাহ করা হবে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।

এছাড়া যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের নামে কোনো হিসাব থাকলে যথাযথ ব্যক্তি ও কাগজপত্র ছাড়া তাদের অর্থ উত্তোলনের সুবিধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের নিজের তো বটেই, নিকটাত্মীয়দের নামে হিসাব থাকলে তার খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে। তাদের নামে কি পরিমাণ অর্থ ব্যাংকগুলোতে আছে, তাও জানার চেষ্টা চলছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সন্দেহজনক লেনদেন সিটিআর ও এসটিআর হিসেবে রিপোর্ট করেছে। এসব ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় এতদিন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আর যদি কোনো ব্যাংক রিপোর্ট না করে থাকে, তা হলে ওইসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এবার। এখন অভিযুক্তদের হিসাবে কীভাবে লেনদেন করেছে তার তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। এ সম্পর্কিত তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাবে বিএফআইইউ। সন্দেহজনক লেনদেন প্রমাণিত হলে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের হিসাব জব্দ করা হবে।

জানতে চাইলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলার প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা এমনিতেই বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনে সতর্ক ছিলাম। তারপরও নানা কারণে ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখন আমাদের প্রত্যেকটি শাখাকে সতর্ক করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads