• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ব্যাংক

টালবাহানায় বেসরকারি ব্যাংক

সরকারি ব্যাংকগুলোতে আবেদনের হিড়িক

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৭ অক্টোবর ২০১৯

দুই শতাংশ সরল সুদে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে চাচ্ছে না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। সরকারি ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখালেও অনাগ্রহী বেসরকারি বেশিরভাগ ব্যাংক। এতে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণই এই সুবিধার বাইরে থাকবে। ফলে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে আবেদনের সময়সীমা গত ২০ অক্টোবর শেষ হয়ে যায়। হাইকোর্টের আদেশের মেয়াদ আরো এক মাস অথবা এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বলেছিলেন ব্যাংকিং খাতে এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না। কীভাবে খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা যায় সে জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির সুপারিশে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ১৬ মে ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ শিরোনামে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। ওই সার্কুলারে যে কোনো অঙ্কের ঋণখেলাপিদের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১ বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। ওই সময় বলা হয়েছিল, আগ্রহীদের সার্কুলার জারির ৯০ দিনের মধ্যে এ সুবিধা পেতে আবেদন করতে হবে। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিট করায় এটি কার্যকরের ওপর প্রথমে স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ৮ আগস্ট এক সার্কুলার দিয়ে বলা হয়, এ বিশেষ সুবিধা পেতে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন গ্রাহকরা। কিন্তু উচ্চ আদালতে আবারো এ বিষয়ে রিট করায় গত ৩ সেপ্টেম্বর আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এই সুযোগ দিতে চাচ্ছে না। তারা খেলাপি ঋণঃতফসিল করতে ডাউনপেমেন্ট বেশি দাবি করছে। যুক্তি হিসেবে বলছে, প্রজ্ঞাপনে ন্যূনতম বলা হয়েছে দুই শতাংশ। বেশি পরিশোধ করতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

গত সপ্তাহেই একটি ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানের আবেদন নিতে অনাগ্রহ দেখিয়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। একইভাবে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড আরেক গ্রাহকের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ৪ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দাবি করেছে। অবশ্য কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দারস্থ হয়েছে অভিযোগ নিয়ে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বিশেষ সুবিধার আওতায় ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন করেছেন প্রায় ৪ হাজার ঋণখেলাপি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে এক হাজার ৫০০, জনতা ব্যাংকে ৮০০, বেসিক ব্যাংকে ৫৫০, অগ্রণী ব্যাংকে ৪০০, রূপালী ব্যাংকে ২৫০ এবং বিডিবিএলে ২৫০ জনের আবেদন জমা পড়েছে। বাকি ২৫০টি আবেদন বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানই বলছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো আবেদন কম গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা দিতে রাজি নয়। এ কারণে ঋণখেলাপিরা উচ্চ আদালতে রিট করছেন। রিট আবেদন বিবেচনায় নিয়ে আদালত বিষয়টি সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেন। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটেছে। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ উচ্চ আদালতে রিট করছেন বেসরকারি ব্যাংকের বিরুদ্ধে। সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগও দিচ্ছেন অনেকেই। বেসরকারি ব্যাংকে এ রকম চিত্র থাকলেও ঠিক বিপরীত চিত্র সরকারি ব্যাংকগুলোতে। ডেকে ডেকে আবেদন করাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো।

তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সংঘত কারণেই এই ধরনের আবেদন বেসরকারি ব্যাংকে আসবে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালনে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহ বলা যাবে না। প্রাপ্য আবেদনগুলো যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, বতর্মানে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকই বেসরকারি খাতের। সবচেয়ে বেশি আবেদন পেয়েছে সোনালী, জনতা ও বেসিক ব্যাংক। জালিয়াতির প্রভাবে খেলাপি ঋণের দিক দিয়েও শীর্ষে রয়েছে এই ব্যাংকগুলো। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে জনতা ব্যাংকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। আর বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে ৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।

জানা গেছে, পুনঃতফসিলের জন্য জনতা ব্যাংকে আবেদন করেছে একক গ্রাহকের ঋণসীমা অতিক্রম করে কয়েকগুণ ঋণসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আলোচিত এননটেক্স। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল চূড়ান্ত প্রায়। জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুছ ছালাম আজাদ এর আগে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এননটেক্স এর ঋণ ২ শতাংশ সুদে পুনঃতফশিল করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads