• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
থামছে না বন্ড সুবিধার অপব্যবহার

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

থামছে না বন্ড সুবিধার অপব্যবহার

টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে দেশীয় কাগজশিল্প

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ঠেকানো যাচ্ছে না কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্যে। ফলে টিকে থাকার কঠিন চ্যালেঞ্জে দেশীয় কাগজশিল্প। অথচ দেশীয় কাগজশিল্পগুলোই দেশের চাহিদার শতভাগ জোগান দিতে সক্ষম। সরকারের নীতিসহায়তা পেলে কাগজ রপ্তানি করে বড় আয় করা সম্ভব। একই সঙ্গে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ঠেকানোর দাবি জানিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।  

এমন প্রেক্ষাপটে কাগজে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার অপব্যবহার ঠেকাতে রাজধানীতে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। নয়াবাজার জিন্দাবাহার লেন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়েছে সংস্থাটি। অভিযানে ওই এলাকার চাঁন মিয়া পেপার মার্কেট ও এর আশপাশের গুদামগুলো থেকে প্রায় ১০০ টন বিভিন্ন ধরনের অবৈধ বন্ডেড কাগজ উদ্ধার করা হয়। আটক পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। উদ্যোক্তারা বলছেন, এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

বাংলাদেশ পেপার মিলস্ অ্যাসোসিয়েশনের সচিব নওশের আলম বাংলাদেশের খবরকে রাতে টেলিফোনে বলেন, এদেশে বন্ড সুবিধায় সবচেয়ে বেশি আমদানি হচ্ছে কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য। লাভ না রেখে শুধু উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সমান রেখে যে দামে দেশি প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য বিক্রি করছে, তার চেয়ে বিনাশুল্কে আমদানিকৃত একই জাতীয় পণ্য কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে লোকসান গুণে দেশীয় কাগজশিল্পগুলোর টিকে থাকা এখন কঠিন হয়ে পড়ছে।

সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর নয়াবাজারের জিন্দাবাহার লেন এলাকার চাঁন মিয়া পেপার মার্কেট ও এর আশপাশে অভিযান চালিয়ে গতকাল ৩টি গুদাম থেকে ১০০ টন অবৈধ বন্ডেড কাগজ উদ্ধার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। এসব পণ্য শুল্ক কর পরিশোধ করে আনা হলে সরকারের কোষাগারে জমা হতো ৭৫ লাখ টাকা। বন্ড দুর্নীতির কারণে সরকার এ পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একইভাবে রাজধানীসহ অন্যত্রও সক্রিয় এই অসাধু চক্রটি।

গতকাল দুপুরে শুরু হওয়া অভিযান সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিচালিত হয়। অভিযানে যৌথভাবে নেতৃত্ব দেন উপ-কমিশনার রেজভী আহমেদ, সহকারী কমিশনার মো. আল আমিন, শরীফ মোহাম্মদ ফয়সাল ও মো. আকতার হোসেন।

দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে দেশি কাগজশিল্প স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ বিনাশুল্কে বন্ড সুবিধায় কাগজ ও কাগজজাতীয় কাঁচামাল কারখানায় পণ্য উৎপাদনে ব্যবহারের কথা বলে আনা হচ্ছে। তবে কারখানায় ব্যবহার না করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে একটি অসাধু চক্র। এভাবে বন্ড দুর্নীতির কারণে দেশি কাগজশিল্প এখন লোকসানে পড়েছে।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ সব বন্ডেড পণ্যের ব্যবসার উৎস-মাধ্যম-গন্তব্য চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কঠোর অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব পণ্য কে বা কারা আমদানি করেছে, তার মূল হোতাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, শতভাগ রপ্তানিমুখী কারখানায় ব্যবহারের জন্য সরকার বন্ড সুবিধা নামে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছে। শর্ত থাকে, এ সুবিধায় আনা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু একটি অসাধু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে কারখানায় ব্যবহার না করে খোলাবাজারে বিক্রি করে হাজার হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীকে আটক করতে এনবিআরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ঢাকা কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেট অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে প্রায় শতাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় ভ্যাট কর্মকর্তা, সিআইডি, ডিএমপি সদর দপ্তর ও স্থানীয় থানা পুলিশ অভিযানে সহায়তা করে। অভিযানের শুরুতেই অবৈধ বন্ডেড পণ্যের ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দোকান বন্ধ করে দেন। মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তারা  জোট বেঁধে বিভিন্নভাবে অভিযানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে গুদামে তল্লাশি চালিয়ে যাওয়া হয়।

এনবিআরের সর্বশেষ হিসেবে দেশে বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৈরি পোশাকখাত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান  বেশি। সারা দেশে ছাড়িয়ে থাকা সাড়ে ৯ হাজার বন্ড সুবিধা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকেরও বেশি এবং ঢাকা কাস্টমস্ বন্ড কমিশনারেটের আওতায় থাকা ৬ হাজারের মধ্যে ৪ হাজারই গার্মেন্টস বন্ড। বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্যের অধিকাংশই কাগজ ও কাগজ জাতীয় পণ্য।

সরেজমিনে রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজার, হাশেম টাওয়ারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শূল্কমূক্ত ভাবে আমদানি করা আর্ট বোর্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, প্রিন্টিং পেপারসহ বিভিন্ন কাগজ জাতীয় পণ্যের রমরমা অবৈধ ব্যবসা চলছে। দেশীয় শিল্পে উৎপাদিত প্রতি টন ২০০ থেকে ৩৫০ জিএমএমের (গ্রাম/ বর্গ ফুট) আর্ট বোর্ড ১ লাখ ২ হাজার থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকায়, ১৬ জিএমএমের হার্ড টিস্যু ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়, ডুপ্লেক্স বোর্ড ৬২ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়, জিএমএমের সাদা প্রিন্টিং পেপার (কাগজ) ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ খোলা বাজারে বন্ড অপব্যবহারে বিক্রি হওয়া একই পরিমাণের একই জাতীয় আর্ট বোড ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা, হার্ড টিস্যু ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়,  ডুপ্লেক্স বোর্ড ৫২ থেকে ৫৮ হাজার টাকায়, সাদা প্রিন্টিং পেপার (কাগজ) ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads