• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

ব্যাংক

আর কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না- বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমানতকারীদের এই আশ্বাস দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম গতকাল বুধবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মাত্র আট শতাংশ আমানতকারীর হিসাব বীমাকৃত নয়। অর্থাৎ আট শতাংশ আমানতকারী ঝুঁকিতে আছেন। এছাড়া বাকি ৯২ শতাংশ আমানতকারীর হিসাব সম্পূর্ণ বীমাকৃত।

মুখপাত্র বলেন, কোনো ব্যাংক যদি বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ১৮০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীকে এক লাখ টাকা দিয়ে দেবে। বাকি টাকা পরে বন্ধ হওয়া ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে

আমানতকারীকে পরিশোধ করা হবে। ১৯৮৪ সালে আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় যে আইন করা হয়, সেখানে আমানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার টাকা। পরে ২০০০ সালে আমানত বীমা আইন প্রবর্তন করে এক লাখ টাকা করা হয়। বর্তমানে এই আইনে আমানতকারীরা এক লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে। তবে সংশোধিত আইনে এটি বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোনো ব্যাংক অবসায়নের ঘোষণা দিলে অনধিক ১৮০ দিনের মধ্যে আমানতকারীদের এক লাখ টাকা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘আমানত বীমা ট্রাস্ট তহবিল’ থেকে পরিশোধ করা হবে।

দেশের তফসিলি ব্যাংকসমূহের ক্ষুদ্র আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে আমানত বীমা সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ওই অধ্যাদেশ অনুযায়ী যেকোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়নের ক্ষেত্রে আমানতকারীদের আমানতের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য কভারেজের পরিমাণ ৬০ হাজার টাকা।

পরে ২০০০ সালে ওই অধ্যাদেশ রহিত করে ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ প্রবর্তন করা হয়। ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০’-এ আমানতকারীদের স্বার্থ আরো সুরক্ষিত করতে কভারেজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এক লাখ টাকা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০’-এ একজন আমানতকারীর জন্য ইনস্যুরেন্স কভারেজের পরিমাণ নির্ধারিত থাকলেও কভারেজের পরিমাণ বৃদ্ধি করার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তফসিলি ব্যাংকের ন্যায় নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকেও ডিপোজিট ইনস্যুরেন্সের আওতায় আনা এবং ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স কভারেজের পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ধারা সংযোজনপূর্বক ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০’ সংশোধন করে ‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। প্রস্তাবিত ‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’-এ কভারেজের পরিমাণ সময়ে সময়ে বৃদ্ধি/নির্ধারণ করার ক্ষমতা ট্রাস্টি বোর্ড তথা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত ঘোষণা করলে অনধিক ১৮০ দিনের মধ্যে আমানতকারীদের প্রাপ্য টাকা আমানত বীমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে পরিশোধ করা হবে। এছাড়া বর্তমান বীমা তহবিলে সংরক্ষিত টাকার পরিমাণ অনুযায়ী ৯২% আমানতকারীর হিসাব সম্পূর্ণ বীমাকৃত। এর বাইরেও, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’-এর ৭৪ ধারা অনুসারে কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত হলে উক্ত ব্যাংকের সম্পদ থেকে সমস্ত আমানতকারীর পাওনা পরিশোধের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। ‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’ প্রবর্তনের পর ধারা ৭ অনুসারে ব্যাংকের ন্যায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরাও এ অধিকার প্রাপ্য হবেন। এছাড়া প্রস্তাবিত আইন মোতাবেক কভারেজের পরিমাণ দ্বিগুণ করা সম্ভব হলে প্রায় ৯৬ শতাংশ আমানতকারী সম্পূর্ণ বীমাকৃত হবে। আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিলের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি ট্রেজারি বন্ড খাতে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। ওই বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা ও তফসিলি ব্যাংকসমূহের দেওয়া প্রিমিয়ামের মাধ্যমে তহবিলের অর্থ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবিষ্যতে শুধু এই তহবিল থেকেই শতভাগ আমানতকারীর আমানত বীমার আওতায় আসবে বলে আশা করা যায়। 

ব্যাংক কোম্পানি আইনের পাশাপাশি আমানত বীমা আইন বাংলাদেশ সরকারের একটি পৃথক নিরাপত্তাবলয় অর্থাৎ আমানতকারীদের বীমাকৃত অর্থ প্রদানের পৃথক ব্যবস্থা যা আমানতকারীদের আমানত সুরক্ষা নিশ্চিত করে। প্রস্তাবিত ‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’-এ, তফসিলি ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকেও আমানত সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে এ আইন বলবৎ হলে ব্যাংকের ন্যায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আমানতকারীরাও সুরক্ষিত হবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads