• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সাড়ে ৯ বছরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন

প্রতীকী ছবি

ব্যাংক

সাড়ে ৯ বছরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০২০

বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে আরো কমছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এটি আগের সাড়ে নয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ঋণ প্রবৃদ্ধি। এর আগে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে সর্বনিম্ন ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ওই সময়ের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বেসরকারি খাতে সর্বনিম্ন ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির শেষে বেসরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৭০ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। আর গত জুন শেষে এর পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ১০ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকগুলো চাহিদামতো আমানত সংগ্রহ করতে না পারায় অধিকাংশ ব্যাংকের তারল্য সংকট রয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণ আদায় করতে না পারায় এবং খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিমালায় পরিবর্তন এবং সুদের হার নয় ছয় বাস্তবায়নে চাপ থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাচ্ছেন না। এসব কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।

অন্যদিকে সুদের হার বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ী উদ্যোক্তারা ঋণ নিচ্ছিলেন না। আবার আগামী এপ্রিল থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ পাওয়া যাবে। এই আশায় কোনো কোনো ব্যবসায়ী নতুন করে ঋণ না নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন। ফলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে আর্থিক খাতে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে বেসরকারি খাতের ঋণের এই নিম্নগামী পরিস্থিতি আরো কিছুদিন চলতে পারে।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর যেমন সমস্যা রয়েছে, তেমনি ঋণের চাহিদাও কমে গেছে। সার্বিকভাবে দেশে বিনিয়োগ এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে। এতে করে ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না এবং উৎপাদনের যে ক্ষমতা রয়েছে সেই ক্ষমতাও পুরোপুরি ব্যবহার যাচ্ছে না। একদিকে ঋণ সরবরাহে সমস্যা অন্যদিকে ঋণের চাহিদাও কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ৩১ জুলাই চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর আগে গত বছরের জানুয়ারি মাসে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। জুলাই মাসে এসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু তারপরও তা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি হয় ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

সবশেষ ১৪ মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি : ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এর পর মার্চে ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ, এপ্রিলে ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, মে মাসে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ, জুনে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, জুলাইয়ে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, আগস্টে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ, অক্টোবরে ১০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, নভেম্বরে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, জানুয়ারিতে ৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads