• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
ঈপ্সিত লক্ষে জ্যাকুলিন

ছবি : সংগৃহীত

বলিউড

ঈপ্সিত লক্ষে জ্যাকুলিন

  • তাবাস্সুম তৈয়্যবা
  • প্রকাশিত ১৪ জুন ২০১৯

জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ। ছিলেন লঙ্কান সুন্দরী। হয়ে গেলেন বলিউড অভিনেত্রী। রূপ ও সৌন্দর্যে অনেক খ্যাতিমান তারকাকেও পেছনে ফেলেছেন এই লাস্যময়ী। অভিনয় দিয়ে হিন্দি সিনেমায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। এবার বড়পর্দার পাশাপাশি ডিজিটাল মিডিয়াতেও দেখা যাবে জ্যাকুলিনকে। নেটফ্লিক্সের ছবি ‘মিসেস সিরিয়াল কিলার’-এ অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শিরিষ কুন্দর পরিচালিত ‘মিসেস সিরিয়াল কিলার’ থ্রিলার ঘরানার ছবি।

এ ছবি প্রসঙ্গে জ্যাকুলিন বলেন, ‘সত্যি বলতে, বলিউডের কমার্শিয়াল ছবি আর নেটফ্লিক্স অরিজিনালস দুটোই ভালো। কিন্তু অভিনেতাদের জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ, আমরা বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারছি। মূলধারার ছবির সঙ্গে আমি সরাসরি যুক্ত। কিন্তু নেটফ্লিক্সের মতো প্ল্যাটফরমে অন্য কিছু চেষ্টা করতে পারছি। ঝুঁকি নিয়ে কিছু কাজ করতে চাই।’

জ্যাকুলিন আরো বলেন, ‘মূলত আমি ওয়েব সিরিজে কাজ করতে বরাবরই অনাগ্রহী ছিলাম। এর আগে অনেক প্রস্তাবই ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এই সিরিজটার গল্পটা অন্যরকম সুন্দর মনে হয়েছে আমার কাছে। তা ছাড়া এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে আমাকে। সবমিলিয়ে সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইনি। আমার বিশ্বাস, এই ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে নতুন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড়াবো আমি। দর্শকরাও নতুনভাবে আমাকে আবিষ্কার করবেন।’

বছরে তিন-চারটি ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এই অভিনেত্রী। সবটুকু নিংড়ে দিয়েই সেসব প্রজেক্টে কাজ করেন তিনি। কিন্তু এখন কিছুদিন শুধু ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের ছবিতে মনোযোগ দিতে চান। সচেতনভাবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জ্যাকুলিন।

এমনিতে ব্যক্তিজীবনে জ্যাকুলিন বেশ শৌখিন মানুষ। এর প্রমাণ মিলছে তার মুম্বাই অ্যাপার্টমেন্টে। এ যেন ছোট্ট এক প্যারিস। সাজানো-গোছানো আর ফ্যাশনেবল এক বসতঘর তার। একাকী সময় উপভোগের জন্য এর চেয়ে ভালো বাসস্থান আর হয় না। খোলামেলা স্থান আর সাগর ভালোবাসেন তিনি। তার মুম্বাইয়ের অ্যাপার্টমেন্টটি সাগরের দিকে মুখ করা। ফুল, সংগীত, বই, সূর্যালোক এসবই তার নারীসুলভ রুচির পরিচায়ক। বোঝাই যায়, তিনি মূলের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন।

হোয়াইট, প্যাস্টেল ব্লু এবং পিঙ্কের ছটায় রঙিন হয়েছে তার অন্দরমহল। সুপরিসর মেঝে আর ছাদের মাঝের জানালা থেকে সাগর দেখা যায়। ভিন্টেজ সাজে ছোট ছোট গাছ রয়েছে এখানে সেখানে, যা ঘরে অন্য এক সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে। চারদিকে যেন প্রাণশক্তির ছড়াছড়ি। অনেকটা জ্যাকুলিনের মতোই।

অপরদিকে ফিটনেস ধরে রাখতে জ্যাকুলিন যে অনেক বেশি সচেতন, তারও প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে তিনি সংগীতপ্রেমীও। বাড়িতে ব্যক্তিগত পোল-ড্যান্স স্টুডিও রয়েছে। লিভিং রুমে আছে পিয়ানো। বছরের পর বছর ধরে সংগৃহীত বইয়ের সংগ্রহের দেখাও মিলবে সেখানে।

মিস শ্রীলঙ্কা ইউনিভার্স শিরোপা জয়ী সুন্দরী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ বলিউডে পদচারণা করেছেন খুব বেশিদিন আগে নয়। গত কয়েক বছরে একজন সুন্দরী, গ্ল্যামারাস এবং আকর্ষণীয় অভিনেত্রী হিসেবে নিজের আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলতে পেরেছেন। অভিনীত ছবিগুলোতে দর্শক তাকে বরাবরই গ্ল্যামারাস ইমেজে দেখে আসছেন। নির্মাতারাও জ্যাকুলিনকে বিচিত্র রোলে একজন সাহসী নায়িকা হিসেবে পর্দায় তুলে ধরতে সচেষ্ট রয়েছেন। হিন্দি সিনেমার জগতে এখন তার মতো সাহসী স্মার্ট সুন্দরী নায়িকাদের বেশ কদর লক্ষ করা যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা জ্যাকুলিন গ্ল্যামারাস রোলের পাশাপাশি অ্যাকশন গার্ল হিসেবেও কম যান না। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে ‘রেস-টু’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে।

‘রেস-২’র সফলতার পর গত বছর মুক্তি পায় তার ‘রেস-থ্রি’ ছবিটি। ছবিটিও আশানুরূপ ব্যবসা করে। গত বছর একটি ছবি মুক্তি পেলেও নতুন বছরে বেশ কয়েকটি ছবি নিয়ে দর্শকের সামনে আসছেন জ্যাকুলিন।

এ বছর মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে জ্যাকুলিনের ‘আঁখি-টু’, ‘ডেফিনেশন অব ফেয়ার’, ‘গো ড্যাডি’ এবং ‘ড্রাইভ’ ছবিগুলো। সবমিলিয়ে চলতি বছরে দেখা মিলবে জ্যাকুলিনের ঝলক। জ্যাকুলিনের ক্যারিয়ারের উত্থান শুরু হয় ‘মার্ডার-২’ ছবির মাধ্যমে। এতে বেশ সাহসী ইমেজে পর্দায় উপস্থিত হতে দেখা গেছে। নির্মাতারা এরপর থেকে তাকে নিয়ে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। ‘কৃষ’ ছবির সিক্যুয়েল এবং ‘রাজ থ্রিডি’তে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও জ্যাকুলিন ইচ্ছে করে প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দিয়েছেন। বারবার একই ধরনের সাহসী আবেদনময়ী নারীর রোলে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে একঘেয়ে হতে চাইনি বলে অফারগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

অনেকেই বলছেন, বর্তমান সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ার পেছনে বলিউডি সিনেমার গ্ল্যামারের পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে একজন বলিউড তারকা হিসেবে জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ বলেন, ‘আমরা কোন পোশাকে পর্দায় আসব, কীভাবে অভিনয় করব সেটা বলে দেওয়া হোক। বলিউডের নায়িকাদের মিছেমিছি দায়ী করা হচ্ছে।  বলিউডের সিনেমার গানের কথায় যাতে অশ্লীলতা প্রকাশ না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অহেতুক বলিউডের মেয়েদের দায়ী করাটা ঠিক নয়।’

একসময় পরিচালক সাজিদ খানের সঙ্গে জ্যাকুলিনের গভীর সম্পর্কের রটনা শোনা গেছে। এসব নিয়ে তার তেমন মাথাব্যথা নেই। এ প্রসঙ্গে অনেকটা ডেমকেয়ার ভাব নিয়ে জ্যাকুলিন বলেন, ‘আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরনের রটনা খুবই মামুলি ব্যাপার। এসব নিয়ে মাথা ঘামালে কাজ করা যাবে না। সবকিছু মোকাবেলা করেই এখানে চলতে হয়। সিনেমার নায়ক-নায়িকা এবং অন্য লোকজনদের আলাদা একটি ইমেজ রক্ষা করে সবার চোখে ভালো মানুষ সেজে থাকতে হয়। ব্যক্তিজীবনে সৎ ও সুন্দরভাবে সুখী জীবনযাপনটাই হলো বড় কথা। কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে রটনা হতে পারে শোবিজে। আমি ব্যাপারটিকে তেমন পাত্তা দিই না।’

বিউটি কুইন থেকে বলিউডের তারকা বনে যাওয়া অনেক সুন্দরীদের মধ্যে একজন জ্যাকুলিন একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে ক্রমেই আরো বিকশিত করে তুলছেন। ‘আমি একজন অভিনেত্রী হিসেবে চরিত্রটি রূপায়ণের সময় নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাই। অভিনীত চরিত্রটি যদি দর্শকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হয়ে ওঠে, তাহলে সব পরিশ্রমই বৃথা বলে মনে করি। আমি আমার প্রতিটি ছবিতে অভিনয়ের সময় বৈচিত্র্যের প্রকাশ ঘটাতে চাইছি সাজ-পোশাক, মেকআপ, লুক ইত্যাদিতে নানা পরিবর্তন আনছি সচেতনভাবে। আমি মনে করি এর মাধ্যমেও অনেকটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছি। দর্শক আমার অভিনয়, সাজ-পোশাক, লুক ইত্যাদিতে আলোড়িত হচ্ছেন। আমি আগামীতেও এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাব।’ বলেন জ্যাকুলিন।

সিনেমায় নিজেকে সাহসী ভঙ্গিতে উপস্থাপন প্রসঙ্গে কোনো ঘোরপ্যাঁচ না করে সহজভাবে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, আমি ব্যাপারটিকে আমার অভিনীত চরিত্রের দাবি মেটাতে গিয়ে সাধ্যমতো নিজেকে উপস্থাপন করব তবে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব ঠিক ততক্ষণ নিজেকে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরব।

আগামীতে আর কতদিন অভিনয় করতে চান জ্যাকুলিন, জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। এ প্রশ্নের জবাবে জ্যাকুলিন বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত অভিনয় করে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে না পারি ততদিন পর্যন্ত অভিনয় করতে চাই। আমি এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে দ্বিধা করব না। যেদিন আমার এ অধ্যায় শেষ হয়ে যাবে তখন চমৎকার স্ত্রী হতে চাই সংসার জীবনে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads