• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

বলিউড

‘সবচেয়ে মিষ্টি বউ’

  • বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৬ নভেম্বর ২০১৯

ছোটবেলায় ফিরে যেতে কার না ভালো লাগে। ছোটবেলা মানেই ফিরে পাওয়া একরাশ স্মৃতি। বৃহস্পতিবার শিশু দিবস উপলক্ষে বলিউডের বাঙালি সুন্দরী বিপাশা বসু তার ছোটবেলার ছবি শেয়ার করেন ইনস্টাগ্রামে। সেখানে তাকে দেখা যায় ছোটবেলার বউয়ের সাজে। পাশেই তার সত্যিকারের বিয়ের দিনের একটি ছবি জুড়ে দিয়েছেন নায়িকা।

ছবি দেখে ভক্তরা যতটা মুগ্ধ ঠিক ততটাই মুগ্ধ হয়েছেন বিপাশার স্বামী করণ সিং গ্রোভার। ছবিতে দেন অ্যান্ড নাও ক্যাপশন করে ছবি শেয়ার করেছেন বিপাশা। সেখানে ‘সবচেয়ে মিষ্টি বউ’ কমেন্ট লিখে ভালোবাসা জানিয়েছেন করণ। ছবিটিও নিমেষে ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

২০১৬ সালে অভিনেতা করণ সিং গ্রোভারকে বিয়ে করেন বিপাশা। এটি নায়িকার তৃতীয় বিয়ে। ১৯৯৫ সালে তিনি প্রথম বিয়ে করেছিলেন অভিনেতা দিনো মোরিয়াকে। তার সঙ্গে ছিলেন ২০০১ সাল পর্যন্ত। ২০০২ সালে বিয়ে করেন আরেক অভিনেতা জন আব্রাহামকে। ২০১৫ সালে তাকেও ছেড়ে দেন।

অন্যদিকে করণেরও এটি তৃতীয় বিয়ে। এই অভিনেতা ২০০৮ সালে প্রথম বিয়ে করেন শ্রদ্ধা নিগমকে। পরের বছরই ডিভোর্স। ২০১২ সালে তিনি বিয়ে করেন জেনিফার উইঙ্কেট নামে এক নারীকে। ২০১৪ সালে তার সঙ্গেও বিচ্ছেদ হয়। এরপর ২০১৬ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন বিপাশার সঙ্গে।

গ্ল্যামার জগতে কাজ করার কথা ছিল না বিপাশার। গায়ের রঙ কিছুটা কালো হওয়ায় শৈশবে অনেকের কাছে কদাকার বলেই বিবেচিত হতো সে। একই সাথে পড়াশোনায় ভালো থাকায় সেখানেই ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছেটা ছিল। লক্ষ্য ছিল পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হবার। দিল্লির একটা বাঙালি পরিবারে জন্ম নেওয়া পরিবারের মেয়ের এমন ভাবাটা অমূলক ছিল না।

কিন্তু বিধাতা কপালে যা লিখে রাখে সেটা খণ্ডানোর সাধ্য কার? কলকাতার এক হোটেলে সাবেক সুপার মডেল মেহের জেসিয়ার সাথে দেখা হবার পরেই তার গতিপথ পাল্টে যায়। জেসিয়া তাকে একটা সুপার মডেল প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণের পরামর্শ দেয়। ১৯৯৬ সালে ফোর্ড আয়োজিত ‘গডরেজ সিনথোল সুপারমডেল কনটেস্টে’ সে বিজয়ী হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ফলে নিউইয়র্কে একটা মডেলিং প্রতিযোগিতায় ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় ছোটবেলা থেকেই তার আচার আচরণের জন্য সবার কাছে টমবয় হিসেবে পরিচিত বিপাশা বসু নামের এই বাঙালি মেয়ে।

সুপার মডেল প্রতিযোগিতায় ভালো পারফরম্যান্সের দরুন বিচারকদের নজর কাড়েন বিপাশা। তবে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ব্রেকটা পান ১৯৯৮ সালে সনু নিগামের ‘কিসমত’ অ্যালবামের ‘তু’ গানের মিউজিক ভিডিও মডেলে পারফর্ম করে। ডিশ এন্টেনার আগ্রাসনের সময়ে মিউজিক ভিডিওটা তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং বিপাশা বসুও সাধারণ মানুষের দৃষ্টি কাড়েন।

খুব দ্রুতই তিনি বলিউডেও সুযোগ পেয়ে যান। ২০০১ সালে আব্বাস মাস্তানের আজনবী চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হয়। যদিও তার চরিত্রটি ছিল নেগেটিভ কিন্তু এরপরেও তার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এই সিনেমার জন্য তিনি ‘ফিল্মফেয়ার নবাগতা অভিনেত্রী’র পুরস্কার পান। এছাড়া সমালোচকরাও তার অভিনয়ের প্রশংসা করেন। শুরু হয় বলিউডে তার পথচলা।

২০০২ সালে বিপাশা বসু একক নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। বিক্রম ভাটের থ্রিলার সিনেমা ‘রাজ’ সেই বছরের অন্যতম সফল ছিল। এই সিনেমার জন্য বিপাশা বসু ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পান এবং বলিউডে নিজের একটা অবস্থান গড়ে নেন। সেই বছরেও আরো কয়েকটা সিনেমা মুক্তি পেলেও সেগুলো বক্স অফিসে খুব বেশি সাড়া জাগাতে পারেনি।

পরের বছর পুজা ভাটের ‘জিসম’ সিনেমার মাধ্যমে আবার আলোচনায় আসেন বিপাশা। এই সিনেমায় তিনি একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন যেখানে তিনি তার স্বামীকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। সিনেমাটির জন্য তিনি ‘ফিল্মফেয়ার ভিলেন অ্যাওয়ার্ডে’র জন্য মনোনীত হন।

জিসম সিনেমার পরপরই তিনি বলিউডে নিয়মিত হতে থাকেন। ২০০৪ সালে তার ৪ টি সিনেমা মুক্তি পায়। বিক্রম ভাটের ‘অ্যায়তবার’ সিনেমাতে তিনি অমিতাভ বচ্চনের মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সিনেমাটা সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়তে ব্যর্থ হয়। পরপরই ‘রামায়ান’ এর অবলম্বনে নির্মিত মনি শংকরের ‘রুদ্রাক্ষ’ বক্স অফিসে খুব বাজে ভাবে ব্যর্থ হয়। পরের সিনেমা ‘রক্ত’ এ বিপাশার চরিত্রটি অবশ্য প্রশংসিত হয়। বছরের শেষ ভাগে ‘মাদহোশি’-তেও অভিনেত্রী হিসেবে উতরে যায়।

বিপাশা ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হিট সিনেমার দেখা পান ২০০৫ সালে ‘নো এন্ট্রি’ সিনেমার মাধ্যমে। সিনেমাটা সেই বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমার তালিকায় নাম লেখায় এবং বিপাশা সেই বছরের ‘ফিল্মফেয়ারসহ অভিনেত্রী পুরস্কারে’র জন্য মনোনয়ন পান। ২০০৬ সালে তার ৪টি সিনেমা মুক্তি পায় এবং প্রতিটাতেই তিনি সাফল্যের দেখা পান।

কমেডি মুভি ‘ফির হেরাফেরি’ সেই বছরের অন্যতম হিট। এরপর মধুর ভান্ডারকারের ‘কর্পোরেট’ সিনেমাতে কর্পোরেট কালচারে একজন নারীর ভুমিকা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলেন। বিশাল ভারাদওয়াজের ‘ওমকারা’ সিনেমাতে একটা আইটেম গানে অংশ নেন যা কিনা ভারত এবং ভারতের বাইরেও প্রশংসিত হয়। বছরের শেষ ভাগে ‘ধুম ২’ সিনেমাতে তিনি একজন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেন।

২০০৮ সালে আব্বাস মাস্তানের ‘রেস’ সিনেমা তার ক্যারিয়ারের আরেকটা সুপার হিট সিনেমা। একই বছরে ‘বাচনা অ্যাই হাসিনো’ সিনেমায় তিনি একজন সুপার মডেলের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং এই পারফর্মেন্সের জন্য তিনি দ্বিতীয় বারের মতো ‘ফিল্মফেয়ারসহ অভিনেত্রী পুরস্কারে’র মনোনয়ন পান।

বিপাশার ক্যারিয়ারের আরেকটা উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘রাজ থ্রি’। সিনেমাটা ব্লকবাস্টার হিটের তকমা অর্জন করে।

কেবল হিন্দি সিনেমাতেই নয়, অন্যান্য ভাষার সিনেমাতেও বিপাশা অভিনয় করেছেন। ২০০২ সালে তেলেগু সিনেমা ‘টাক্কারি ডংগা’, ২০০৫ সালে তামিল সিনেমা ‘শচীন’, ২০০৫ সালে বাংলা সিনেমা ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ এবং ২০১৩ সালে ইংরেজি সিনেমা ‘দি লাভার্স’-এও অভিনয় করেন। ‘পিংক প্যান্থার টু’ নামের আরেকটা সিনেমাতে অভিনয়ের জন্যেও তিনি প্রস্তাব পান। কিন্তু তিনি প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দেন যা কিনা পরবর্তীতে গ্রহণ করেন ঐশ্বরিয়া রাই। এছাড়া ২০১৫-১৬ সালে টেলিভিশনের জন্য নির্মিত ‘ডর সবকো লাগতা হ্যায়’-এর উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেন।

এগুলো ছাড়াও স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে বিপাশা কিছু কাজ করেছেন। ২০১০ সালে তার ফিটনেস বিষয়ক প্রথম ডিভিডি ‘লাভ ইউর সেলফ’ মুক্তি পায়। ডিভিডিটাতে ওজন কমানোর জন্য ৬০ দিনের একটা রুটিন দেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালে মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় ডিভিডি ‘ব্রেক ফ্রি’ এবং ২০১৪ সালে মুক্তি পায় তৃতীয় ডিভিডি ‘আনলিশ’।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার আয়োজিত বছরের কাঙ্ক্ষিত নারীর তালিকায় ২০১১ সালে তার অবস্থান ছিল ৮ম, ২০১২ সালে ১৩তম এবং ২০১৩ সালে সপ্তম। ইউকে ম্যাগাজিন ‘ইস্টার্ন আই’ ২০০৫ এবং ২০০৭ সালে বিপাশা বসুকে ‘এশিয়ার সেরা যৌন আবেদনময়ী নারী’ নির্বাচন করেন।

তবে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কারটা পান সম্ভবত কলকাতা থেকেই। ২০১৩ সালে ১৯তম চলচিত্র উৎসবের শেষ দিনে পশ্চিম বাংলার পাচজন অভিনেত্রীকে ‘পঞ্চকন্যা’ উপাধি দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রানী মুখার্জি, সুস্মিতা সেন, কোয়েল মল্লিক এবং মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরেকজন ছিলেন বিপাশা বসু।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads