• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
বিনিয়োগ জোগানো অনিশ্চিত

আগামী অর্থবছরে দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে হবে

প্রতীকী ছবি

বাজেট

বিনিয়োগ জোগানো অনিশ্চিত

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১০ জুন ২০১৮

আগামী অর্থবছরের জন্য বেঁধে দেওয়া মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ করতে হবে ৮ লাখ ৫১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর মোট ৭ লাখ ৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এ হিসাবে ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণে বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা।

ব্যাংকে তারল্য সঙ্কটের কারণে ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ বিতরণে স্থবিরতা, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ থাকা, বিদ্যুৎ সরবরাহ পর্যাপ্ত মানে উন্নীত না হওয়া ও সড়ক অবকাঠামোর অপ্রতুলতার কারণে এক বছরে প্রায় ২১ শতাংশ বাড়তি বিনিয়োগ আহরণ সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। জাতীয় সংসদে ঘোষণা করা বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আগামী অর্থবছর বেসরকারি খাতে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে। আর সরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে ২২ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা। এ লক্ষ্য পূরণে সরকারের ব্যাংক ঋণ বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। বাজেটে ১ লাখ ২৫ হাজার ২২৯ কোটি টাকা ঘাটতি আহরণে ব্যাংক থেকে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে।  এ বিষয়ে ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নেওয়ার কারণে ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে আসবে। এর ফলে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ হবে না। বিনিয়োগের লক্ষ্য পূরণ হলেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, প্রতিবছর বেসরকারি খাতে প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়ছে ৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি যোগ করলে এ হার ১৫ শতাংশের মতো হয়। সম্প্রতি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বেশ কিছু প্রস্তাব পাওয়া গেছে তা ছাড়া ব্যক্তি খাতে বিদেশি ঋণও আসছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক শতাংশ বাড়লে ব্যক্তি বিনিয়োগের লক্ষ্য পূরণ হবে। তবে এ জন্য জোরদার প্রচেষ্টা চালাতে হবে বলে মনে করেন তিনি। পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া জিডিপির লক্ষ্য পূরণ হবে বলেও মনে করেন সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার এ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবকাঠামো খাতে সরকারের বিনিয়োগের প্রভাবে দীর্ঘমেয়াদে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। আর প্রবৃদ্ধি অর্জনে মূল ভূমিকা রাখে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ। গত কয়েক বছর ধরে সরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ব্যাপক হারে বাড়লেও বেসরকারি বিনিয়োগ রয়েছে একই জায়গায়। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছর বেসরকারি খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আহরণ করতে চাইছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছর বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ৩৩ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। চলতি অর্থবছর জিডিপির ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ হবে বলে প্রাথমিক হিসাব করে জানিয়েছে বিবিএস। এ হিসাবে এক বছরে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে ২ দশমিক ০৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো বছর এত বেশি বিনিয়োগ বাড়েনি বলে পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। বিবিএস জানিয়েছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছর বিনিয়োগ হয়েছিল জিডিপির ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশ অর্থ। এ হিসাবে ১৬ বছরে বিনিয়োগ বেড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

আগামী অর্থবছর ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আহরণ করতে হবে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার বিনিয়োগ। চলতি অর্থবছর ব্যক্তি খাতে ৫ লাখ ২০ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।

বিবিএস সূত্র জানায়, চলতি বছর জিডিপির ২৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে ব্যক্তি খাতে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে পরবর্তী ৭ বছর ব্যক্তি বিনিয়োগ ঘুরপাক খেয়েছে ২২ শতাংশের ঘরে। এর আগের চার অর্থবছর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ছিল ২১ শতাংশের সামান্য বেশি।

অবশ্য সরকারি বিনিয়োগে কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত অর্থবছর পর্যন্ত এ খাতে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৮ দশমিক ২২ শতাংশ। আগামী অর্থবছর সরকারি বিনিয়োগ ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে সরকারকে বিনিয়োগ করতে হবে ২ লাখ ১২ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে সরকার। ২২ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা বাড়তি বিনিয়োগ করতে পারলেই সরকারের লক্ষ্য পূরণ হবে।

বাজেট বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেশ কিছু প্রকল্পের উল্লেখ করে আগামীতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশার কথা শুনিয়েছেন। সরকারের অগ্রাধিকার ফাস্ট ট্র্যাকের ১০ প্রকল্পও রয়েছে আলোচনায়। সরকারের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বৃদ্ধি, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে এসব উদ্যোগের কোনোটিই নিকট ভবিষ্যতে আলোর মুখ দেখবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সম্প্রতি বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা ও তারল্য সঙ্কটের কারণে আগামীতে ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তা ছাড়া অবকাঠামো খাতে উন্নতির কাজ চলমান থাকলেও বড় প্রকল্প শেষ হচ্ছে না। এ অবস্থায় আগামী বাজেটে ব্যক্তি বিনিয়োগে লক্ষ্য পূরণের পর্যাপ্ত রসদ নেই। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণও কঠিন হবে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।

এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। তা ছাড়া সুদের হার বেড়ে গিয়ে বিনিয়োগের ব্যয়ও বাড়বে। তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে গুণগত মানসম্পন্ন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তা ছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে তিনি অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads