• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
এডিপি ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকা

ছবি : সংগৃহীত

বাজেট

অর্থবছর ২০১৯-২০

এডিপি ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকা

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৯ মে ২০১৯

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রায় দুই লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়ন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ থাকবে এক লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর অবশিষ্ট ১২ হাজার ৩৯২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো নিজেদের তহবিল থেকে ব্যয় করবে। গত মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় নতুন এডিপির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য খসড়াটি উপস্থাপন করা হবে।

বড় আকারের এডিপি প্রণয়ন করা হলেও চলমান প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ থাকছে মাত্র এক লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এডিপি প্রণয়ন নীতিমালায় নতুন প্রকল্প নিরুৎসাহিত করলেও এ খাতে আট হাজার ৩৯৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। থোক বরাদ্দের এ অর্থ থেকে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে নতুন প্রকল্প অনুমোদন করা হবে। বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে আরো ৯৬১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে থোক আর উন্নয়ন সহায়তাবাবদ নতুন এডিপিতে বরাদ্দ থাকছে নয় হাজার ৩৫৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের শুরুতে এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন পায়। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার তহবিল থেকে সাত হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি বছরের এডিপির তুলনায় নতুন এডিপির আকার বাড়ছে ৩৪ হাজার ২৪৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ১৯ শতাংশ।

বড় এডিপি প্রণনয়ন করা হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরেও কাটছাঁট করে এডিপির আকার নামিয়ে আনা হয়েছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকায়। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা, প্রকল্প সহায়তার ৫১ হাজার কোটি টাকা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার নয় হাজার ৬২০ কোটি টাকা রয়েছে। সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) তুলনায় আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার বাড়ছে ৩৮ হাজার ৪৯৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। শতকরা হিসাবে উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়বে প্রায় ২২ শতাংশ।

চলতি আরএডিপির তুলনায় আগামী অর্থবছরে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ বাড়ছে ১৪ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে ১২ দশমিক ৮৬ ভাগ অর্থ বাড়তি প্রস্তাব করা হয়েছে। ৫১ হাজার কোটি টাকা থেকে ২০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে বিদেশি সহায়তা প্রস্তাব করা হয়েছে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে বাড়তি ৪০ দশমিক ৭৮ শতাংশ বিদেশি সহায়তা আহরণ করতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছোট আকারের বিপুলসংখ্যক প্রকল্প নিয়ে এডিপি প্রণয়ন করার ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রচলিত ধারায় রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রচুর প্রকল্প নেওয়া হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় না। এ অবস্থায় সুনির্দিষ্ট খাত চিহ্নিত করে বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাংলাদেশে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সফলতার হার এমনিতেই কম। দীর্ঘসূত্রতার কারণে কয়েক গুণ বাড়তি ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় আগামীতে বড় এডিপি প্রণয়নের চাইতে বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

এডিপির প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগামী বছর সর্বোচ্চ উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। সড়ক, সেতু, রেল, নৌ ও বিমান পরিবহনে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫২ হাজার ৮০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এডিপির প্রায় ২৬ শতাংশ অর্থ। বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবার ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ পাবে ২৬ হাজার ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পাবে ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এডিপির সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আগামী অর্থবছরেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। নতুন এডিপিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৫৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এ দিকে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে সংশোধিত এডিপির ৫৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ৯৬ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থাৎ ১০ মাসে আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ওই সময় ব্যয় হয়েছিল ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, মার্চ মাসে নতুন অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের নীতিমাল প্রণয়ন করে সরকার। নীতিমালায় নতুন এডিপিতে ৩০ শতাংশ প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এডিপি প্রণয়ন নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগামীতে শুধু অনুমোদিত প্রকল্প এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। প্রকল্প অনুমোদনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ, বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রকল্প ও আগামী অর্থবছরে কাজ শেষ হবে এ রকম প্রকল্পকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং মধ্যমেয়াদি কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাবে নতুন এডিপিতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads