• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
শিক্ষাঙ্গনে ক্ষতি পোষাতে ভার্চুয়াল শিক্ষা

প্রতীকী ছবি

ক্যাম্পাস

করোনার প্রভাব

শিক্ষাঙ্গনে ক্ষতি পোষাতে ভার্চুয়াল শিক্ষা

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২০

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত রোববার স্থগিত করা হয়েছে পহেলা এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কবে নাগাদ খোলা হবে তা-ও নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়েছে প্রাক-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৫ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাকার্যক্রম। এ অবস্থায় বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনলাইন ও টেলিভিশনে ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ইতোমধ্যে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বাংলাদেশ সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে রেকর্ডিং করার ক্লাস প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে রাখা যায় তার উপায় খুঁজছে মন্ত্রণালয়।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর গোলাম ফারুক বলেন, করোনা ভাইরাস কোনো দিকে মোড় নেয় তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তাই আপাতত বাচ্চাদের একাডেমিক টাচে রাখতে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে রেকর্ডিং ক্লাস প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছি।

মাউশির কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের এক্সেস টু ইনফরশেন (এটুআই) প্রকল্পের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম চলবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেরা শিক্ষকদের ক্লাসগুলো রেকর্ডিং করে সংসদ টিভির মাধ্যমে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যবর্তী সময়ে এই ক্লাসগুলো প্রচার করা হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত একেকটি বিষয়ের জন্য মোট ৩৫টি ক্লাস থাকবে।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক  ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, বাচ্চাদের শিক্ষার মধ্যে রাখতে বিকল্প পদ্ধতি খুঁজতে গতকাল এটুআই ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে টেলিভিশনে রেকর্ডিং ক্লাসসহ আরো কিছু বিষয় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, রেকর্ডিং ক্লাস ছাড়াও করোনা নিয়ে সতর্কতামূলক বার্তা ১ কোটি ৪০ লাখ বাচ্চার মায়েদের কাছে এসএমএসের মাধ্যমে পৌঁছানো হবে।

ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত রেইনবো কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে বুধবার অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস দিয়ে শিক্ষার্থীর একাডেমিক বই, লেকচার শিট, খাতাগুলো স্কুল থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে স্কুলের ওয়েবসাইট থেকে নিয়মিত ফলো করার জন্য বলা হয়। সেখানে প্রতিদিনের ক্লাসের শিট ও লেসনগুলো দেওয়া হচ্ছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে ক্লাস শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নম্বর দেওয়া হয়েছে। একই পদ্ধতিতে প্রায় সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে রেখেছে। গত রোববার থেকে দেশের প্রথম সারির ১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৬টি পদ্ধতিতে ভার্চুলায়ালি ক্লাস নিচ্ছে। ধীরে ধীরে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনমুখী হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

যেভাবে চলছে ভার্চুয়াল ক্লাস

বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়ার পদ্ধতি থাকলেও ইউটিউব লাইভ, ফেসবুক লাইভ, গুগল ক্লাসরুম, মাইক্রোসফট টিম, জুম এবং কোর্সেরা এ ৬টি পদ্ধতিতে বাছাই করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্লাসের লেকচার শিট আপলোড করা হবে। সেখানেও শিক্ষার্থীদের বাসার কাজ দেওয়া হয়।

এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো গুগল ক্লাসরুম। অনেকেই শিক্ষকই এখন গুগল ক্লাসরুম (পষধংংৎড়ড়স.মড়ড়মষব.পড়স/) ব্যবহার করে ক্লাস নিচ্ছেন। গুগল স্যুটে নিবন্ধন করে তারপর নির্ধারিত কোড দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন ওই ক্লাসে। একটি কোর্সে অসংখ্য ক্লাসের পাশাপাশি ২০ জন শিক্ষক তাদের ক্লাস যুক্ত করতে পারেন। অ্যাসাইনমেন্টের জন্য গুগল ফরম, গুগল ডক, গুগল ড্রাইভ ও ইউটিউব ভিডিও যুক্ত করার সুযোগ থাকছে। ক্লাসরুমে থেকে যাওয়া ক্লাসের ভিডিওগুলো পরেও দেখা যাবে। শুধু কম্পিউটার নয়, যে কোনো ডিভাইস থেকে শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিতে পারছেন।

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে ক্লাসরুম বানিয়েও কাজে লাগাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কোর্সভিত্তিক আলাদা আলাদা গ্রুপে লাইভ ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ডকুমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, নোটস বিনিময় ছাড়াও লাইভ ক্লাস চলাকালে কমেন্টে শিক্ষার্থীরা জানাতে পারছেন তাদের সমস্যার কথা। ঠিক ওই সময়ে ক্লাসে উপস্থিত না থাকতে পারলেও পরে গ্রুপে ভিডিও হিসেবে থেকে যাবে এই লাইভ ক্লাসগুলো। ভিডিও শেয়ারিংভিত্তিক সবচেয়ে বড় সাইট হচ্ছে ইউটিউব ব্যবহার করে চলছে ক্লাস। নির্ধারিত চ্যানেলে শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক ক্লাসের ভিডিও আপলোড করা হয়। সেই ভিডিওতে ‘প্রাইভেট’ অপশন চালু করে শুধু নির্ধারিত শিক্ষার্থীদের দেখানো হয়। আবার একবারে সব ভিডিও আপলোড করে কোর্সের নির্ধারিত সময়ে ভিডিও প্রিমিয়ার করা যাচ্ছে। বন্ধের এ সময়ে ইউটিউব হয়ে উঠেছে অনলাইন ক্লাসের নতুন জায়গা।

কোর্সেরা হলো নির্ধারিত ফির মাধ্যমে বিশ্বের নামিদামি শিক্ষকদের ক্লাসগুলো পাওয়া যায়। কিন্তু কোভিড-১৯ বা করোনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর এই সময়ে শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে ৪০০ বিষয়ে ৩ হাজার ৮০০টি কোর্স বিনা মূল্যে দিচ্ছে কোর্সেরা। ওই সুযোগটুকু নিচ্ছে বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বাছাই করা কোর্সগুলোর মান তুলনামূলক ভালো সেই ভিডিও ক্লাসের অনলাইনের মাধ্যমে পড়াচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও জুম ও মাইক্রোসফট টিম বিভিন্ন অফিসের টিমভিত্তিক কাজে ব্যবহার হলেও এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন। এসব পদ্ধতিতে শিক্ষকরা দিনের শিট নিয়ে আলোচনা করছেন। সেখানে কোনো অংশ বুঝতে সমস্যা হলে সরাসরি ভিডিও ক্লাসে থাকা শিক্ষার্থী লাইভ প্রশ্ন, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সময়ে কমেন্টের অপশনে আলোচনা করার সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিটি লেকচারের ওপর নেওয়া ক্লাসগুলো ভিডিও রেকর্ড করে আপলোপ করে দেওয়া হবে। ফলে ওই সময় কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলেও পরে ভিডিও টিউটোরিয়াল ও লেকচার দেখতে পারবেন। সেখানে তার কোনো সমস্যা থাকলে কমেন্টে জায়গায় লেখলে শিক্ষক সেটির উত্তর দেবেন। একই সঙ্গে পরের দিনের লেকচারগুলো ওয়েবসাইটে দিয়ে দেবেন। ওয়েবসাইট বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেকচার প্রকাশ করা হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিদিষ্ট কিছু লিংক থাকবে যেখানে ক্লিক করেই একজন শিক্ষার্থী তার প্রয়োজনীয় লেকচার ও ভিডিওগুলো পেয়ে যাবে। তার সুবিধামতো সময় এগুলো দেখে একজন শিক্ষার্থী লেকচারগুলো পড়তে পারবেন।

এ ব্যাপারে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা ধরেই বন্ধের আগেই অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। গত বুধবার থেকে অল্প পরিসরে অনলাইনে ক্লাস শুরু করলেও এ সপ্তাহ পুরোদমে পুরোদমে ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, গুগল, স্কাইপ, গ্রুপ ভিডিও কলসহ আরো কয়েকটি পদ্ধতিতে ক্লাস নেয়া হবে। এটা মূলত শিক্ষার্থীদের পছন্দ এবং কোন বিষয়ের ক্লাস তা দেখেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, গতকাল থেকে আমরা অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছি। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ক্লাস নেওয়া গেলেও যে বিষয়ে সঙ্গে যে পদ্ধতি যায় সেভাবে নেওয়া হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) ভিসি প্রফেসর ড. আবদুর রব বলেন, অনলাইনে ক্লাসগুলো পুরোদমে শুরু করতে আরো কিছুদিন লাগবে। তবে অনেক বিভাগ ক্লাস শুরু করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads