• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শিশুর খাবারে অনীহা এবং প্রতিকার

বাচ্চা না খাওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকে

সংগৃহীত ছবি

শিশু

শিশুর খাবারে অনীহা এবং প্রতিকার

  • ফারজানা আহমেদ, পুষ্টিবিদ
  • প্রকাশিত ২৬ জুলাই ২০১৮

শিশুর পুষ্টির সূচনা হয় মায়ের পেটে। গর্ভবতী অবস্থায় মায়ের মানসম্মত পুষ্টির খাবার ও যত্ন একজন স্বাভাবিক ও সুস্থ ওজনের শিশুর জন্ম দেয়। জন্মের পর শিশু মায়ের দুধ পান করে এবং ৬ মাস বয়স থেকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য শক্ত খাবার খায়। যেমন- ডিমের কুসুম, খিচুড়ি, সুজি, সাগু, ভাত, ডাল, রুটি, শাকসবজি, ফল ইত্যাদি। বুকের দুধের পাশাপাশি এই খাবারের নাম শিশুর পরিপূরক খাবার।

আলগা দুধ বা মায়ের দুধের সঙ্গে এই খাবার দেওয়ার সময় কিছুটা সাবধান থাকা উচিত। কেননা, এই খাদ্যাভ্যাস শিশুর পুষ্টির মান নির্ধারণ করে।

অনেক সময় মায়ের অভিযোগ থাকে বাচ্চা খায় না। বাচ্চা না খাওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকে। শিশু ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত প্রধানত ৩-৪টি কারণে খায় না।

অসুস্থতা : শিশু ঠাণ্ডা, জ্বর বা পেট খারাপ থাকলে অরুচি থেকে খাবার গ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে পারে। তবে তা ঠিক হয়ে যায়। যদি শিশুর পেটে বা অন্ত্রে কোনো জটিলতা থাকে, তবে ডাক্তার দেখাতে হবে।

ঘন ঘন খাবার খাওয়ান: ঘন ঘন খাবার দেওয়া বাংলাদেশি মায়েদের একটি মারাত্মক ভুল। শিশুকে শক্ত খাবার তিন ঘণ্টা পর পর দেওয়া উচিত। এর মাঝে অল্প বুকের দুধ দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় ঘন ঘন খাবার দেওয়ায় শিশুর বমি ও ডায়রিয়া হয়।

অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো: বুকের দুধ বা আলগা দুধ ৬ মাস বয়স থেকে আগের তুলনায় কমিয়ে আনতে হয়। তা না হলে শক্ত খাবার খাওয়ার জায়গা পেটে থাকে না। ছোট্ট শিশুর পেটও ছোট থাকে। এ বিষয়টি মাথায় থাকা উচিত।

নরম খাবার: শিশুকে নতুন খাবার নরম করে দিতে হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ও শক্ত খাবারে অভ্যস্ত করা ভালো। কেননা, শিশুর রুচি পরিবর্তন হয়। তা না হলে শিশু খাবারে অনীহা প্রকাশ করে।

এক থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের খাবার গ্রহণে বিভিন্ন সমস্যা থাকে। নিচে এর কারণগুলো তুলে ধরা হলো-

১। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খাবার গ্রহণ করা। রুটি খেয়ে কিছুক্ষণ পর আম, চকলেট খাওয়া। এতে ভাতের ক্ষুধা নষ্ট হয়।

২। এক বছরের পর থেকে শিশুর বর্ধন আগের চেয়ে কমে যায়। এজন্য খাবার চাহিদাও কমে যায়। বাচ্চারাও কম খেতে চায়।

৩। খাবারে এলার্জি থাকলে শিশু স্বাভাবিক খাবার খেতে চায় না। ৪-৮ শতাংশ শিশু খাবারে এলার্জির জন্য অনেক খাবার বা ফল খায় না। যেমন- শাক, ডিম, গরুর মাংস।

৪। খাবার নিয়ে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া শিশুর না খাওয়ার একটি প্রধান কারণ। অবশ্যই শিশুর পছন্দ এবং খাবারের সময় ব্যবধান মাথায় রেখে খেতে দিতে হবে।

৫। অনেক শিশুর অনেক খাবারের গন্ধ বা ধরনে সমস্যা থাকে। যেমন- অনেকে অতিরিক্ত নরম খাবার অপছন্দ করে। গন্ধের কারণে ফল ও শাকসবজি খেতে চায় না। একে texture sensitivity বলে।

৬। টিভি, খেলনা, খেলার সাথী, মোবাইল, খাবার সব কিছু একসঙ্গে চললে শিশুর খাবারের দিকে মনোযোগ থাকে না। তখন শিশু কম খায়।

৭। শিশু ক্লান্ত ও দুর্বল থাকলে খেতে চায় না। এজন্য ঘুম জড়ানো অবস্থা বা ক্লান্ত থাকলে শিশুকে খাবার দেওয়া ঠিক নয়।

৮। খাওয়া একটি গোছালো প্রক্রিয়া। ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ফল, শাকসবজি গুছিয়ে প্লেটে আলাদা করে সাজিয়ে বাচ্চাদের পরিবেশন করা উচিত। তবে একসঙ্গে নয়, বিভিন্ন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে।

৯। এক ধরনের খাবার না দিয়ে বৈচিত্র্যময় খাবার খাওয়ান।

১০। বাচ্চার পায়খানা ঠিকমতো হচ্ছে কি না তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পায়খানা ঠিকমতো না হলে গ্যাস হবে, অরুচি হবে।

শিশুর খাবার গ্রহণে আগ্রহ বাড়ানোর উপায়

শিশুকে বিভিন্ন খাবারে আগ্রহী করে তুলতে প্রয়োজন নানা ধরনের খাবার, নানা ধরনের রন্ধন পদ্ধতি। রুটি, ডিম, মাছ, মুরগি, শাকসবজি, ফল সব কিছু খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে। শিশু যখন প্রথম খাবার আরম্ভ করে তখন থেকেই অল্প অল্প করে শাকসবজি দেওয়া যেতে পারে। আলু, গাজর, পেঁপে, বিচি ছাড়া পটল, জালি, ঝিঙা বাচ্চারা খায়। এরপর এক বছর বয়সে শাক দিন। দেখুন হজম হয় কীভাবে। শাক ঠিকভাবে হজম হলে অন্য শাক খেতে দিন। ফলের মাঝে প্রথমে চটকান কলা, আপেল, লেবু বা মাল্টার রস, আনারের রস বেশ ভালো। আস্তে আস্তে দাঁতের সংখ্যা ও শক্ত দাঁতের ওপর অন্য ফল দেওয়া যেতে পারে। সেরিলাক বাচ্চার ক্ষুধা নষ্ট করে। সেরিলাকের বদলে ওটস, রুটি, সুজি, সাগু ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। প্রথম থেকেই মাছ-শাকসবজি খাওয়ালে শিশু এসব খাবারের সঙ্গে পরিচিত থাকে। পরবর্তীকালে এসব খাবার খেতে অনীহা প্রকাশ করে না। অনেক শিশু ডিম খেতে চায় না। সেক্ষেত্রে ডিমের স্যুপ বা পুডিং, ডিম রান্না করে খাওয়ানো যেতে পারে। দুধের বদলে পুডিং, ছানা, দই, মিষ্টি, সেমাই দেওয়া যেতে পারে। শিশুর বর্ধনে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য মাছ, মাংস, দুধ, ডিম বেশি থাকা দরকার। শাকসবজি অল্প থাকলেও সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতিদিন অল্প শাকসবজি খেতে হবে। মাঝে মাঝে শাকসবজি ভাজি করে বা খিচুড়ির ভেতরে দিয়ে খাওয়ান। চাইনিজ ভেজিটেবল রান্না করুন। এতে ডিম দিয়ে দিন। তাতে পুষ্টি ও স্বাদ দুটিই বাড়বে। মাংস চিকেন ফ্রাই বা কাবাব করে খাওয়ানো যেতে পারে। যেসব শিশু মাছ খেতে চায় না তাদের মাছের বড়া করে দিন। নুডলস করে খাওয়ালে তাতে ডিম, মাংস, চিংড়ি, সবজি দিন। শিশুর খাবারে testing salt দেওয়া নিষেধ। শিশু যেন আলগা লবণ না খায়। এতে স্বাদ নষ্ট হয়। শিশুর ঠাণ্ডা লাগলে চা দেওয়া যাবে না। গরম স্যুপ দেওয়া যেতে পারে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads