• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সুনিদ্রায় সাবলীল হয় শিশুর বেড়ে ওঠা   

সংগৃহীত ছবি

শিশু

সুনিদ্রায় সাবলীল হয় শিশুর বেড়ে ওঠা   

  • প্রকাশিত ২৫ অক্টোবর ২০১৮

সুনিদ্রা শিশুর সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি বিকাশে, ভাষা ও বাকশক্তি অর্জনেও। চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী, প্রয়োজনের চাইতে ঘুম কম হলে শিশু কিংবা বড় সবারই মনোযোগ কমে যায়, তথ্য গ্রহণ এবং প্রক্রিয়াকরণে সমস্যা হয়। আমাদের নিউরনগুলো (স্মায়ুকোষ) ক্লান্ত হয়ে যায়, ফলে আমরা অনেক কিছু মনে করতে পারি না। তাই মস্তিষ্ককে কার্যক্ষম রাখতে চাই ভালো ঘুম। অনিদ্রা থেকে জন্ম নিতে পারে বিষণ্নতা। তাই মেজাজ অকারণেই খারাপ হয়ে থাকে। শিশু সারাক্ষণ খিটখিট করতে থাকে, অদ্ভুত সব আচরণ করে। সবসময় ঘুমে আচ্ছন্নভাব, নিরতিশয় ক্লান্তি, ঘন ঘন হাই ওঠা, হতাশ ভাব, ক্রুদ্ধতা, মাথা ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, লেখাপড়ায় খারাপ করা, স্কুলে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়া-এসব উপসর্গ তৈরি হয় সুনিদ্রার অভাবে। ঘুমের ঘরে হাত-পা কামড়ানো, অস্বাভাবিক মাথা দোলানো, ঘুমের ঘোরে হাঁটা, ঘুমাতঙ্ক (রাতে ঘুমের সময় ভয় পায়)- এসব অনিদ্রার ছাপ ফুটে ওঠে উপসর্গে। অস্বাভাবিক ওজন বাড়া, এমনকি ‘নারকোলেপসি’ নামক ভয়ঙ্কর রোগও হয়ে যেতে পারে।

এতকিছু খারাপ কথা শুনে নিশ্চয়ই মন খারাপ হয়ে গেছে! ভয় নেই, সুনিদ্রার জন্য কিছু নিয়মনীতি মেনে শিশুর জন্য সুন্দর অভ্যাস তৈরি করে দিন। আপনাকে আর উদ্বিগ্ন হতে হবে না।

সুনিদ্রার ১০টি মূলনীতি

১. ঘুমানোর একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়ার রুটিন বজায় রাখুন। সময় নির্ধারণের সময় অবশ্যই মনে রাখবেন Early to early to rise. Makes a man healthy, wealthy and wise.

২. স্কুল থাক বা না থাক, ঘুমের এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় প্রতিদিন একই রাখুন। কোনোভাবেই এক ঘণ্টার বেশি পার্থক্য করা উচিত নয়। রাতে দেরিতে ঘুমানো, সপ্তাহ শেষে বন্ধের দিনে তা পুষিয়ে নেওয়া- এসব খারাপ অভ্যাস। এর ফল ভালো হয় না।

৩. ঘুমের আগে অন্তত এক ঘণ্টা বাচ্চাকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখুন। দৌড়ঝাঁপের মতো শক্তির খেলা এবং প্রণোদনামূলক কাজ যেমন টিভি দেখা, ভিডিও গেমস খেলা ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত রাখুন।

৪. ক্ষুধা পেটে বাচ্চাকে ঘুম পাড়াবেন না। ঘুমানোর ঠিক আগে হালকা খাবার, যেমন- হালকা গরম দুধ দিতে পারেন তবে ১-২ ঘণ্টার মধ্যে ভারী কোনো খাবার যেমন ভাত না খাওয়ানো ভালো।

 ৫. ঘুমানোর সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে কোনো চা, কফি বা অন্য কোনো উত্তেজক খাবার যেমন কার্বোনেটেট বেভারেজ, চকোলেট ইত্যাদি খাওয়াবেন না। সন্ধ্যা হওয়ার আগে থেকেই চা/কফি ধরনের সবকিছু পান করা বন্ধ করে দিন।

৬. বাচ্চাকে যতটা সম্ভব কিছু সময়ের জন্য বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান এবং শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন খেলা করান।

৭. ঘুমানোর ঘর নীরব এবং অন্ধকার থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে সামান্য আলো (ডিম লাইট) রাখা যেতে পারে। শিশুকে পিঠের ওপর শোয়ানো ভালো। শক্ত ম্যাট্রেস ও খুব নরম বিছানা ব্যবহার না করা ভালো। কমফোটারস এবং বাহারি ডিজাইনের বাণিজ্যিক বিছানা ব্যবহার নিষেধ। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুর নাক ও মুখ ঢাকা না থাকে এবং গলা সামনে পেছনে বেঁকে না থাকে।

৮. ঘরের তাপমাত্রা আরামদায়ক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা তার চেয়ে ১-২ ডিগ্রি বেশি রাখলে ভালো।

৯. ঘুমানোর ঘরকে সময় কাটানো বা শাস্তির ঘর হিসেবে ব্যবহার করবেন না। বরং শান্তিময় করে তৈরি করুন। এই ঘর সম্পর্কে শিশুর যেন কোনো ভীতি বা অস্বস্তি না থাকে।

১০. বাচ্চার ঘুমানোর ঘরে টিভি রাখবেন না। শোবার ঘর থেকে সব ধরনের মনোযোগ আকর্ষণের জিনিস সরিয়ে ফেলুন। এমনকি মোবাইল ফোনও বালিশের পাশে নয়, একটু দূরে রাখুন। এতে অন্তত নিজের এবং বাচ্চার ঘুমের জন্য সময় দিতে পারবেন। শুয়ে থেকেও মোবাইল ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করার অর্থ আপনার ঘুম পালাচ্ছে, সাথে আপনার বাচ্চারও। শিশুর সঙ্গে কথা বলুন। ঘুম পাড়ানি ছড়া বলুন, গান শোনান। তার দিকে মনোযোগ দিন। এখনকার দিনে মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার, ভিডিও গেমস ঘুম হরণের একটি প্রধান কারণ।

সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে সুনিদ্রার সম্পর্ক চিরন্তন। জীবন-যাপনের যে অভ্যাসগুলো আপনার শিশুর সাবলীল জীবন গড়ে দিতে পারে, সেগুলোর মধ্যে সুনিদ্রা অপরিহার্য। তাই এখনই সুনিদ্রা অভ্যাসের পদক্ষেপ নিন। 

ডা. অমৃত লাল হালদার

-শিশু বিশেষজ্ঞ বারডেম হাসপাতাল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads